E-Paper

অবহেলা

নিয়মিত পরীক্ষার জন্য আগত রোগীদের বিপন্নতা দেখছেন এমস-সহ নানা বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকেরা, ওষুধের অভাবে যক্ষ্মার চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে দেশকে সতর্ক করেছেন।

An image of Tuberculosis Patient

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৩
Share
Save

যক্ষ্মার চিকিৎসার জরুরি ওষুধগুলো সরকারি চিকিৎসা প্রকল্পে নথিভুক্ত রোগীরা পাচ্ছেন না, এই সংবাদ উদ্বেগজনক। একাধিক ওষুধে প্রতিরোধ জন্মে গিয়েছে, এমন যক্ষ্মা (মাল্টি ড্রাগ রেসিসট্যান্ট টিবি) নিয়মিত ওষুধের অভাবে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, এমনকি রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। সেই সঙ্গে, যক্ষ্মা নির্মূল না হয়ে রোগীর দেহে থেকে যাওয়ার অর্থ, ২০২৫ সালে দেশকে যক্ষ্মামুক্ত করার যে লক্ষ্য কেন্দ্র গ্রহণ করেছে, তার ব্যর্থতা। অত্যাবশ্যক তিন-চারটি ওষুধ এখন কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বইয়ের অনেক রোগী পাচ্ছেন না। এর জন্য কোনও কোনও রাজ্যের আধিকারিকরা কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, অতিমারির সময়ে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করলেও, গত এক বছর যক্ষ্মার নানা অত্যাবশ্যক ওষুধ মিলছে কম। কেন্দ্র প্রত্যাশা করছে যে, রাজ্যগুলি ওষুধ কিনবে, কিন্তু তার জন্য বাড়তি কোনও বরাদ্দ দেয়নি। এই ওষুধগুলি অত্যন্ত দামি, আনুমানিক খরচ মাসে দশ হাজার টাকাও ছাড়াতে পারে। অতএব যক্ষ্মা রোগী— যাঁদের অধিকাংশই দরিদ্র— নিজেরা চিকিৎসার খরচ বহন করবেন, এ এক অসম্ভব প্রত্যাশা। সরকারি ক্লিনিকগুলি থেকে নিয়মিত ওষুধ না পেলে রোগীর শরীরে ওষুধের প্রতি প্রতিরোধ তৈরি হবে, তা প্রায় অবধারিত। এর ফলে রোগ নিরাময়ের অযোগ্য হয়ে উঠবে, এবং দুরারোগ্য ধরনের যক্ষ্মা ছড়িয়ে পড়বে, তেমন আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

নিয়মিত পরীক্ষার জন্য আগত রোগীদের বিপন্নতা দেখছেন এমস-সহ নানা বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকেরা, ওষুধের অভাবে যক্ষ্মার চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে দেশকে সতর্ক করেছেন। প্রশ্ন হল, ওষুধের এই সঙ্কটের নিরসন কী করে হবে, কবে হবে? সে বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস এখনও মেলেনি। রোগী সংগঠন এবং স্বাস্থ্য আন্দোলনকারীরা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন, কিন্তু মন্ত্রী নিরুত্তর। তামিলনাড়ুর এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, সে রাজ্যে সরকার স্বয়ং ওষুধ কিনছে, তাই সরবরাহে ঘাটতি নেই। কিন্তু অন্য রাজ্যগুলি কী করছে? ওষুধের নিয়মিত জোগান রোগ নিরাময়ের প্রধান শর্ত। আশঙ্কা হয়, কেন্দ্রের বহু প্রকল্পের মতো, ‘প্রধানমন্ত্রী টিবি মুক্ত ভারত অভিযান’-ও প্রচারে যত প্রাধান্য পাবে, কাজে তা পাবে না।

তার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই মিলেছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৫ সালে যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্য অনুসারে ২০২৩ সালে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি এক লক্ষে সর্বাধিক ৭৭ জন, এবং যক্ষ্মায় মৃত্যু এক লক্ষে সর্বাধিক ছ’জন হওয়া দরকার। সেখানে ২০২২ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লক্ষে ১৯৬, মৃত্যু হয়েছে এক লক্ষে ২৩ জনের। অতএব এ বছর লক্ষ্য অধরা থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট। এই অবস্থায় যক্ষ্মার চিকিৎসা, এবং যক্ষ্মা রোগীর সহায়তার জন্য সরকারি উদ্যোগ বাড়ানো দরকার। যক্ষ্মা অসুখটি নিরাময়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘ, এবং দারিদ্র ও অন্যান্য কারণে তা অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। এই জন্য ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘নি-ক্ষয় যোজনা’ নামে সহায়তা প্রকল্প ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়, আক্রান্তকে পুষ্টিকর আহার সরবরাহ এবং রোজগারের সন্ধান দেওয়া হবে। এগুলি জরুরি, তবে চিকিৎসাই যদি ওষুধের অভাবে থমকে যায়, তা হলে যক্ষ্মামুক্ত ভারত কেবল এক ঘোষণাই থেকে যাবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tuberculosis Government hospitals no treatment medicines

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।