E-Paper

অবিশ্বাস

বারাণসীতে যখন এই উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, তখন দিল্লির মেহরৌলী অঞ্চলে ‘অবৈধ নির্মাণ’ বলে ছ’শো বছরের প্রাচীন মসজিদ ভাঙা হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপে।

Gyanvapi Mosque

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫২
Share
Save

আদালত তথা বিচারব্যবস্থার মর্যাদা ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্রে অবিসংবাদিত। কিন্তু, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তার কোনও রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার সংবিধানই নাগরিককে দিয়েছে। কোনও রায় সম্বন্ধে একমত না হতে পারলে, বা তাকে ন্যায্য বলে মনে না করলে আইনি পথেই অনুযোগ-অভিযোগ এমনকি চ্যালেঞ্জ করার প্রক্রিয়াও বর্তমান। জ্ঞানবাপী মসজিদ বিষয়ে বারাণসী জেলা আদালতের সাম্প্রতিকতম রায় নিয়ে তেমনই কিছু প্রশ্ন উঠছে। দেখা গেল, রায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাতে পূজার বন্দোবস্ত হল। অন্য দিকে, পর দিন মসজিদে নমাজ পড়তে এলেন সাধারণ সময়ের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি মানুষ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বারাণসীতে যখন এই উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, তখন দিল্লির মেহরৌলী অঞ্চলে ‘অবৈধ নির্মাণ’ বলে ছ’শো বছরের প্রাচীন মসজিদ ভাঙা হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপে।

আদালতের রায় ঘিরে দুই ধর্মের মানুষের বিরোধ-বিবাদ ভারতে নতুন নয়, এই ভারতে তো নয়ই। দুর্ভাগ্য যে, প্রশাসনের নৈতিকতা বোধে, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি দায়বদ্ধতায় দেশের মানুষের আস্থা তেমন প্রবল নয়। বাস্তবই সেই আস্থা পোষণের উপায় রাখেনি— প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা বা অতিসক্রিয়তা ও আইনের অপব্যবহার সংখ্যালঘুদের উদ্বিগ্ন করেছে, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষকে বিরক্ত করেছে। কিন্তু জ্ঞানবাপীকে কেন্দ্র করে যে প্রশ্ন উঠল, তা কেবল প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে না; আদালতের রায় বিষয়ে প্রকাশিত অসন্তোষে নিহিত কিছু অভিযোগও। যেমন, দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড-এর সংবাদ সম্মেলনে নেতারা যা বলেছেন তার সারমর্ম: এক দিকে বারাণসী আদালতের রায়, ইলাহাবাদ হাই কোর্টের তাতে স্থগিতাদেশ না দেওয়া, ১৯৯১-এর ধর্মস্থান আইন নিয়ে শীর্ষ আদালতের নীরবতা, এবং অন্য দিকে পূজা শুরুর ব্যবস্থাপনায় মসজিদ কর্তৃপক্ষের মতামত ইত্যাদির বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের অতিসক্রিয়তা— এই সব কিছুর নিরিখে বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট আশ্বস্ত নন।

প্রশাসন যখন বিমুখ, বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতাই তখন নাগরিকের ভরসা। তাতে সামান্য টোল পড়াও দুর্ভাগ্যের কারণ হবে। নব্বইয়ের দশক থেকে জ্ঞানবাপী মসজিদ-বিশ্বনাথ মন্দির বিতর্ক চলেছে বিভিন্ন আদালতের অধীনে, নানা সময় নানা রায় নিয়ে বাদী বা বিবাদী পক্ষে হতাশা আক্ষেপ সবই ফুটে উঠেছে। বিচারবিভাগের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকেও ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর একটি উক্তি স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে: শুধু ন্যায্য হওয়াই যথেষ্ট নয়, মানুষের চোখে ন্যায্য প্রতিভাত হতে হবে। দেশে ‘অমৃতকাল’ চলছে, ২০৪৭-এর মধ্যে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত রাষ্ট্র রূপে ভারতের যাত্রার লক্ষ্য স্থির করছেন প্রধানমন্ত্রী— এই বিরাট উচ্চাকাঙ্ক্ষার পাশে মন্দির-মসজিদ নিয়ে সমাজে বিপুল অপ্রীতির পরিবেশ বুঝিয়ে দেয়, নাগরিকের মন জয়ে, তার ধর্মীয় ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে অনেক পথ হাঁটা বাকি। আইন বা শাসন বিভাগের উপর সর্বশ্রেণির নাগরিক আস্থা পোষণ করতে পারবেন, সে উপায় বর্তমান শাসককুল রাখেননি। বিচারবিভাগের প্রতি নাগরিকের অবিমিশ্র ভরসায় যাতে কোনও সংশয়ের ছায়া না পড়ে, তা নিশ্চিত করা কর্তব্য।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gyanvapi Mosque Uttar Pradesh Court

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।