Advertisement
E-Paper

ব্যবধান

‘হাই কমান্ড’-এর মনে রাখা উচিত, তাহার ‘কমান্ড’ মানিবার মতো কোনও সাম্রাজ্য অবশিষ্ট নাই।

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০২
Share
Save

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সহিত তাঁহার দলের সম্পর্ক বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলিয়াছেন, আপাতত তাঁহার কোনও মন্তব্য নাই, ইহাই তাঁহার মন্তব্য। প্রশ্নের উত্তর যখন বুঝাইয়া বলিবার দরকার হয় না, তখনই অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা এই বাক্যবন্ধ উচ্চারণ করিয়া থাকেন। অনেক দিন ধরিয়াই কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের দূরত্ব এবং অ-সহযোগ বাড়িতেছে। শাসক বিজেপির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সমন্বয়ের বিবিধ উদ্যোগে দুই দলের মধ্যে আড়াল কার্যত কখনওই ঘুচে নাই। এখন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের মরসুমে ব্যবধান নূতন স্তরে পৌঁছাইয়াছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বাধিনায়িকা দিল্লি সফরে গিয়া কংগ্রেসের ‘অন্তর্বর্তী’ সভাপতির সহিত দেখা করেন নাই, এই বিষয়ে প্রশ্ন করিলে তীব্র মন্তব্যে সেই প্রশ্নকে প্রতিহত করিয়াছেন। বিরোধী রাজনীতির মঞ্চে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াইতে তাঁহার দলের অনীহা কেবল স্পষ্ট নহে, প্রকট হইয়াছে। রাজ্যসভার সাংসদদের শাস্তির প্রতিবাদে অন্য বিরোধীদের সমবেত বিক্ষোভে যোগ না দিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রতিনিধিরা আক্ষরিক অর্থে একাকী ধর্না দিয়াছেন। দলনেত্রী বলিতে পারেন, একাকিত্বই তাঁহার মন্তব্য।

কংগ্রেস হইতে এই ক্রমবর্ধমান দূরত্বের পিছনে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভূমিকা লইয়া জল্পনা অবান্তর। স্পষ্টতই, জাতীয় রাজনীতির বিরোধী পরিসরে কেন্দ্রীয় ভূমিকাই দুই দলের টানাপড়েনের প্রধান উপজীব্য। বিধানসভা নির্বাচনে ঐতিহাসিক সাফল্যের পরে দলের কর্মপরিধিকে রাজ্যের বাহিরে প্রসারিত করিতে মুখ্যমন্ত্রীর যে তৎপরতা, বৃহত্তর ভারতে দলের সক্রিয় অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠাই তাহার লক্ষ্য। সেই বৃহত্তর অস্তিত্বকে মূলধন করিয়া তৃণমূল কংগ্রেস দ্রুত বিরোধী রাজনীতির কেন্দ্রস্থলটি অধিকার করিতে চাহিলে বিস্ময়ের কিছু নাই— আত্মপ্রসারের তাগিদ রাজনৈতিক দলের পক্ষে অযৌক্তিক বলা চলে না। বাহিরে শক্তি বাড়াইতে গিয়া রাজ্যের অন্দরে সমস্যা দেখা দিবে কি না, সেই প্রশ্ন অন্যত্র আলোচ্য। কিন্তু ঘটনা হইল, জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস আজও কার্যত একমাত্র ‘সর্বভারতীয়’ দল, সুতরাং বিরোধী সংহতির স্বাভাবিক মধ্যমণি। সেখানেই কংগ্রেসের সহিত তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব ক্রমে তীব্রতর হইতেছে। তীব্রতা সম্ভবত বাড়িবে। তাঁহার দলই ‘প্রকৃত কংগ্রেস’, এই সঙ্কেতের মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সেই সম্ভাবনায় নূতন মাত্রা যোগ করিয়াছেন।

একটি আশঙ্কা অনিবার্য। বিরোধী মঞ্চে কংগ্রেসের আধিপত্য খর্ব করিবার তাগিদে বিরোধী ঐক্যের ক্ষতি সাধিত হইবে না তো? প্রত্যেক দল নিশ্চয়ই আপন স্বার্থের সিদ্ধি চাহিবে, কিন্তু প্রতিস্পর্ধী রাজনীতি দুর্বল হইলে শেষ অবধি আপন স্বার্থও বিপন্ন হইতে পারে, বিশেষত শাসক যখন সর্বগ্রাসী আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তৎপর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্যই জানেন যে, কংগ্রেসের নির্বাচনী গুরুত্ব যতই কমিয়া থাকুক, বিজেপি-বিরোধিতার পরিসরে তাহার রাজনৈতিক ভূমিকা এখনও অনস্বীকার্য। বিভিন্ন বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়াতেও তাহার সঙ্কেতই এখনও স্পষ্ট, শরদ পওয়ারের মন্তব্য যাহার একটি নিদর্শন। বস্তুত, সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপির ‘স্বাভাবিক প্রতিপক্ষ’ বলিতে এখনও কংগ্রেসকেই বুঝায়। এবং, সরকার ও শাসক দলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, বিশেষত রাহুল গাঁধী, যতটা ধারাবাহিক প্রতিবাদ জারি রাখিয়াছেন, তাহা অন্য কোনও দলই করে নাই। অন্য দিকে, কংগ্রেসের উচিত, আপন ইতিহাস-লালিত অহঙ্কার এবং অভিমান সম্পূর্ণ বর্জন করিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সফল রাজনীতিকদের সহিত গভীরতর সংযোগ রচনার চেষ্টা করা। ‘হাই কমান্ড’-এর মনে রাখা উচিত, তাহার ‘কমান্ড’ মানিবার মতো কোনও সাম্রাজ্য অবশিষ্ট নাই। বিরোধী পরিসরের নেতৃত্বের লড়াই যেন সেই পরিসরটিকেই দুর্বল না করে, তাহা দেখিবার দায়িত্ব দুই তরফেরই।

Mamata Banerjee TMC Congress

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।