Advertisement
E-Paper

অশনিসঙ্কেত

নাগরিক স্বাধীনতা যদি কেবল বিধিভঙ্গের স্বাধীনতা হইয়া উঠে, তাহা হইলে প্রশাসন স্বৈরতান্ত্রিক হইয়া উঠিবার প্রবণতা দেখা দিতে বাধ্য।

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৪৬
Share
Save

তবে কি সমগ্র সমাজই আজ ‘সমাজবিরোধী’ হইয়া উঠিল? এই বৎসর কালীপূজায় নিষিদ্ধ বাজি ফাটাইবার ধুম দেখিলে এমন আশঙ্কা জাগিতে বাধ্য। কেবলমাত্র পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ বাজি’ ব্যবহার করিবার নির্দেশ দিয়াছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাহাকে সম্মান করিতে হইলে আদালত অবমাননার দায়ে গোটা রাজ্যকেই গ্রেফতার করিতে হয়। পুলিশ-প্রশাসন অবশ্যই দায় এড়াইতে পারে না, তাহাদের শিথিলতার সুযোগ লইয়াই নিষিদ্ধ শব্দবাজি অবাধে বিক্রয় হইতেছে। রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকাটিও সুপরিচিত— জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার সকল কর্তব্য অগ্রাহ্য করিয়াছেন নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁহারাই দুর্গাপূজা, কালীপূজার আয়োজক, এবং করোনা-বিধি, দূষণবিধি, সকলই অগ্রাহ্য করিবার ক্ষেত্রটির প্রস্তুতকারী। তবে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন লইয়া বহু আলোচনা, হাহুতাশ হইয়াছে। এই বৎসর তাহা অপেক্ষাও ভয়ানক এক সঙ্কট সম্মুখে আসিয়াছে, তাহা নাগরিক সমাজের দুর্বৃত্তের ন্যায় আচরণ। শহর ও শহরতলির অগণিত মানুষ নিষিদ্ধ বাজি ফাটাইয়াছেন, অভিজাত আবাসন হইতে ঝুপড়ি-বস্তি, সর্বত্র তাহার প্রতাপ ছিল অপ্রতিহত। এমন অপরিণামদর্শী আমোদ বাঙালির দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। তৎসত্ত্বেও এক প্রকার অবিশ্বাস মনকে স্তম্ভিত করিতে চাহে। এক দিকে কোভিড অতিমারিজনিত শ্বাসকষ্টের বিস্তার, অপর দিকে দূষণের আধিক্যের জন্য পরিবেশ বিপর্যয়, এই দুই ভয়ানক সঙ্কট যে জনচিত্তে কিছুমাত্র রেখাপাত করে নাই— তাহা গ্রহণ করা কঠিন।

আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষিত, পরিশীলিত ব্যক্তিরাও যে উৎসবের দিনে উন্মত্ত, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য আচরণ করিতে পারেন, তাহার যথেষ্ট দৃষ্টান্ত এই সমাজ দেখিয়াছে। অধিকাংশ সময়ে তাহা ঘটিয়া থাকে বৈধতা এবং অবৈধতার মধ্যবর্তী কোনও এক ধূসর জমিতে। ডেসিবেল অনুসারে শব্দবাজির বৈধতা নির্দিষ্ট করিতে গিয়া ধোঁয়াশা থাকিয়া যায়, তাই শব্দবাজি দূর করা যায় না। সবুজ বাজিও তেমন ভাবেই নিষিদ্ধ বাজি ব্যবহারের সুযোগ করিয়া দিয়াছে। পরিবেশকর্মীরা দূষণের মাত্রাভেদে বাজিকে ছাড়পত্র দিবার বিরোধিতা করিয়াছিলেন, এবং সকল প্রকার বাজি নিষিদ্ধ করিবার পক্ষে সওয়াল করিয়াছিলেন। তাঁহাদের আশঙ্কা সত্য হইয়াছে। বাজি উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ না হইলে বাজিদূষণ হইতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হইবে না, তাহা নিশ্চিত।

প্রশ্ন অন্যত্র। নাগরিক সমাজে কি তাহা হইলে ভালমন্দ বিবেচনার কোনও স্থান নাই? রাষ্ট্র জোর করিয়া নিবৃত্ত না করিলে জনস্বার্থবিরোধী কাজ অবাধে মানুষ করিয়া যাইবে, সহ-নাগরিকদের বিপন্ন করিতে, এমনকি আপন স্বার্থ বিঘ্নিত করিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করিবে না, এমনই কি ধরিয়া লইতে হইবে? নাগরিক স্বাধীনতা যদি কেবল বিধিভঙ্গের স্বাধীনতা হইয়া উঠে, তাহা হইলে প্রশাসন স্বৈরতান্ত্রিক হইয়া উঠিবার প্রবণতা দেখা দিতে বাধ্য। গণতন্ত্রের গতি ইহার বিপরীত— রাষ্ট্র আপন সীমা পার হইয়া সমাজ-সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে অনধিকার প্রবেশ করিতে চাহিলে নাগরিক সমাজ তাহাকে প্রতিহত করে। পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক আইনের নির্দেশ, তথা জনকল্যাণের বিধি অমান্য করিয়া রাষ্ট্রকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের নিয়ন্ত্রক হইতে আহ্বান করিতেছে। তাহার ফল ভাল হইবে না।

Kali Puja 2021 Crackers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।