Advertisement
E-Paper

সত্যের শক্তি

দিল্লির আদালতের রায় কেবল প্রিয়া রামানিকে মর্যাদাই দেয় নাই, ভারতে ‘মি টু’ আন্দোলনের সারবত্তাও প্রতিষ্ঠা করিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৯
Share
Save

কেহ প্রভাবশালী হইলেও যে যৌন হয়রানি করিয়া থাকিতে পারে, এম জে আকবর বনাম প্রিয়া রামানি মামলার রায় ঘোষণার কালে দিল্লির আদালতের এই পর্যবেক্ষণটি অতিশয় তাৎপর্যপূর্ণ। আকবর মোদী সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তৎপূর্বে সংবাদপত্র সম্পাদক। আইনের হাত যতই দীর্ঘ হউক, তাঁহার মতো ক্ষমতাবানদের স্পর্শ করিতে পারে না— এই ধারণা সমাজে শিকড় গাড়িয়াছে। ‘মি টু’ ঢেউ ভারতে আছড়াইয়া না পড়িলে হয়তো তাহা নড়িত না। এই আন্দোলনে শামিল মেয়েরা সমাজমাধ্যমে তাঁহাদের নিগ্রহকারীর পরিচয় ও কীর্তি প্রকাশ করিয়াছেন। অনেকের অভিজ্ঞতা সম্মুখে আসিতে স্পষ্ট হইয়াছে, একই প্রকারে, এমনকি কখনও একই ব্যক্তি, বহু মহিলাকে হেনস্থা করিয়াছেন। কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলিউডের প্রযোজক হার্ভি ওয়েনস্টাইনের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র জগতের আশি জন মহিলা নিগ্রহের অভিযোগ করেন। আকবরের ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটিয়াছে। ২০১৮ সালে প্রিয়া রামানি যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রকাশ করিতে মানহানির মামলা করিয়াছিলেন আকবর। প্রিয়াকে সমর্থন করিয়া নিজেদের নিগ্রহের ঘটনা প্রকাশ করেন আরও অনেক মহিলা সাংবাদিক। অনুমান করা চলে, প্রতিপত্তির জোরে নিজেকে যাবতীয় আইনের ঊর্ধ্বে ভাবিবার ধৃষ্টতাই কোনও কোনও ব্যক্তিকে বারংবার অন্যায় করিয়া চলিবার সাহস জোগায়।

দিল্লির আদালতের রায় কেবল প্রিয়া রামানিকে মর্যাদাই দেয় নাই, ভারতে ‘মি টু’ আন্দোলনের সারবত্তাও প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়া, সরাসরি তাহাকে ‘অপরাধী’ বলিয়া চিহ্নিত করা আইনসঙ্গত নহে। তাহা অন্যায়ও মনে হইতে পারে। কিন্তু ন্যায় বিচার পাইবার পদ্ধতিগুলি কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির প্রতিকারে প্রায়ই কার্যকর নহে। সেগুলিকে নিষ্ক্রিয় করিয়া রাখা হইয়াছে। এই অপরাধ প্রতিরোধে আইন হইয়াছে ২০১৩ সালে। কিন্তু আইন থাকিলেও অধিকাংশ নিয়োগকর্তা তাহা পালন করেন না, অথবা আইনরক্ষার অভিনয় করেন শুধু। নানা সমীক্ষায় ধরা পড়িয়াছে, অভিযোগ করিলে মেয়েদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজ ছাড়িতে হইয়াছে, অথবা তাঁহাকে বদলি করা হইয়াছে। অভিযুক্তের শাস্তি হয় নাই, হইলেও তাহা যৎসামান্য। পুরুষতন্ত্রের ভূত প্রবল পরাক্রমশালী।

#মিটু সেই অ-বিচারের প্রতিবাদ। তাহাকে মান্যতা দিল দিল্লির আদালত। বলিল, যে কোনও মঞ্চে অভিযোগ জানাইতে পারেন মেয়েরা। চাহিলে, বহু বিলম্বেও নিগ্রহের কথা প্রকাশ করিতে পারেন। অভিযুক্তের সম্মানরক্ষা করিতে গিয়া মেয়েদের মর্যাদা খর্ব করা চলিবে না। আদালত সংবিধানদত্ত অধিকার মনে করাইয়াছে। কিন্তু বাক্যে অথবা আচরণে মেয়েদের অসম্মান যে অপরাধ, সমাজ সেই সত্যটি আজও অন্তর হইতে গ্রহণ করে নাই। ‘মি টু’ আন্দোলন সম্মানজনক, সুরক্ষিত কর্মক্ষেত্র পাইবার আন্দোলন। গৃহে অথবা বাহিরে, যাহাই হউক মেয়েদের কর্মস্থল, সেখানে তাঁহাদের সঙ্কুচিত, ভীত না থাকিতে হয়— কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধক আইন তাহাই প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। তাহার ব্যবহারে মেয়েদের সাহসী হইতে হইবে। আন্দোলনের শরিক মেয়েরা এই আশ্বাস জুগাইলেন যে, নির্ভয়ে সত্যকথনের ক্ষমতা অতি বলশালীকেও নতজানু করিতে পারে।

sexual harassment Crime against Women me too movement

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।