Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Law

অ-বিচার

ভারতে কে জামিন পাবেন আর কাকে বিনা বিচারে দীর্ঘ দিন জেল হেফাজতে থাকতে হবে, সেই প্রশ্নটির উত্তর নির্ভর করে বহুবিধ বিষয়ের উপরে।

law.

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:২৯
Share: Save:

বধূ নির্যাতনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অপ্রয়োজনীয় গ্রেফতার করা উচিত নয় পুলিশের, সম্প্রতি এক নির্দেশিকায় জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আরও বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটেরও এই জাতীয় মামলায় ‘অনায়াসে ও যান্ত্রিক ভাবে’ অভিযুক্তকে আটক রাখার ক্ষেত্রে সায় দেওয়া উচিত নয়। সম্প্রতি ৪৯৮এ ধারায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তির আগাম জামিন নাকচ করে দেয় ঝাড়খণ্ড হাই কোর্ট। সেই রায়কে বাতিল করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সমস্ত হাই কোর্টকে নির্দেশ দিয়েছিল, নিম্ন আদালতগুলির জন্য এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করতে। একই সঙ্গে সমস্ত রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিল, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারায় মামলা রুজু হওয়ামাত্রই বিনা প্রশ্নে যেন গ্রেফতার করা না হয়, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকদের নির্দেশ দিতে। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজ্য এ ক্ষেত্রে পুলিশ আধিকারিকদের একটি তালিকা প্রদান করবে, যাতে সিআরপিসি-র ৪১(১) ধারার উপধারাগুলি নির্দিষ্ট করা থাকবে। গ্রেফতারির আগে সেই তালিকাটি পূরণ করতে হবে তাঁদের। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই কলকাতা হাই কোর্টের এই নির্দেশিকাটি রচিত হয়েছে।

ভারতীয় দণ্ডবিধি ৪৯৮এ ধারা নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির নিগ্রহের হাত থেকে বধূকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করা। কিন্তু, আইনটির অপপ্রয়োগের অভিযোগ বিপুল। বিভিন্ন আদালতের নানা সময়ের রায়েও এই অপপ্রয়োগের প্রশ্নটি উঠে এসেছে। বাস্তবেও, মূলত পণ-নির্যাতন বিরোধী এই আইনে যে ভাবে অভিযোগ দায়ের করামাত্র বিনা প্রশ্নে গ্রেফতারের ক্ষমতা দিয়েছিল, তা সংবিধান-বর্ণিত মৌলিক অধিকারের অনুসারী নয়। অভিযোগ ওঠা এবং অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার মধ্যে যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে, তা এই আইনের ক্ষেত্রে বিচার্য হয়নি। অন্য দিকে, এই আইনের জামিন-অযোগ্য চরিত্রটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্নিহিত দর্শন বলে যে, নিতান্ত ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ব্যতীত সর্বত্রই জামিন স্বাভাবিক অধিকার। বধূ নির্যাতনের যাবতীয় অভিযোগই সেই ‘ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র’ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে, এমন দাবি করা মুশকিল। এই আইনটির ক্ষেত্রে জামিন-অযোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১৪ সালেও সর্বোচ্চ আদালত এই আইনের সংশোধনী পেশ করেছিল। বলা যেতে পারে, সেই একই প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক নির্দেশিকাটি রচিত হয়েছে। নির্যাতিতার সুরক্ষা যাতে নিশ্চিত হয়, তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, কিন্তু অভিযুক্তের মানবাধিকারের প্রশ্নটিকেও অগ্রাহ্য করা চলে না।

অভিজ্ঞতা বলে যে, ভারতে কে জামিন পাবেন আর কাকে বিনা বিচারে দীর্ঘ দিন জেল হেফাজতে থাকতে হবে, সেই প্রশ্নটির উত্তর নির্ভর করে বহুবিধ বিষয়ের উপরে। অভিযুক্তের সামাজিক অবস্থান ও প্রতিপত্তি, আর্থিক অবস্থা, উচ্চতর মহলে প্রভাব, রাজনৈতিক মতামত ইত্যাদি। গণতন্ত্রের পক্ষে তা সুসংবাদ নয়। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতাও সমস্যাবিশেষ। আইনবিভাগ ও বিচারবিভাগকে নিশ্চিত করতে হবে যে, কোনও অবস্থাতেই যেন নিরপরাধকে শাস্তি ভোগ করতে না হয়। বধূ নির্যাতন এক ঘৃণ্য অপরাধ, কিন্তু শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতেই যেন কেউ ‘অপরাধী’-র সাজা না পান, তা নিশ্চিত করা কর্তব্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Law Calcutta High Court Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy