—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দুই পক্ষই শিক্ষক। এক পক্ষ পড়ান রাজ্য সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে, অপর পক্ষ নিজগৃহে বা ছাত্রগৃহে। স্কুলশিক্ষক ও গৃহশিক্ষক বলে তাঁদের জানে
সবাই, সম্মানও করে— শিক্ষকদের প্রতি বঙ্গসমাজের, সম্মান প্রদর্শনের সুদীর্ঘ পরম্পরা বিদ্যমান। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমে ধন্দ জাগতে পারে, সেই সম্মানের জায়গাটি শিক্ষকেরা ধরে রাখতে পারছেন কি না। পশ্চিমবঙ্গে গৃহশিক্ষকদের সংগঠন অনেক কাল ধরেই বহু স্কুলশিক্ষকের ‘প্রাইভেট টিউশন’ করা নিয়ে সরব, অভিযোগ করেছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও শিক্ষা দফতরের কাছে, সাম্প্রতিক কালে আদালতেও। গৃহশিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা হাই কোর্ট গত মে মাসে নির্দেশ দিয়েছিল, স্কুলশিক্ষকেরা কোনও ভাবেই গৃহশিক্ষকতা করতে পারবেন না। গৃহশিক্ষকতায় যুক্ত স্কুলশিক্ষকদের চিহ্নিত করে, আদালতের নির্দেশ শুনিয়ে কয়েকটি জেলার স্কুল পরিদর্শকেরা তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকাও আদায় করেছিলেন; তার পরেও স্কুলশিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন বন্ধ হয়নি। সে কারণেই সম্প্রতি গৃহশিক্ষকেরা অবস্থানে বসেছেন, আবারও মামলা করার কথা বলেছেন।
সব স্কুলশিক্ষকই যে প্রাইভেট টিউশন করেন তা নয়, তা বলে গৃহশিক্ষকদের অভিযোগও অসার নয়। পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় স্কুলশিক্ষকদের স্কুলের বাইরে ছাত্র পড়ানোর রমরমা এক বাস্তবচিত্র। প্রধান শিক্ষকদের আবেদন, স্কুল পরিদর্শক কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ, সর্বোপরি আদালতের নির্দেশের পরেও যে স্কুলশিক্ষকদের কোনও হেলদোল নেই তার কারণ— ছাত্র ও বিশেষত অভিভাবক-মহলের প্রচ্ছন্ন সমর্থন। স্কুলশিক্ষায় ইউনিট টেস্ট ও প্রজেক্ট ওয়ার্ক এখন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এর মূল্যায়নের সঙ্গে স্কুলশিক্ষকদের সরাসরি যোগ থাকায় অধিকাংশ অভিভাবকই মনে করেন, তাঁদের কাছে ছেলেমেয়েদের আলাদা করে পড়তে পাঠালে সুবিধা হবে, নম্বর পাওয়া যাবে বেশি। আবার বহু স্কুলশিক্ষক এই সুযোগের ‘সদ্ব্যবহার’ করেন ষোলো আনা, তাঁদের কাছে টিউশন পড়তে না এলে ছাত্রছাত্রীর বিপাকে পড়ার ঝুঁকি। স্কুলশিক্ষার আজকের ছবিটি বহুলাংশে এমনই। অন্য দিকে, তা গৃহশিক্ষকদেরও আয়-উপার্জনে কোপ বসাচ্ছে। সে কারণেই শিক্ষকদের দ্বিধাবিভাগ: এঁদের ধর্না ও মামলা, ওঁদের অস্বীকার।
এই কি শিক্ষকদের কাজ? সমাজেরও কাজ কি এই গৃহশিক্ষক-স্কুলশিক্ষক দ্বন্দ্বে, যুক্তি-প্রতিযুক্তি, সমর্থন-বিরোধে জড়িয়ে পড়া? ‘আমরা-ওরা’র আরও এক দ্বৈরথে যে আসল কাজটি— স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার কাজটিই আখেরে চূড়ান্ত ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষকেরা কি তা বুঝতে পারছেন না? প্রাইভেট টিউশন কারা করবেন, কারা করবেন না, প্রশ্ন সেটা নয়। আসল প্রশ্নটি গোড়ার: স্কুলের বাইরে যদি সব ছেলেমেয়েকে আলাদা করে সময় ও অর্থ দিয়ে পড়তে হয়, তার মানে স্কুলে পড়াশোনা হচ্ছে না কিছুই, শিক্ষকেরা পড়াচ্ছেন না। মিড-ডে মিল, ভোটের ‘ডিউটি’ থেকে শুরু করে শিক্ষকদের অন্য হাজারটা কাজ ও দায়িত্বের যুক্তিও এখানে কোনও ভাবেই খাটে না, তাঁদের প্রথম ও প্রধান কাজ হল স্কুলে ভাল করে পড়ানো— আর সবই পরের কাজ। গোড়ার এই কাজটি হচ্ছে না বলেই প্রাইভেট টিউশনের প্রয়োজন পড়ছে, তাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে শোষণ ও যুদ্ধের আবহ। সম্মান পরের কথা, বঙ্গীয় শিক্ষককুল এখন আসল দায়িত্বটি নিয়ে ভাবুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy