Advertisement
E-Paper

(স)শব্দকল্পদ্রুম

এই সবই যন্ত্রের যন্ত্রণা ধরে নিয়ে যাত্রীরা সহ্য করে চলেছেন। সহ্যের মাত্রা ছাড়ালে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে, সাময়িক কাজ হয়; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা স্রেফ উপেক্ষা কিংবা সহ্য করে স্বল্প সময়ের যাত্রাপথটুকু কাটিয়ে দেন।

kolkata metro

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৩
Share
Save

সুকুমার রায়ের কবিতায় ছিল ঠাস্‌ ঠাস্‌ দ্রুম দ্রাম শব্দে ফুল ফোটার কথা। কলকাতার মেট্রো রেল চড়লে বাঙালির সেই কবিতা আরও বেশি মনে পড়বে, মেট্রোর কামরায়
সশব্দ বিজ্ঞাপনের সৌজন্যে। সৌজন্য না বলে একে অত্যাচারই বলা যায়, এতই তার বর্ধিত মাত্রা। মেট্রোয় ধ্বনি-বিজ্ঞাপন শুরু হয়েছে কিছু কাল, করোনাকালে লকডাউন পেরিয়ে মেট্রো চালু হলে তাতে স্বাস্থ্যবিধি ও সচেতনতামূলক নানা বার্তা প্রচারিত হয়েছে, সম্প্রতি এসেছে নানা পণ্য ও পরিষেবার ধ্বনি-বিজ্ঞাপন। এই সবই কার্যকর, অর্থকরী তো বটেই, কিন্তু যাত্রীদের জন্য ভয়ঙ্করী হয়ে উঠলে তার উদ্দেশ্যই মাটি। মেট্রো বিপুলসংখ্যক যাত্রীর নানা কাজে যাওয়ার দ্রুতযান; তাতে চাপেন স্কুল-কলেজের ক্লাস ও পরীক্ষা ধরতে ছোটা ছাত্রছাত্রীরা, চিন্তিত অভিভাবককুল, অফিসের অতি জরুরি মিটিং-এর কথা ভাবতে ভাবতে যাওয়া কর্মী, ডাক্তার আজ ঠিক কী বলবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রোগী ও তাঁর পরিজন, এবং এমনই আরও অনেক মানুষ। এমন নয় যে মেট্রো-যাত্রায় সকলের অখণ্ড মনঃসংযোগ জরুরি, কিন্তু যাত্রীদের মনের স্বাভাবিক স্থিতি ও শান্তি যে নিতান্ত জরুরি তা নিয়ে সংশয় থাকতে পারে না। প্রবল ডেসিবেলের বিজ্ঞাপনী জিঙ্গলে সেই শান্তি ভঙ্গ হলে তা যাত্রী-পরিষেবায় চরম অব্যবস্থার নামান্তর।

এখন জানা যাচ্ছে এই শব্দের জেরে শুধু যাত্রীদেরই নয়, মেট্রো-চালকদেরও মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। মেট্রোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে একগুচ্ছ ত্রুটি সংশোধনের কথা বলেছেন চিফ সেফটি কমিশনার, তার মধ্যে রয়েছে ‘শ্রাব্য বিজ্ঞাপনের ব্যাঘাত’-এর কথা। কামরায় চলা উচ্চগ্রামের বিজ্ঞাপন চালকের কেবিনে পৌঁছে তাঁর মনোযোগ ব্যাহত করলে সমূহ ক্ষতি, ট্রেন চালানোয় বা কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগে অসুবিধা হতে পারে। এ-হেন অনুযোগ চালকদের একাংশ আগেই করেছেন, তার জেরে বিজ্ঞাপনের শব্দ সহনমাত্রায় নামানোও হয়েছে, তার পরেও রেকবিশেষে শব্দমাত্রার তারতম্য রয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, অনেক যাত্রী অভিযোগ করছেন, কামরায় বিজ্ঞাপন যত জোরে শোনা যায়, স্টেশন আসার ঘোষণা তত জোরালো নয়; অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বয়ংক্রিয় ঘোষণা হচ্ছেও না, চালক তাঁর কেবিন থেকে নিজমুখে পরবর্তী স্টেশন ঘোষণা করছেন।

এই সবই যন্ত্রের যন্ত্রণা ধরে নিয়ে যাত্রীরা সহ্য করে চলেছেন। সহ্যের মাত্রা ছাড়ালে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে, সাময়িক কাজ হয়; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা স্রেফ উপেক্ষা কিংবা সহ্য করে স্বল্প সময়ের যাত্রাপথটুকু কাটিয়ে দেন। তাঁরা ধরে নিয়েছেন এমনটাই এখানে দস্তুর, এটাই ভবিতব্য। এ যেন সেই সমগ্রচিত্রেরই একটি অংশমাত্র, যেখানে পাত্রপাত্রী তথা নাগরিকেরা বুঝেই গিয়েছেন যে, এ শহরে আর কিছুই পাল্টাবে না— দুর্গাপুজোর সময় দৃশ্যদূষণ ও শব্দদূষণে মহানগর ভরে যাবে, উঁচু উঁচু ব্যানার-হোর্ডিংগুলি উৎসব পেরিয়ে গেলেও সরানো হবে না, মাইকের চিৎকৃত ঘোষণা ও অ-সুরের দাপট অষ্টপ্রহর সঙ্গী হবে। আসলে এ এক সার্বিক বোধের অবক্ষয়— কতটুকু দেখানো হলে তা সুদৃশ্য, কতটা শোনানো গেলে তা সুখশ্রাব্য, সেই কাণ্ডজ্ঞানটি এই শহর থেকে নির্বাপিত ও নির্বাসিত হয়েছে। মেট্রো রেলের যাত্রীরা আর কী করবেন, কানে ইয়ারফোন গুঁজে ফোনের পর্দায় বিদেশি মেট্রো রেলে সুখসফরের স্বপ্ন দেখা ছাড়া!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata metro services Kolkata Metro Advertisement Audio

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}