Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Footpath

ফুটপাতের অধিকার

কেন ফুটপাতকে হকারমুক্ত করা যাইতেছে না, সেই প্রসঙ্গে হকারদের জীবন-জীবিকার প্রশ্নটি বারংবার উঠিয়া থাকে— হকার উচ্ছেদ অভিযান চলিলে এতগুলি মানুষের ভবিষ্যৎ কী হইবে?

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:২৭
Share: Save:

কলিকাতায় বহু যুগ হইল ফুটপাত চুরি হইয়া গিয়াছে। শহরবাসীর সাধ্য কী, এই মহানগরের কোনও ফুটপাত ধরিয়া শান্তিতে হাঁটেন! সেই পরিসর জুড়িয়া হরেকরকম্বা পসরা। ফুটপাত থাকিবে হকারদের দখলে, পথচারী নামিবেন রাস্তায়— ইহাই যেন শহর কলিকাতার ‘নিয়ম’। এবং এই জবরদখলকে নির্বাচনী স্বার্থে দীর্ঘ দিন ধরিয়া লালন করিতেছে, পরোক্ষ প্রশ্রয় জোগাইতেছে রাজনৈতিক দলগুলি। স্থানীয় নেতাকে তুষ্ট রাখিতে পারিলে জবরদখলে বাধা দিবার কেহ থাকে না, কোনও প্রতিবাদ হয় না। ইহাই দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। ফলে বাম হইতে তৃণমূল— কোনও আমলেই কলিকাতার ফুটপাত-চিত্রে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসে না। বিভিন্ন সময় নানা স্তরে আলোচনা চলে, কোনও বড় দুর্ঘটনার পর প্রতিশ্রুতির বন্যা বহে। কিন্তু হকারদের সরানো যায় না।

২০১৪ সালে পাশ হওয়া ‘পথ বিক্রেতা (জীবিকা সুরক্ষা ও পথ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ) আইন’ অনুসারে, শহরের আড়াই শতাংশ জনসংখ্যা হকারিতে থাকিবেন ধরিয়া লইয়াই শহর পরিকল্পনা করিতে হইবে। বলা হইয়াছিল, শহরকে ‘হকিং জ়োন’, ‘নন-হকিং জ়োন’ এবং বিধিনিষেধযুক্ত এলাকায় ভাগ করা হইবে। সেই পরিকল্পনা রূপায়িত হয় নাই। হকারদের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দিবার প্রতিশ্রুতিটিও পূরণ হয় নাই আইনি জটিলতায়। ফলে, এই শহরে হকার হিসাবে জীবিকা অর্জন করিতে প্রয়োজন শুধু নেতাদের আশীর্বাদ। উপরন্তু, তৃণমূল সরকার ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশে হকার বসিবার অনুমতি দিল। শহরের অধিকাংশ স্থানেই ফুটপাতের আয়তন যাহা, সেই অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ হকারদের দখলে থাকিলে অবশিষ্টাংশ হাঁটিবার উপযোগী থাকে না— অবশ্য, তেভাগা সূত্র মানিয়া হকাররা নির্দিষ্ট জায়গাটুকুতেই বসিয়াছেন, এমন দৃশ্য দেখিবার সৌভাগ্যও মহানগরের হয় নাই। কলিকাতা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বহু পথদুর্ঘটনার জন্য দায়ী পথচারীদের ফুটপাত ছাড়িয়া রাস্তায় নামিয়া আসিবার প্রবণতা। উদ্বেগের কারণ আরও আছে। ফুটপাতে অনেক ক্ষেত্রে বিক্রয়ের জন্য দাহ্য পদার্থ মজুত থাকে। অস্থায়ী স্টলগুলিতেও যে কাপড় বা প্লাস্টিকের ছাউনি ব্যবহার করা হয়, তাহাও মারাত্মক। এই শহর বাগড়ি মার্কেট বা গড়িয়াহাটের ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী। তথাপি, প্রশাসক হইতে বিক্রেতা— কাহারও টনক নড়ে নাই।

কেন ফুটপাতকে হকারমুক্ত করা যাইতেছে না, সেই প্রসঙ্গে হকারদের জীবন-জীবিকার প্রশ্নটি বারংবার উঠিয়া থাকে— হকার উচ্ছেদ অভিযান চলিলে এতগুলি মানুষের ভবিষ্যৎ কী হইবে? এইখানেই সুষ্ঠু পরিকল্পনার গুরুত্ব, যেখানে হকাররা ফুটপাত ছাড়িয়া উঠিয়া গেলেও তাঁহাদের রোজগারে টান পড়িবে না। কিন্তু এত দিনেও যে সেই বিকল্প ভাবনা উঠিয়া আসে নাই, তাহার কারণ জনমোহিনী রাজনীতি এবং পরিকল্পনাগত ত্রুটি। এই দুই কারণেই অতীতে বাম সরকারের ‘অপারেশন সানশাইন’ও মুখ থুবড়াইয়া পড়ে। হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, এবং তাঁহাদের জীবিকায় যাহাতে আঁচ না পড়ে, তাহা দেখা, এবং ফুটপাতকে নাগরিক জীবনে ফিরাইয়া দেওয়া— ইহা প্রশাসনেরই কাজ। এবং জরুরি কাজ। প্রশাসনিক অপদার্থতার কারণে নাগরিক অধিকারটিকে নষ্ট করা চলিবে না। দখলমুক্ত ফুটপাত নাগরিক অধিকার। রাজনীতি সেই অধিকার কাড়িয়া লইতে পারে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Footpath hawker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy