Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Migrant Workers

ঝুঁকির শ্রম

চিকিৎসা, মাতৃত্ব, সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা— নাগরিকের এই সব প্রাপ্য নিশ্চিত করা দরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও।

পরিযায়ী শ্রমিক।

পরিযায়ী শ্রমিক।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৫৩
Share: Save:

আবারও উপেক্ষিত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। অতিমারির শুরুতে যে অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁরা, তার সামান্য সান্ত্বনা মিলতে পারত যদি সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা ও চাহিদার যথাযথ মূল্যায়নের কাজ অন্তত শুরু করত। বস্তুত সেই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল রাজ্য সরকার। ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ প্রকল্প কার্যকর করার উদ্দেশ্যে গত জুলাই মাসে কেন্দ্র চিঠি দেয় রাজ্যকে। উত্তরে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে ভিন রাজ্যের কত পরিযায়ী শ্রমিক আসছেন, সরকার তা গণনা করবে। কিন্তু এ রাজ্যে আগত শ্রমিক, অথবা পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভিন রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা গণনা হয়েছে, তাঁদের বিষয়ে তথ্য সংগৃহীত হয়েছে, এমন কোনও ইঙ্গিত এখনও অবধি মেলেনি। এ বিষয়ে তথ্যের অধিকার আইনের অধীনে বার বার আবেদন করেও একটি নাগরিক সংগঠন শ্রম দফতরের কাছ থেকে কোনও তথ্য পায়নি। প্রশ্ন উঠবে যে, কেনই বা তথ্যের জন্য আবেদন করতে হবে? রাজ্য সরকার স্বয়ং এই তথ্য কেন প্রকাশ করবে না? ২০২০-২১ সালে সুপ্রিম কোর্টও একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে বার বার রাজ্যগুলির কাছ থেকে হলফনামা দাবি করে জানতে চেয়েছে যে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য কী কী করেছে রাজ্যগুলি। যদিও ভারতে আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক আইন (১৯৭৯) রয়েছে, কিন্তু আজ অবধি প্রায় কোনও রাজ্য তার শর্তগুলি পূরণ করেনি। পরিযায়ী শ্রমিক অথবা ঠিকাদার, কোনও পক্ষেরই নথিভুক্তি হয়নি। পারিশ্রমিক, দেহ ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষা— আইনত যে সুরক্ষাগুলি পাওয়ার কথা পরিযায়ী শ্রমিকদের, তার প্রায় কোনওটিই তাঁরা পান না। সম্পূর্ণ অসুরক্ষিত পরিস্থিতিতে কাজ করছেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা।

এর ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা বার বার বিপন্ন হয়েছে। কখনও অন্য দেশে, কখনও অন্য রাজ্যে তাঁরা বার বার আক্রান্ত হয়েছেন— কখনও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের জেরে, কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে, কখনও নিয়োগকারীর নিপীড়নের কারণে। ২০১৭ সালে রাজস্থানে মালদহের শ্রমিক আফরাজুল খানের বীভৎস খুন, ২০২১ সালে কেরলে বন্যায় বাংলার শ্রমিকদের ক্ষতির পরে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নথিভুক্তির অঙ্গীকার করেছিল রাজ্য। কাজের বেলা তা হয়নি। যথাযথ পরিচয়পত্রের অভাবে পরিযায়ী শ্রমিকরা সহজে পুলিশি হয়রানিরও শিকার হন। ভারতের প্রায় কোনও বড় শহরে সুলভে স্বল্প মেয়াদের ঘর ভাড়ায় না মেলায় অনেক সময়েই অবৈধ বস্তিতে তাঁদের বাস করতে হয়। প্রায় কোনও সরকারি পরিষেবা তাঁদের কাছে পৌঁছয় না, কারণ রাষ্ট্র এখনও মানুষের পরিচিতি তার বাসস্থান দিয়ে নির্দিষ্ট করে। অথচ, বাস্তব আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০২০ সালে লকডাউনের পর খাবার সরবরাহ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, বেঙ্গালুরুতে প্রায় ২৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, পুরপ্রশাসনের কাছে যাঁদের উপস্থিতির কোনও প্রমাণই ছিল না। গোট দেশে পরিযায়ী শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এখন গোটা দেশে অগ্রগণ্য। ফলে, দেশের যে প্রান্তেই পরিযায়ী শ্রমিকের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হোক, তাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আগ্রহ থাকারই কথা। দুর্ভাগ্য, এই রাজনীতি এই জনগোষ্ঠীর কথা বিস্মৃত হয়েই থাকে।

অথচ, প্রয়োজন বহুবিধ। চিকিৎসা, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, মাতৃত্ব, সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা— নাগরিকের এই সব প্রাপ্য নিশ্চিত করা দরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও। কিন্তু তাঁদের কাছে পরিষেবা পৌঁছনোর জন্য প্রয়োজনীয় নমনীয়তা, তৎপরতা ও সংবেদনশীলতা এখনও দেখা যাচ্ছে না সরকারি ব্যবস্থায়। এখনও স্পষ্ট নয়, ‘ই-শ্রম’ পোর্টালে নথিভুক্ত শ্রমিকরা কী বাড়তি সুবিধে পাবেন, রেশনের শস্যটুকু ছাড়া আর কী আশা করতে পারেন তাঁরা। ফের ঝুঁকির পথে বাংলার শ্রমিকরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy