উচ্চ তাপ শ্রমিকদের অনুপস্থিতি, এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। প্রতীকী ছবি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তীব্র তাপপ্রবাহ যে জীবিকার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, সে সতর্কতা মিলেছিল অনেক আগেই। ভারতের প্রায় ৭৫ শতাংশ শ্রমশক্তি কাজ করে এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে সূর্যালোক ও উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব এড়ানোর উপায় নেই। আগামী পাঁচ-ছ’বছরে অন্তত সাড়ে তিন কোটি কাজ হারাতে পারে ভারত। ১৯৯০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, ভারত বছরে গড়ে তেইশটি তাপপ্রবাহ দেখেছে, যা আগের ২০ বছরের তাপপ্রবাহের বার্ষিক গড়ের দ্বিগুণ। কেবল ২০২২ সালেই ২০২১-এর তুলনায় দ্বিগুণ বেশি তাপপ্রবাহ-সঙ্কুল দিন দেখেছে ভারত৷ ২০২৩ সালের সূচনাও আশঙ্কাজনক। তাপজনিত মৃত্যুহার বাড়ছে৷ অথচ, তাপ এড়ানোর উপায় নেই শ্রমিকের। দেশের অধিকাংশ নির্মাণ কাজ হয় শহরগুলিতে, যেখানে কংক্রিটের আধিক্য। তাপশোষণকারী কংক্রিট আশেপাশে এলাকার উত্তাপ বাড়ায়। শহরে আবদ্ধ গরম হাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বস্তিবাসীরা। এঁদের একটি বড় অংশ গ্রাম থেকে, এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত শ্রমজীবী মানুষ। বস্তির আবাসন প্রায়ই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয় যা পর্যাপ্ত তাপ নিরোধক নয়, বস্তির গঠনও বায়ুচলাচলের সহায়ক নয়। বহু শ্রমিক তাঁদের কর্মস্থলে, যেমন নির্মীয়মাণ ইমারতে, কিংবা রাস্তার ধারে প্লাস্টিক বা ত্রিপলের তাঁবুতে বাস করেন, যা তাঁদের জীবনীশক্তি ও কর্মশক্তির ক্ষয় করে।
উচ্চ তাপ শ্রমিকদের অনুপস্থিতি, এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। তার ফলে উৎপাদন হ্রাসের পরিমাণও কম নয়। এর প্রভাব পড়বে ভারতের জিডিপি-র উপরে— কোনও কোনও সমীক্ষা ২০৩০ সালের মধ্যে তিন শতাংশ হ্রাসের সম্ভাবনা দেখছে, কোনওটা ২০৩৫ সালের মধ্যে জিডিপি-র আড়াই শতাংশ হারানোর আশঙ্কা করছে। বিপন্নতা বাড়ছে দিনমজুরদেরও। এখনই গ্রীষ্মের গোড়ায় গরম এত তীব্র যে, একাধিক মহানগরে পূর্ণ কর্মদিবস কাজ হয় না। নানা ধরনের উৎপাদন, বিপণন, বিভিন্ন পরিষেবা, নির্মাণ কাজ, এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিবিধ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে নিয়োগকারী সংস্থাগুলি। ফলে শ্রমিকদের প্রায়ই সম্পূর্ণ মজুরি মিলছে না। পরিবেশের সুরক্ষায় উদ্যোগী হবে বিভিন্ন দেশের সরকার, এমন আশা ক্রমশই কমে আসছে। ফলে বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে মানিয়ে কী করে শ্রমিকের জীবন-জীবিকা সুরক্ষিত রাখা যায়, তার উপায় খুঁজতে হচ্ছে সরকার এবং শিল্প, উভয় ক্ষেত্রকেই।
তাপপ্রবাহের জন্য বিনষ্ট কর্মদিবসের ক্ষতি পূরণ করতে বহু দেশ সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের পথ নিয়েছে। যেমন, কোন তাপমাত্রার উপরে উন্মুক্ত পরিবেশে কাজ বিপজ্জনক, তা ঘোষণা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার আগাম সতর্কীকরণ, এবং সেই সব দিনে কর্মহীনতার জন্য শ্রমিকদের বিমা, বেকার ভাতা প্রভৃতি দেওয়ার নীতি নিয়েছে তৃতীয় বিশ্ব এবং ইউরোপের নানা দেশ। প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগে কর্মস্থলগুলিকে তাপ-নিরোধক করে তোলাও প্রয়োজন। সমস্যা এই যে, গত কয়েক বছরে শ্রম-সংক্রান্ত সরকারি বিধিগুলি ক্রমশ শিথিল হয়েছে। অস্থায়ী কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, এ সব ব্যবস্থাই ভারতের নতুন শ্রমবিধি আরও শিথিল করেছে। এই পরিস্থিতিতে তাপপ্রবাহ-জনিত কর্মদিবস হ্রাস ও মজুরির ক্ষতি পূরণ করার কোন পথ নেবে সরকার, সে প্রশ্নটি অতিকায় হয়ে উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy