সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ের আবহেও অনেকেই নিজের বিপজ্জনক আস্তানাটি ছেড়ে অন্যত্র গমনে অনিচ্ছা দেখিয়েছেন। প্রতীকী ছবি।
অভ্যাস, সে যতই বিপজ্জনক হোক না কেন, কিছু মানুষ সহসা তার সঙ্গ ছাড়তে চান না। সু-যুক্তি দিলেও কর্ণপাত না করে নিজের বিপদ বাড়ান, অন্যদেরও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ান। উদাহরণ হিসাবে পুরনো, বিপজ্জনক বাড়িতে বাস করার অভ্যাসটির কথা বলা যায়। সম্প্রতি যেমন ঘূর্ণিঝড়ের আবহেও তাঁরা নিজ বিপজ্জনক আস্তানাটি ছেড়ে অন্যত্র গমনে অনিচ্ছা দেখিয়েছেন। এই অনিচ্ছা এবং গা-জোয়ারি মনোভাব দীর্ঘ দিনের। পুর প্রশাসনের দাবি, বার বার আইন পাল্টেও পুরনো বাড়ি আঁকড়ে থাকার রোগের পরিবর্তন হয় না। ফলে, প্রতি ঝড়বৃষ্টি, বর্ষার আগমন বার্তায় দুশ্চিন্তা বাড়ে প্রশাসনের। বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটি বর্তায় তাঁদের উপর। এ বছরও যে তার অন্যথা হবে না, মরসুমের প্রথম ঝড়বৃষ্টির আগমনবার্তাতেই তার ইঙ্গিত মিলেছে।
বিধিবহির্ভূত বাড়ি নির্মাণ এবং তার বিপদ বিষয়ে আগেই এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে (অবৈধ নির্মাণ, ১০-৫) আলোচনা হয়েছে। তবে নতুন নির্মাণের সঙ্গে পুরনো বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে মৃত্যুর সংখ্যাও বড় কম নয়। গত বছর বর্ষায় দু’টি বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছিল। বছর কয়েক আগে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটেও বাড়ি ভেঙে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ সমস্যার গোড়া অনেক গভীরে। বহু ক্ষেত্রে ভাড়াটেদের দাপটে মালিকই বাড়িতে ঢুকতে পারেন না। ফলে, সংস্কার নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি অব্যাহত থাকে। অনেক বাড়ির ক্ষেত্রে শরিকি বিবাদও সংস্কার না হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং, যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সংস্কার-বর্জিত বাড়িগুলি বাসিন্দা এবং পথচারীদের বিপদের কারণ হয়ে ওঠে। গত বছর জানা যায়, বিপজ্জনক বাড়ি ছেড়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ‘পজ়েশন সার্টিফিকেট’ দেবে পুরসভা, যাতে তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। প্রশ্ন হল, সে কাজ কত দূর অগ্রসর হয়েছে? পুরনো বাড়ির ক্ষেত্রে পুর আইনের ৪১২ (এ) ধারা অনুযায়ী, বিপজ্জনক বাড়ি ঘোষণা করে পাঠানো নোটিসকে ‘কনডেমড’ নোটিস বলে ধরা হবে। মালিককে সেই বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হবে। মালিক সেই কাজ করতে না পারলে দায়িত্ব নেবে পুরসভা, খরচের ভার মালিকের। কিন্তু এতেও বিশেষ লাভ না হওয়ায় নতুন করে সংশোধনীর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ভাবনাচিন্তা চলছে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে পুরনো বাড়ি সংস্কারেরও।
কিন্তু এতবিধ প্রশাসনিক উদ্যোগ সত্ত্বেও কী করে বছরের পর বছর বাড়িগুলি জীর্ণতর হতে থাকে, সেই প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন। বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের নিজস্ব কিছু দাবিদাওয়া আছে। সর্বাগ্রে, সেই দিকগুলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের আলোচনায় সমাধানসূত্র বার করা হোক। কিছু বছর আগে মহারাষ্ট্রের ঠাণে পুর নিগম সেই শহরের বিপজ্জনক বাড়ি খালি করে তা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাড়ি থেকে বলপূর্বক বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা গণতান্ত্রিক দেশে কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ নয়। কিন্তু প্রশ্ন যখন অনেক নিরীহ প্রাণের, তখন প্রশাসনিক কড়া অবস্থান অবশ্যই বিবেচ্য। বাসিন্দাদেরও সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন পূর্ণ সহযোগিতা করা। উষ্ণায়নের প্রেক্ষাপটে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভূমিকম্পের আশঙ্কাটিও উড়িয়ে দেওয়ার নয়। এমতাবস্থায় কলকাতার বাড়ি ও তার বাসিন্দাদের সুরক্ষার প্রশ্নে নাগরিকের শুভবুদ্ধির ভরসায় বসে থাকার দিন ফুরিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy