Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Electoral Bonds

স্বচ্ছতা অভিযান

প্রবীণতর নাগরিক সেই বিচারে সন্তুষ্ট হবেন কি? তিনি সম্ভবত প্রশ্ন তুলবেন: স্টেট ব্যাঙ্কের চালকরা সময় চেয়েছিলেন, না সময় চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন?

SBI

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ ০৪:৩৬
Share: Save:

পরিবারে হোক, স্কুল-কলেজে হোক বা অফিস-কাছারিতেই হোক, উপরমহলের একটি ধমকে কাজের গতি যে কচ্ছপ থেকে খরগোশের স্তরে পৌঁছে যেতে পারে, তার অগণন নিদর্শন বিশ্বসংসারে প্রতিনিয়ত রচিত হয়ে চলেছে। সরকারি দফতরে ফাইল নড়ানোর জন্য দরবার করতে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে যে অসহায় নাগরিককে দীর্ঘ কাল যাবৎ শুনতে হয়েছে ‘সামনের সপ্তাহে আসুন’, তিনি যথাস্থানে নালিশ জানাতে পারলে পরের দিনই ফাইলের পাষাণ-উদ্ধার ঘটে যায়। নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্যপরিসংখ্যান সরবরাহের ব্যাপারে স্টেট ব্যাঙ্কের আচরণও আপাতদৃষ্টিতে সেই ধারার অনুসারী। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে নির্বাচন কমিশনের কাছে যে তথ্য দাখিল করার জন্য ভারতের বৃহত্তম ব্যাঙ্কটি জুন মাসের শেষ অবধি সময় চেয়েছিল, সোমবার আদালত সেই আবেদন পত্রপাঠ নাকচ করে এবং কালবিলম্ব না করে মঙ্গলবারের মধ্যেই সব তথ্য জমা দিতে বলে। অতঃপর— পশ্য, পশ্য— মঙ্গলবার সূর্য পাটে বসার আগেই স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তব্য সম্পাদন করেছে। ‘সাড়ে তিন মাসের কাজ’ ত্রিশ ঘণ্টায় কী করে সেরে ফেলা গেল, সেই প্রশ্ন তুললে প্রবীণ নাগরিক নিশ্চয়ই স্মরণ করিয়ে দেবেন পরিচিত বাগ্‌ধারা: শক্তের ভক্ত, নরমের যম।

প্রবীণতর নাগরিক সেই বিচারে সন্তুষ্ট হবেন কি? তিনি সম্ভবত প্রশ্ন তুলবেন: স্টেট ব্যাঙ্কের চালকরা সময় চেয়েছিলেন, না সময় চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন? রাষ্ট্রযন্ত্রের মহাযন্ত্রীরা তাঁদের বাধ্য করেছিলেন? নির্বাচনী বন্ডের ভিতরের খবর বাইরে আনলে ভোটের আগে শাসকদের সমস্যায় পড়তে হবে, এমন সম্ভাবনা অতিমাত্রায় প্রবল; সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ড বাতিল করে তথ্য প্রকাশের রায় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই সমস্যার কথা বোঝা গিয়েছিল। বন্ড মারফত দলীয় তহবিলে ‘চাঁদা’ দেওয়ার সঙ্গে শাসক শিবিরের কর্পোরেট-সংযোগের— এবং সাঙাততন্ত্রের— সম্পর্ক ফাঁস হয়ে গেলে নির্বাচনী প্রচারের মরসুমে কেবল বিড়ম্বনা নয়, রাজনৈতিক লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে, এই আশঙ্কাতেই কি সেই শিবিরের অধিপতিরা রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ব্যাঙ্কটিকে বার্তা দিয়েছিলেন: ‘ধীরে চলো’? তা না হলে, যত বড় কাজই হোক না কেন, দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্কটি তার বিপুল কর্মিবাহিনী এবং প্রমাণিত সামর্থ্য নিয়ে সেই ‘যান্ত্রিক’ কাজটি দ্রুত সেরে ফেলতে পারবে না, এমন কথা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? একই কারণে, স্টেট ব্যাঙ্ক নিজের কাজ সারার পরেও সংশয় থেকে যায়— নির্বাচন কমিশন তার কাজটি যথেষ্ট তৎপরতা এবং দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করে নির্বাচনী বন্ডের নিহিত সত্য জনসমক্ষে কত দূর উদ্ঘাটন করবে? নির্বাচন কমিশনের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের দখলদারির সাম্প্রতিক উদ্যোগ এই সংশয় বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

মূল সমস্যা দখলদারি নিয়েই। বর্তমান শাসকরা দশ বছরের জমানায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির উপর আধিপত্য বিস্তারের যে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন, বিচারবিভাগ তথা সুপ্রিম কোর্টের বিচার-বিবেচনা অন্তত কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাকে প্রতিহত করেছে। কিন্তু শুধু এইটুকু ভরসা নিয়ে গণতন্ত্রের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিরাপদ হতে পারে না। বস্তুত, গণতন্ত্রের কাঠামোটিকে ব্যবহার করেই কী ভাবে তাকে দুর্বল ও বিকৃত করে তোলা যায়, তার বহু দৃষ্টান্ত ক্রমাগত তৈরি হয়ে চলেছে। অস্বচ্ছ এবং অন্যায় নির্বাচনী বন্ডের আয়োজনটি তার অন্যতম। আদালতের রায়ে সেই আয়োজন ধাক্কা খেয়েছে, কিন্তু ঘুরপথে সেই অস্বচ্ছতাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হবে না, এমন কথা মনে করার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। এখানেই নাগরিক সমাজ এবং স্বাধীন ও স্বাধীনচেতা নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠানগুলির বিশেষ ভূমিকা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, নির্বাচনী বন্ডের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরে তার মর্মার্থ বিশ্লেষণ করে অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক সত্য উন্মোচনের কাজটি তাঁদেরই দায়। প্রকৃতপ্রস্তাবে, সেই দায় গণতন্ত্রকে রক্ষা করার।

অন্য বিষয়গুলি:

Electoral Bonds SBI Supreme Court of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy