E-Paper

স্পর্ধা

১৮৩টি ঘটনার মধ্যে কুমিরছানার মতো মাত্র ৭টি তুলে ধরে পুলিশি দক্ষতা ও নির্দোষিতা প্রমাণের চেষ্টার আড়ালে থেকে যায় সেই বাস্তব, সুপ্রিম কোর্টের সামনে যা তুলে ধরেছেন আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি।

An image of Yogi Adityanath

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:১০
Share
Save

উত্তরপ্রদেশ সরকারের দুই হাত— বুলডোজ়ার আর এনকাউন্টার, এ-হেন রসিকতায় ছেয়েছে সমাজমাধ্যম। রসিকতামাত্রেই হাসির উদ্রেক করবে সে নিশ্চয়তা এই ভারতে নেই, অন্তত উপরের উদাহরণটি খুবই অস্বস্তিকর ও ভয়ঙ্কর। আধিপত্যবাদ ও একনায়কতন্ত্রে বহুলব্যবহৃত দমনাস্ত্র যদি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাতেও খোদ একটি রাজ্যের সরকার ও তার পুলিশ যদৃচ্ছ ব্যবহার করে, তার চেয়ে বড় বিপদ আর কিছুই নয়। অথচ দেখা যাচ্ছে, বুলডোজ়ার নিয়ে খানিক পিছু হটলেও ‘এনকাউন্টার’ ব্যাপারটিকে যোগী আদিত্যনাথের সরকার রীতিমতো অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, এমনকি শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দোহাই দিয়ে তার সপক্ষে একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থনের আবহও তৈরি করেছে। অপরাধীরা ‘পথে না এলে’ পুলিশ তাদের মেরে ফেলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে একাধিক বার এ কথা বলতে শুনলে যে সমর্থন জেগে ওঠা অস্বাভাবিক নয়।

প্রশাসন যখন কথা শোনে না, ‘আইন’কে তুলে নেয় নিজের হাতে, তখন বিচারব্যবস্থাই শেষ ভরসা। উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রেও শীর্ষ আদালত একাধিক বার সরকারকে বলেছে পুলিশ এনকাউন্টার নিয়ে নানা কথা; উদ্বেগপ্রকাশ মন্তব্য নির্দেশ ভর্ৎসনা— বাদ যায়নি কিছুই। ২০১৭ সাল থেকে এ-যাবৎ হওয়া ১৮৩টি এনকাউন্টারের ঘটনায় হিসাব চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, আদিত্যনাথ সরকার তার মধ্যে মাত্র ৭টির হিসাব দিয়েছে, তাও পূর্ণাঙ্গ নয়। যেটুকু দিয়েছে তার সার কথাটি এই: সব ঠিক আছে। এপ্রিলে প্রকাশ্য দিবালোকে ও পুলিশ-পরিবৃত অবস্থায় গ্যাংস্টার তথা রাজনীতিক আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফের খুনই হোক বা তারও আগে গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের মৃত্যু— রাজ্য পুলিশের তরফে কোনও ভুল হয়নি, তদন্ত হয়েছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে, আদালতের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ অনুসারে। এনকাউন্টারে হত্যার ঘটনায় সরকারের তরফে পুলিশি তদন্তের নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, সব পুলিশ কমিশনারেট বা জ়োন থেকে এনকাউন্টার সংক্রান্ত তথ্য জড়ো করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স স্তরে ‘রিভিউ’ও সারা। সরকারের ভাবখানা এমন, তারা এত সব কাজ করেছে দায়িত্ব নিয়ে, আর কী-ই বা বাকি।

১৮৩টি ঘটনার মধ্যে কুমিরছানার মতো মাত্র ৭টি তুলে ধরে পুলিশি দক্ষতা ও নির্দোষিতা প্রমাণের চেষ্টার আড়ালে থেকে যায় সেই বাস্তব, সুপ্রিম কোর্টের সামনে যা তুলে ধরেছেন আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি। যে বাস্তব বলে— এনকাউন্টারে হত্যার ঘটনাকে উত্তরপ্রদেশে সরকারি আধিকারিকরা মহৎ কীর্তি হিসাবে উদ্‌যাপন করেন, এনকাউন্টারের ঘটনায় জড়িত পুলিশ অফিসারদের পদোন্নতি ও সাহসিকতার পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করে খোদ রাজ্য সরকার। এনকাউন্টারে হত্যা যেমন রয়েছে, তারও বেশি রয়েছে তথাকথিত অপরাধীদের পায়ে গুলি করে চিরকালের মতো পঙ্গু করে দেওয়ার মতো ঘটনা, অগণিত। এই সবই আসলে প্রশাসনের প্রণোদনা যাতে পুলিশ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, সিনেমার কায়দায় অপরাধীকে নিকাশ করে, পরে আদালত চাইলে তদন্ত রিপোর্ট সাজাতে তো সরকার পাশে আছেই! এনকাউন্টার নিয়ে শীর্ষ আদালত বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা যা-ই থাকুক, সংবিধান যতই ‘আইনের শাসন’-এর কথা বলুক, সব লঙ্ঘনের স্পর্ধাই আসল কথা। উত্তরপ্রদেশ সরকার ও পুলিশ সেই স্পর্ধাটি বিলক্ষণ আয়ত্ত করেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Uttar Pradesh Yogi Adityanath encounter case

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।