Advertisement
E-Paper

শিক্ষার অপমান

বিশ্ববিদ্যালয় তথা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক কর্তৃত্বে থাকিলেও তত্ত্বগত ভাবে তাহারা স্বায়ত্তশাসিত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১৮
Share
Save

কানের ভিতর দিয়া মরমে পশে নাই বলিয়াই হয়তো এখনও কথা উঠে নাই। ‘অনলাইন বা ভার্চুয়াল সম্মেলন, সেমিনার ইত্যাদির সংশোধিত নির্দেশাবলি’ গোছের আপাত-সরল শিরোনাম বলিয়াও হইতে পারে। কিন্তু, জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশিত নথিটি কী ও কেন, বুঝিবার চেষ্টা করিলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সহিত জড়িত সকলেরই আতঙ্কিত হইবার কথা। তাহাতে লেখা: দেশ বা রাজ্যের নিরাপত্তা, সীমান্ত, উত্তর-পূর্ব ভারত, জম্মু ও কাশ্মীর বা লাদাখ লইয়া অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা সেমিনার করিতে গেলে, সকল কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও উহাদের অধীনস্থ কলেজকে আগে বিদেশ মন্ত্রকের অনুমতি লইতে হইবে। শুধু তাহাই নহে, রাজনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বাণিজ্য, এমনকি ব্যক্তিগত স্তরেও ‘স্পর্শকাতর’ ও ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে কোনও তথ্য বিনিময়ের পূর্বেও অনুমতি লইতে হইবে। উপযুক্ত প্রশাসনিক সচিবের নিকট হইতে সম্মতি লইতে হইবে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা বিষয়েও। ইহাতেই শেষ নহে। অনুষ্ঠানের পরে তাহার লিঙ্ক পাঠাইতে হইবে বিদেশ মন্ত্রককে।

অবিশ্বাস্য মনে হইলেও, ইহাই বর্তমান ভারত। বাক্‌স্বাধীনতা, সংবাদের স্বাধীনতা, কৃষি ও শ্রম অধিকার-সহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ছিলই। শিক্ষার পরিসরও অস্পৃষ্ট ছিল না, নূতন শিক্ষানীতি লইয়া তর্ক চলিতেছে, উপরন্তু যোগ হইল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়-সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে জ্ঞানচর্চা ও প্রসারের অন্যতম মাধ্যম সম্মেলন ও সেমিনার, কোভিড-আবহে যাহা নিয়মিত ‘ওয়েবিনার’-এ পরিণত। ইহাতে সুবিধা, নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের শিক্ষা-ব্যক্তিত্বের মূল্যবান ভাবনা শুনা যায়। সেই আন্তর্জালিক অনুষ্ঠান, এমনকি কোন বক্তা সেখানে বলিবেন তাহাও বিদেশ মন্ত্রকের অনুমতিসাপেক্ষ করিয়া তুলিলে বুঝিতে হয়, পুলিশ যেমন অপরাধীর তল্লাশি চালায়, সরকার সেইরূপ ভাবনায় নজরদারি চালাইতেছে। স্পষ্টই বলিয়া দিতেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাল-অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের পক্ষে অস্বস্তিকর আলোচনা চলিবে না। এমনকি কে বলিবেন না বলিবেন, তাহাও সরকারের সিদ্ধান্তনির্ভর। শিক্ষাক্ষেত্রে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধী বা সমালোচক হইলে নাম কাটা যাইতেই পারে। নির্দেশাবলিতে ‘স্পর্শকাতর’, ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’-এর ন্যায় শব্দবন্ধেই কৃষক বিদ্রোহ, পরিযায়ী শ্রমিক, নারী, জনজাতি ও শরণার্থী অধিকার হইতে ভারত-চিন সীমান্ত সংঘাত, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ— অনালোচিত রাখিবার ‘আদেশ’ প্রচ্ছন্ন।

বিশ্ববিদ্যালয় তথা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক কর্তৃত্বে থাকিলেও তত্ত্বগত ভাবে তাহারা স্বায়ত্তশাসিত। তাহারা কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠী, দল বা রাষ্ট্রের অধীন নহে; মুক্ত বুদ্ধি ও জ্ঞানের চর্চায়, বহুবিধ মত ও পথের সন্ধানে তাহাদের বিস্তার। সেই জন্যই তাহাদের সর্বাধিক স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক স্তরের শ্রেষ্ঠ চিন্তকদের সহিত মত-বিনিময় জরুরি। সেই স্বাধীনতা হরণ করিয়া, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এক প্রশাসনিক আধিকারিকের অনুমতি-অধীন করিয়া তোলা সমগ্র শিক্ষাসমাজেরই অপমান। গণতন্ত্রেরও তাহা ভূলুণ্ঠন।

Education Foreign Ministry

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।