E-Paper

অবিন্যস্ত

একই ভাবে আশা জাগায় না প্রতি উৎসবের আগে আইন ভঙ্গকারীদের কড়া শাস্তির আশ্বাসও। যে কোনও উৎসবে বিধি ভাঙা কলকাতার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩১
Share
Save

যে কোনও সভ্য শহরে স্থানীয় প্রশাসনের মূল ভূমিকাটি হল, স্থানীয় ভাবে উদ্ভূত সমস্যাগুলিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সুসংগঠিত ভাবে তার সমাধানের বন্দোবস্ত করা। কিন্তু কলকাতার ক্ষেত্রে কাজের পূর্বেই আড়ম্বর, এবং বাগাড়ম্বর— উভয়ই সুপ্রচুর। কাজের নমুনা যৎসামান্য। পরিবেশ বিষয়ক সমস্যাগুলি, যার সঙ্গে নাগরিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িত, সে ক্ষেত্রেও যেমন অ-পরিকল্পনা এবং বিশৃঙ্খলার নমুনা অসংখ্য, তেমনই অবিন্যস্ত পথনিরাপত্তার মতো বিষয়টিও। শহরের বায়ুদূষণ ঠেকাতে যেমন ইতিপূর্বে একাধিক কমিটি গঠিত হয়েও কার্যত সেগুলি অকেজো হয়ে রয়েছে। সম্প্রতি ফের একটি নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে। অন্য দিকে, সদ্যসমাপ্ত দোল উৎসবে বিশৃঙ্খলার ধারা অব্যাহত রেখেছেন এক শ্রেণির নাগরিক। পরিপ্রেক্ষিতের দিক থেকে দেখলে দু’টি বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু উভয়কে এক সুতোয় বেঁধেছে এ শহরের প্রশাসনিক ব্যর্থতা। উভয় ক্ষেত্রেই প্রশাসনের তরফে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আশ্বাস মিলেছে। অব্যবস্থার ছবি পাল্টাতে তারা ‘বদ্ধপরিকর’— এমন আশ্বাসও শোনা গিয়েছে। অথচ, বাস্তব ছবি পাল্টায়নি।

বছর দেড়েক পূর্বে আমেরিকার এক গবেষণা সংস্থার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতির নিরিখে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির মধ্যে কলকাতার স্থান দ্বিতীয়। শীর্ষে দিল্লি। শুষ্ক মরসুমে বাতাসে মিশ্রিত ধূলিকণা এ শহরের নাগরিকদের শ্বাসজনিত অসুখের অন্যতম উৎস। প্রশাসন এই বিপদের গুরুত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত প্রশংসার্হ হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। কারণ, এ বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতা স্বস্তিদায়ক নয়। ২০১৯ সালেও শহরে বায়ুদূষণ ঠেকাতে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটি রিপোর্ট জমা করার পূর্বেই পৃথক এক সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। তারও উদ্দেশ্য ছিল বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন। কিন্তু রিপোর্ট পেশের ক্ষেত্রে তাদের তৎপরতা এখনও চোখে পড়েনি। বায়ুদূষণ কমানোর জন্য গঠিত ‘হাই পাওয়ার্ড অ্যাডভাইজ়রি কমিটি’ও বর্তমানে ‘অচল’ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। সুতরাং, নবগঠিত কমিটি নিয়ে আশাবাদী হওয়ার বিশেষ কারণ নেই।

একই ভাবে আশা জাগায় না প্রতি উৎসবের আগে আইন ভঙ্গকারীদের কড়া শাস্তির আশ্বাসও। যে কোনও উৎসবে বিধি ভাঙা কলকাতার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি দোলের দিনও তার অন্যথা হয়নি। কোথাও বিনা হেলমেটে একাধিক যাত্রী নিয়ে বেপরোয়া বাইক ছুটেছে, কোথাও বেসামাল হাতে চালক গতির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, কোথাও আবার অচেনা কাউকে রং না দেওয়ার পুলিশি অনুরোধ গ্রাহ্য হয়নি। উৎসব-অন্তে পুলিশের তরফ থেকে শাস্তিপ্রাপকদের সংখ্যা জানানো হলেও তাতে বিধিভঙ্গ রুখতে ব্যর্থতার ছবিটি চাপা পড়ে না। অতএব শহরকে ভাল রাখার দায়িত্বপ্রাপ্তদের সর্বাগ্রে গৃহীত পরিকল্পনাগুলির সুসংহত রূপায়ণের কাজটি করতে হবে। অবশ্য তারও আগে রপ্ত করতে হবে কথা কম, কাজ বেশি— এই আপ্তবাক্যটি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Air pollution Kolkata Administration

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।