Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Cinema

কল্পনির্ঝর

কম্পিউটার গ্রাফিক্স, স্পেশ্যাল এফেক্টসের এলাহি খরচ নেই, কম বাজেটেই বিষয়টিকে ধরা যাবে। তাঁকে যে দর্শককুল মনের মণিকোঠায় রেখে দিয়েছেন, তাঁরা অন্তত সিনেমাহলে পদার্পণ করবেন।

cinema

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ০৭:৫৮
Share: Save:

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, এত কবি কেন? হাল আমলে বাঙালি প্রশ্ন তুলতেই পারে, এত নাম-ধাম ভাঁড়ানো ‘বায়োপিক’ কেন! কখনও মহাশ্বেতা হয়ে যান মহানন্দা, মৃণাল সেন পর্দায় আসেন ভিন নামে, সত্যজিৎ রায় পরিচিত হন তাঁর সেরা ছবির নামে... অপরাজিত রায়। নাম বদল করে বাংলা ছবি আজকাল নক্ষত্রদের শ্রদ্ধার্ঘ্য দিতে ব্যস্ত। হিন্দিতে কিন্তু বাস্তব নামেই ম্যায় অটল হুঁ, স্যাম বাহাদুর, ভগৎ সিং, গঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি বানানো হয়। গঙ্গুবাই মুম্বইয়ের কামাতিপুরা এলাকায় যৌনকর্মী ছিলেন, পরে যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী। বাংলাতেও এ রকম অনেক সাধারণ নারীর অসাধারণত্বে উত্তীর্ণ হওয়ার কাহিনি আছে, কিন্তু চলচ্চিত্র-নির্মাতারা নাম ভাঁড়ানোর কল্পজাল থেকে বেরোতে নারাজ। এ বছরেই অক্টোবর মাসে তপন সিংহের শতবর্ষ, আগামী বছর ঋত্বিক ঘটকের। তাঁকে নিয়ে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মেঘে ঢাকা তারা আগেই বেরিয়েছে। কিন্তু শতবর্ষে নামধাম বদলে শ্রদ্ধার্ঘ্যের সম্ভাবনা দর্শকের মনে আসবেই।

অবশ্যই প্রশ্নটা বাংলা বনাম হিন্দির নয়। গত কয়েক বছর ধরে হলিউডেও একের পর এক বায়োপিক। কখনও মার্গারেট থ্যাচারকে নিয়ে দি আয়রন লেডি, কখনও ওপেনহাইমার, কখনও বা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংকে নিয়ে দ্য থিয়োরি অব এভরিথিংওপেনহাইমার ছাড়া বাকি দু’জনের জীবদ্দশাতেই তৈরি জীবনচিত্র, তবুও সেখানে কোনও কল্প-নামাবলির আশ্রয় নিতে হয়নি। হলিউডে বায়োপিক-তরঙ্গের এই কারণ হিসাবে সেখানকার ফিল্মবেত্তারা অনেকেই স্ট্রিমিং-এর জন্ম ও স্টুডিয়ো সিস্টেমের মৃত্যুকে খুঁজে পেয়েছেন। বড় বাজেটের ছবি করতে পারে প্যারামাউন্ট বা মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ারের মতো স্টুডিয়ো সংস্থা। কিন্তু তাতে দর্শক ও বক্স অফিসের সম্বৎসরের খোরাকি জোটে না। ফলে মাঝারি ও কম বাজেটের হরেক ছবি তৈরি হত। নানা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তৈরির পর দর্শকরা সিনেমাহলে যেতে নারাজ হলেন। ওটিটি রিলিজ়ের জন্য বরং তাঁরা বাড়ি বসে অপেক্ষা করেন। এই প্রেক্ষিতে প্রযোজকরা ভাবলেন, যদি দর্শকদের পরিচিত চরিত্রকে পর্দায় আনা যায়! কম্পিউটার গ্রাফিক্স, স্পেশ্যাল এফেক্টসের এলাহি খরচ নেই, কম বাজেটেই বিষয়টিকে ধরা যাবে। তাঁকে যে দর্শককুল মনের মণিকোঠায় রেখে দিয়েছেন, তাঁরা অন্তত সিনেমাহলে পদার্পণ করবেন।

সঙ্গে রয়েছে আজকের ভঙ্গুর সেলেব্রিটি-দর্শন। সত্তর দশকেও ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়া, খ্যাতনামা হওয়া কঠিন ছিল, কিন্তু সেই খ্যাতি বছরের পর বছর প্রজন্মবাহিত হতে হতে সেই বিখ্যাতরা প্রায় ঈশ্বরতুল্য হয়ে যান। তিন মিনিটের খ্যাতির যুগে সেই রকম ‘সেলেব’ আর জন্মাবে না, ফলে মেরিলিন মনরো বা এলভিস প্রেসলির মতো কিংবদন্তিকে পর্দায় সৃষ্টি করতে হবে। সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণালের ক্ষেত্রেও একই কথা। তবে স্বীকার করা জরুরি, বাঙালি বেশির ভাগ সময় জীবনীর নামে অর্ধসত্যমিশ্রিত গৌরবগাথা বা ‘হেজিয়োগ্রাফি’ তৈরি করে। সুভাষচন্দ্র বসু জীবনেও বিয়ে করতে পারেন, এমন কথা যেখানে বলা যায় না। তিনি তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে সাইবেরিয়া চলে যান, গুমনামি হয়ে বাকি দিনগুলি কাটিয়ে দেন। জনসংস্কৃতির প্রত্যাশা মেটাতে যে প্রয়াস, তাতে কল্প-নামাবলিই তৈরি হয়, জীবনচিত্র নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

biopic cinema Indian Cinema Movies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy