—প্রতীকী চিত্র।
কার্যত দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। তৃপ্তা ত্যাগী এখনও নিশ্চিন্তেই। অনুমান করা চলে যে, তিনি জানেন, একটি মুসলমান শিশুকে নিগ্রহ করার অপরাধে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে তাঁর শাস্তি হবে না। তবে, সেই রাজ্যের পুলিশ নিষ্ক্রিয় নয়— সাংবাদিক মহম্মদ জ়ুবেরের বিরুদ্ধে জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন) অ্যাক্ট ২০১৫-র ৭৪ ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। কারণ, মুজফ্ফরনগরের স্কুলের সেই মর্মান্তিক ভিডিয়োটি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন। তিনি একা নন, আরও অনেকেই শেয়ার করেছিলেন সেই অবিশ্বাস্য ভিডিয়োটি, তবে অন্য কারও নামে এফআইআর হয়নি। মহম্মদ জ়ুবেরের প্রতি এই ‘পক্ষপাত’ অবশ্য অপ্রত্যাশিত নয়। গত বছরই উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তাঁকে এমন হেনস্থা করেছিল যে, শেষ অবধি সুপ্রিম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল যে, তাঁর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়াটিই শাস্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে শিশুনিগ্রহে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কার্যত কোনও ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি প্রশাসন, সেখানে নিগৃহীত শিশুটির পরিচয় প্রকাশ করার অপরাধে জ়ুবেরের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি এফআইআর করা হল কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অনুমান করার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। সরকার জ়ুবেরকে হেনস্থা করার মাধ্যমে একটি দ্ব্যর্থহীন বার্তা দিতে চায়— সরকারি নিষ্ক্রিয়তা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বা অন্যায়কে প্রকাশ্যে আনার দুঃসাহস দেখালে তার ফল ভাল হবে না। গত বছর সর্বোচ্চ আদালত জ়ুবেরের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু, রাজরোষে পড়া প্রত্যেকেরই যে সেই সৌভাগ্য হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সরকার সেই ভয়টিকেই সদাজাগ্রত রাখতে চায়।
গোটা দেশে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা যত প্রকট হয়েছে, বিভিন্ন অন্যায় জনসমক্ষে আনার ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকের ভূমিকাও তত গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের স্কুলশিক্ষিকার কাণ্ডটি তার একটি উদাহরণ হলে অন্য ঘটনাটি মণিপুরের। ৪ মে তারিখে ঘটা ভয়াবহ ঘটনার কথা গোটা দেশের সম্মুখে এসেছিল সেই রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা ফের চালু হওয়ার পর। তার আগে অবধি পুলিশ-প্রশাসন সেই ঘটনাটিকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দিয়েছে, এমন কথা বলার কোনও উপায় নেই। অর্থাৎ, রাষ্ট্রযন্ত্র যেখানে স্বেচ্ছায় গাফিলতি করছে, নাগরিক সচেতনতা সেখানেই সেই অন্যায়কে প্রকট করে দিচ্ছে গোটা দেশ, এমনকি গোটা দুনিয়ার সামনে। উত্তরপ্রদেশের স্কুলে যে ঘটনাটি ঘটেছে, এক অর্থে সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা— সৌভাগ্যক্রমে এখনও দেশের শিক্ষকশ্রেণির মধ্যে এই বিকৃতি সহজলভ্য নয়— কিন্তু, অন্য দিকে, ঘটনাটি হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুবৃহৎ প্রকল্পের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিও বটে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকা সেই দর্শনে বিশ্বাসী, ফলে তিনি মানতে নারাজ যে, তাঁর আচরণের মধ্যে আদৌ কোনও অন্যায় ছিল। সাম্প্রতিক কালের ঘৃণা-অপরাধের ঘটনাগুলিকে একের পর এক সাজিয়ে দেখলে বোঝা সম্ভব, সেগুলি আদৌ বিচ্ছিন্ন নয়, সেগুলিকে গেঁথেছে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ের সূত্র। অর্থাৎ, মহম্মদ জ়ুবের-রা যখন কোনও অন্যায়ের দিকে অঙ্গুলি-নির্দেশ করছেন, তখন তাঁরা রাষ্ট্রের সেই প্রশ্রয়দাতা চরিত্রটিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছেন। গত এক দশকে ভারত শিখেছে, রাষ্ট্রনায়কদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তার ফল কী হয়। তবুও যাঁদের শিক্ষা হয়নি, যাঁরা প্রতিবাদের কু-অভ্যাসটি ত্যাগ করতে পারেননি, রাষ্ট্রযন্ত্র তাঁদের দিকে নজর রেখে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy