Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Mob Lynching

স্পর্ধা

কখনও ফিল্ম স্কুলে, কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে; ছাত্র শিক্ষক বিজ্ঞানী সমাজকর্মী সাংবাদিক শিল্পী চলচ্চিত্রকারের বিরুদ্ধে চড়াও হচ্ছে গেরুয়া শিবির।

An image of BJP Flags

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৩
Share: Save:

এক রামভক্ত রাতদিন হনুমানের চিন্তা করত, মনে করত, আমি হনুমান হয়েছি। শেষে তার ধ্রুব বিশ্বাস হল, তার ‘একটু ল্যাজও হয়েছে!’ উনিশ শতকের দক্ষিণেশ্বরে বসে যে মানুষটি এ ‘গল্প’ বলেছিলেন, একুশ শতকের ভারতে এলে তিনি দেখতে পেতেন সেই রামভক্তদের, লাঙ্গুলবৃদ্ধির অপেক্ষা না করেই যারা লঙ্কাদহনে তৎপর। পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এফটিআইআই) ক্যাম্পাস গত ২২ জানুয়ারির আগে-পরে দেখতে পেল এদের তাণ্ডব: গোড়ায় সদরদরজার বাইরে আস্ফালন, পরে ভিতরে ঢুকে এসে ব্যাপক ভাঙচুর, ছাত্রদের আক্রমণ ও মারধর। কী ছিল তাদের প্ররোচনা? রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিন সন্ধ্যায় ফিল্ম-পড়ুয়ারা তিন দশক আগে তৈরি বহু-আলোচিত তথ্যচিত্র রাম কে নাম-এর প্রদর্শন করেছিলেন, সঙ্গে রামমন্দির ঘিরে সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীও, আর ক্যাম্পাসে টাঙানো হয়েছিল ‘রিমেম্বার বাবরি: ডেথ অব কনস্টিটিউশন’ লেখা ব্যানার। তাতেই, ‘উল্টা বুঝিলি রাম’ এবং হিংসার যথেচ্ছাচার।

এই ঘটনা, এবং এমনই অগণিত আরও যে আজকের ভারতে প্রায় নিয়ম করে ঘটে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না, সংবাদ ও সমাজমাধ্যমই প্রমাণ। কখনও ফিল্ম স্কুলে, কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে; ছাত্র শিক্ষক বিজ্ঞানী সমাজকর্মী সাংবাদিক শিল্পী চলচ্চিত্রকারের বিরুদ্ধে চড়াও হচ্ছে গেরুয়া শিবির। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা কোন অনুষ্ঠান করবেন তা একান্তই তাঁদের ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ব্যাপার, সাংবাদিক কী লিখবেন বা চলচ্চিত্রকার তাঁর ছবিতে কী দেখাবেন তাতে একমাত্র তাঁদেরই এক্তিয়ার— এই সারসত্য এদের কাছে অসার, মত পথ ও যুক্তির বহুত্ব ও ভিন্নতা এদের কাছে নিরর্থক। সর্বোপরি এদের সঙ্গে আছে ক্ষমতার রাজনীতির প্রকাশ্য ও প্রকট সমর্থন। তার জোরেই এরা যে কোনও জায়গায় প্রায় বিনা বাধায় ঢুকে পড়ে, যদৃচ্ছ হামলা চালায় এবং কিমাশ্চর্যম্‌, পরে আইনের কাঠগড়ায় তোলে আক্রান্তকেই। এফটিআইআই-এর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। যে ছাত্রেরা হামলায় গুরুতর জখম হলেন, তাঁদেরই বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর হয়েছে ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত করার অভিযোগে। অর্থাৎ আক্রমণকারী নয়, আক্রান্তই এখানে অভিযুক্ত, অপরাধী!

আক্রান্তকেই আইনের প্যাঁচে ফেলার এই কৌশল সফল হত না, যদি প্রশাসন ও পুলিশ সময়মতো উপযুক্ত পদক্ষেপ করত। এফটিটিআই-এর ঘটনায় যেটুকু সাড়া পড়েছে তা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীদের সম্মিলিত নিন্দার প্রকাশে। একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে বহিরাগত দুর্বৃত্তের দল ঢুকল, নিরাপত্তারক্ষীদের ডিঙিয়ে ছাত্রদের চরম আঘাত করে বুক ফুলিয়ে বেরিয়েও গেল, কিন্তু প্রশাসনের তরফে দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমাপ্রার্থনা দূরস্থান, কোনও বিবৃতিও পাওয়া গেল না। স্থানীয় থানার পুলিশ নাকি ‘সন্দেহভাজন’ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে, এমনও শোনা গিয়েছে যে প্রথমে আটকে রেখে পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ যে ছাত্রেরা প্রচণ্ড প্রহৃত হলেন, তাঁদেরই বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে পুলিশ বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। পুণের ঘটনাটিই প্রথম নয়, আলোচ্য তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন ঘিরে গেরুয়া শিবির হামলা চালিয়েছে দিল্লি হায়দরাবাদ কেরলেও, প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে। কাদের নিষ্ক্রিয়তার মূল্যে এই স্পর্ধিত ঔদ্ধত্য, অনুমান কঠিন নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE