ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুরে প্রিয়জনকে অর্থ পাঠানোর পথটি আরও সহজতর হয়ে যাবে ভারতীয়দের কাছে। প্রতীকী ছবি।
টাকাপয়সা মানে এখন আর শুধু কাগজের নোট বা ধাতব মুদ্রা নয়। ভারতের সাধারণ মানুষও ক্রমে ফোন থেকে লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করল ভারত। এত দিন ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস বা ইউপিআই লেনদেন সীমাবদ্ধ ছিল দেশের ভৌগোলিক গণ্ডিতে। এ বার ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে রিয়েল টাইম পেমেন্টস সিস্টেম বা তৎক্ষণাৎ টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়ার সূচনা হল। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুরে প্রিয়জনকে অর্থ পাঠানোর পথটি আরও সহজতর হয়ে যাবে ভারতীয়দের কাছে। ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট ইউপিআই আইডি, মোবাইল নম্বর বা ভার্চুয়াল পেমেন্ট অ্যাড্রেস-এর মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারবেন। এই প্রথম অন্য কোনও দেশের সঙ্গে ইউপিআই লেনদেন শুরু হল। তবে লেনদেনের প্রক্রিয়াটি প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি ব্যাঙ্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। গুগল পে, ফোন পে বা পেটিএম-এর মতো থার্ড পার্টি অ্যাপ প্রোভাইডারদের (টিপিএপি)-ও বর্তমানে এই আন্তর্জাতিক লেনদেনের আওতায় রাখা হয়নি। কিন্তু লেনদেনের সংখ্যা এবং অর্থমূল্যের প্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারে এই তিনটি টিপিএপি যতখানি বাজার অধিকার করে রয়েছে, তাতে আগামী দিনে এদেরও এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রবল সম্ভাবনা।
এমনিতেই ইউপিআই, ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনসিপিআই)-র তৎক্ষণাৎ টাকা পাঠানোর ব্যবস্থাটি দেশের ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন বছরের রিপোর্টেও অর্থমূল্য এবং লেনদেনের সংখ্যার মাপকাঠিতে দেশে ব্যক্তিগত ডিজিটাল লেনদেনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির চিত্রটি ধরা পড়ে। অতিমারিকালে স্বাস্থ্যের কারণেই স্পর্শহীন লেনদেনের উপর নির্ভরতা বহু গুণ বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। এক সমীক্ষায় জানা যায়, লকডাউনের সময় বহু পরিবার প্রথম বারের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন করেছিল। তা ছাড়া তৎক্ষণাৎ টাকা পাঠানো, লেনদেনের ট্র্যানজ়্যাকশন কস্ট অন্তিম উপভোক্তা বা পণ্য বিক্রয়কারী সংস্থার বহন না করার মতো সুবিধাগুলি মানুষের মধ্যে এই মাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। উল্লেখ্য, এই বছর জানুয়ারিতে ইউপিআই-এর মাধ্যমে প্রায় ৮০০ কোটি লেনদেন সম্পন্ন হয়, যার মূল্য প্রায় তেরো লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। তুলনায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে, ঠিক অতিমারির আগে, এই মাধ্যমে প্রায় ১৩০ কোটি লেনদেন হয়, যার মূল্য ছিল আনুমানিক ২.১ লক্ষ কোটি টাকা।
বর্তমান গাঁটছড়াটি সীমানা পারের আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়াকে সাহায্যেরই এক প্রয়াস, যার অন্যতম উদ্দেশ্য হল এই ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে ‘এক্সটার্নাল সেটলমেন্ট কারেন্সি’ বা আন্তর্জাতিক লেনদেন করার জন্য ব্যবহৃত মুদ্রা (মূলত আমেরিকান ডলার)-র উপর নির্ভরতা হ্রাস। তবে ভারতের আন্তর্জাতিক ডিজিটাল লেনদেনের প্রক্রিয়াটি আরও বেশি পরীক্ষিত হবে, যদি সে আরব উপসাগরীয় দেশগুলি কিংবা আমেরিকা বা কানাডার সঙ্গে এমন গাঁটছড়া বাঁধতে পারে। কারণ, ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্স বা বিদেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রটির সিংহভাগ রয়েছে এই সব দেশের দখলে। এমন হলে যাঁরা এত দিন বেশি মূল্য দিয়ে তুলনামূলক ধীর গতির অনলাইন আর্থিক লেনদেনের উপরে নির্ভর করে এসেছেন, তাঁদের কাছে এই প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। পাশাপাশি এই ক্ষেত্রে জালিয়াতির বিষয়টিও উপেক্ষা করলে চলবে না। যদিও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, দুষ্কৃতীদের কুবুদ্ধির চেয়েও গ্রাহকদের অজ্ঞতার ভূমিকাই জালিয়াতির ক্ষেত্রে বেশি। তবে নিঃসন্দেহে পরিষেবাটির সার্বিক ভাবে উন্নতি দেশের বাণিজ্য, পর্যটন এবং বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াকে আরও প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। অতএব, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে এই গাঁটছড়াকে নতুন যুগের সূচনা বলাই বিধেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy