Advertisement
E-Paper

আনন্দের বিপদ

পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বটি কেবলমাত্র সরকার, প্রশাসন বা আদালতের হইতে পারে না— মানুষকেও বুঝিতে হইবে।

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৩৬
Share
Save

আনন্দের বিপদ

রাত পোহাইলেই দীপাবলি, বঙ্গে শ্যামাপূজা। আলোর উৎসব, আতশবাজির আতিশয্যে দূষণের উৎসবও বটে। দিনকয়েক পূর্বে কলিকাতা হাই কোর্টের একটি নির্দেশে সেই সুদীর্ঘ ঐতিহ্যে এক পরিবর্তনের ইঙ্গিত ছিল। অতিমারি পরিস্থিতির কথা স্মরণে রাখিয়া এই বৎসর সমস্ত ধরনের বাজি বিক্রয় এবং পোড়াইবার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিল কলিকাতা হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্তটি নাকচ করিয়া জানাইয়াছে যে, বাজি পুড়িবে; কিন্তু তাহাকে অবশ্যই ‘পরিবেশবান্ধব’ হইতে হইবে। প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেও বাজিতে ব্যবহৃত ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়াম সল্ট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়াছিল শীর্ষ আদালত। সেই নিষেধাজ্ঞাই এই রায়েও বজায় থাকিয়াছে। শীর্ষ আদালত জানাইয়াছে, সেই নিষেধাজ্ঞা যাহাতে কঠোর ভাবে পালন করা হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। অন্যথায় যথোচিত পদক্ষেপ করা হইবে। স্বভাবতই রাজ্য প্রশাসনের উপর বিপুল দায়িত্ব।

মহামান্য শীর্ষ আদালতের রায়ের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও এই ক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন। প্রথম প্রশ্ন, বঙ্গে পরিবেশবান্ধব বাজির ধারণাটি আদৌ স্পষ্ট কি? শুধুমাত্র ‘সবুজ’ বাজি বিক্রয় করিতে হইলে বহু পূর্ব হইতে বাজি নির্মাণ কেন্দ্রগুলিতে কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন ছিল, যাহাতে কোনও বাজিতে নিষিদ্ধ উপাদান ব্যবহৃত না হয়। তাহা হয় নাই। উৎপন্ন সমস্ত বাজিই এখন বাজারে পৌঁছাইয়া গিয়াছে। সেই বাজিগুলি যে পরিবেশবান্ধব, এমন নিশ্চয়তা প্রদান করা কার্যত অসম্ভব— বরং, অভিজ্ঞতা বলিবে যে, বিপরীত কথাটিই সত্য: এই বাজির সিংহভাগই যথা পূর্বম্, পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক। সমস্ত বাজি নিষিদ্ধ করিবার পশ্চাতে অন্যতম যুক্তি ছিল, পরিবেশবান্ধব বাজির মোড়কে অবাধে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রয় হইবে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, শীর্ষ আদালতের রায়ে সেই আশঙ্কাটি পূর্ণ মাত্রায় বজায় রহিল। অতীত অভিজ্ঞতা বলিবে, ‘নিষিদ্ধ’ বাজি কখনও বাজার হইতে সম্পূর্ণ অন্তর্হিত হয় না— গোপন পথে ক্রেতার হাতে তাহা যথাসময়ে পৌঁছাইয়া যায়। আইন রক্ষার দায়িত্ব যাঁহাদের স্কন্ধে ন্যস্ত, এই রকম ক্ষেত্রে তাঁহারা অন্য দিকে চাহিয়া থাকিতেই অভ্যস্ত। একই সরকারি পরিকাঠামোয় এই বৎসর যে অন্য রকম হইবে, তাহা ভাবিবার কোনও কারণ নাই। ক্রেতাই বা জানিবেন কী করিয়া, কোথায় সবুজ বাজি পাওয়া যাইবে? পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, রাজ্যে এই বৎসর কোথাও সবুজ বাজি নির্মিত হয় নাই। দেশেও নিয়ম মানিয়া সবুজ বাজি নির্মিত হয় স্বল্প পরিমাণেই। আশঙ্কা, আদালতের এই ছাড়টুকুর সুযোগ লইয়া রাজ্যে অবাধে নিষিদ্ধ বাজি পুড়িবে। সেই ক্ষতি প্রতিরোধের উপায় কী?

সবুজ বাজিতে ছাড়পত্র দিবার একটি যুক্তি হইল, তাহাতে পরিবেশ দূষণ অন্তত ৩০-৩৫ শতাংশ কম হয়। কিন্তু সার্বিক ভাবে দূষণ যখন মাত্রাছাড়া হইতেছে, এবং অতিমারি পরিস্থিতিতে যখন সেই দূষণ রোগীদের বড় বিপদের সম্মুখে ঠেলিয়া দিতেছে, তখন ‘সামান্য অগ্রগতি’-র উপর ভরসা করিলে মুশকিল। দেশে যখন দীপাবলির বাজি লইয়া মামলা চলিতেছে, গ্লাসগো-র পরিবেশ সম্মেলনে তখন বারংবার উচ্চারিত হইতেছে পরিবেশের চূড়ান্ত বিপর্যয়ের আশঙ্কা। পরিবেশ বিষয়ক যে কোনও প্রশ্নকেই কি এখন সেই বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করাই বিধেয় নহে? বাজির ন্যায় অতি দূষণকারী একটি বস্তুকে জীবন থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা জরুরি। আদালতের প্রতি আস্থা রাখিয়াও প্রশ্ন করা জরুরি যে, বাজি বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ করাই কি উচিত ছিল না? তাহার পরও অবশ্য নাগরিক সচেতনতার প্রশ্নটি থাকিয়া যায়। পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বটি কেবলমাত্র সরকার, প্রশাসন বা আদালতের হইতে পারে না— মানুষকেও বুঝিতে হইবে, কয়েক দিনের উল্লাসে বিষম বিপদ ডাকিয়া আনা বিচক্ষণতার কাজ নহে।

Crackers Kali Puja 2021

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।