E-Paper

প্রভাবের সীমা

খাতায়-কলমে এসএসকেএম, তথা রাজ্যের যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্বতন্ত্র, স্বশাসিত সংস্থা।

sskm hospital

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৬
Share
Save

হাসপাতালকে ব্যবহার করে ‘প্রভাবশালী’ অভিযুক্তেরা তদন্তকারীর প্রশ্ন এড়াচ্ছেন কি না, জানতে উদ্যোগী হল কলকাতা হাই কোর্ট। এসএসকেএম হাসপাতাল অধিকর্তাকে এ বিষয়ে বিশদ রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। রিপোর্টে কী লেখা হবে, তাতে হাই কোর্ট সন্তুষ্ট হবে কি না, তা যথাকালে জানা যাবে। কিন্তু এমন রিপোর্ট যে তলব করল আদালত, সেটাই কি শতাব্দী-প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভর্ৎসনা নয়? এতে হাসপাতালের আধিকারিক ও চিকিৎসকদের নৈতিকতা এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ পেল। সর্বোপরি, ন্যায় বিচারের কাজে বাধা সৃষ্টি করা অপরাধ। তাই প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, হাসপাতালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে তা হবে ‘মারাত্মক’। হাসপাতালে ভর্তি থাকার মেয়াদ নির্ধারিত হওয়ার কথা রোগের গুরুত্ব অনুসারে। কিন্তু মদন মিত্র থেকে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, বেশ কিছু ক্ষমতাবান এসএসকেএম-এ মাসের পর মাস ভর্তি থাকায় সন্দেহ জেগেছে, রোগীর পরিচয়ই কি রোগের গুরুত্বের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে? দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্তদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে কি এসএসকেএম হাসপাতাল? বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী, এমনকি হাই কোর্টের বিচারপতিও অভিযুক্তদের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। প্রশ্ন তুলেছে সংবাদমাধ্যমও।

খাতায়-কলমে এসএসকেএম, তথা রাজ্যের যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্বতন্ত্র, স্বশাসিত সংস্থা। সরকার তথা শাসক দল সেগুলির দৈনন্দিন কার্যপদ্ধতিতে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করতে পারে না, প্রভাব বিস্তার করার অধিকারও নেই। কার্যক্ষেত্রে শাসক দল রাজ্যের সব হাসপাতালে নিজেদের ‘শাসন’ কায়েম করেছে, কখনও শাসক-ঘনিষ্ঠ অধ্যক্ষ বা সুপার নিয়োগ করে, কখনও কোনও চিকিৎসক-নেতাকে হাসপাতাল প্রশাসনের উপর চাপিয়ে দিয়ে। তাঁরা চিকিৎসকদের বদলি বা পদাবনতির ভয় দেখাচ্ছেন। এর ফলে হাসপাতালগুলি বহু দিনই কার্যত স্বাতন্ত্র্য হারিয়েছে। নানা সঙ্কটের সময়ে, বিশেষত রাজনৈতিক কোনও গোলযোগের সময়ে চিকিৎসকদের নাচার দশা জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে পড়ে। তখন তা নিয়ে শোরগোল ওঠে।

বাম আমলেও দেখা গিয়েছিল, নন্দীগ্রামে ‘অপারেশন সূর্যোদয়’-এর সংঘর্ষে আহতদের দ্রুত বাড়ি পাঠানোর জন্য স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন কিছু শাসক-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক। তৃণমূল আমলে দেখা যাচ্ছে, ইডি বা সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিতে চাইলে নেতা-মন্ত্রীরা ভর্তি হচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে। তাঁদের ‘পছন্দের’ চিকিৎসকদের দিয়ে বোর্ড গঠন করে সুবিধাজনক রিপোর্ট বার করছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে। প্রশ্ন উঠবে, অতঃ কিম্? এসএসকেএম আধিকারিকের রিপোর্ট যদি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভর্তির দীর্ঘ মেয়াদের সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারে, তাতে হয়তো কিছু পদাধিকারী চিকিৎসক শাস্তি পাবেন। কিন্তু যাঁরা তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, সেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা চিহ্নিত হবেন, শাস্তি পাবেন, এমন সম্ভাবনা কম। কলঙ্কজনক এই অধ্যায় থেকে আবারও এই বার্তাই মিলল যে, রাজনৈতিক চাপ স্বীকার করা সরকারি কর্মীর কাছে ‘নিরাপদ’ নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSKM Hospital Calcutta High Court TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।