Advertisement
E-Paper

দেখনদারি

আলু বাঙালির প্রিয় আনাজ। কিন্তু সুষম আহার সুলভ করতে হলে ডিম, ডাল, বা প্রোটিন-ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্যবস্তুকে সস্তা করা বেশি জরুরি ছিল।

আলুর দাম নিয়ে দরাদরির দেখনদারি বন্ধ হোক।

আলুর দাম নিয়ে দরাদরির দেখনদারি বন্ধ হোক। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২২ ০৮:২৪
Share
Save

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলু ব্যবসায়ীদের সামনে গাজর ঝোলালেন, আবার লাঠিও দেখিয়ে রাখলেন। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হিমঘর খালি করলে ভাড়ায় ছাড় মিলবে, ওই তারিখ পেরোলেই পুরো মাসের ভাড়া গুনতে হবে। এর পরেও ব্যবসায়ীরা আলু বার না করলে রাজ্য সরকারই সব বিক্রি করে দেবে। আন্দাজ হয়, মুখ্যমন্ত্রী অত্যাবশ্যক পণ্য আইন প্রয়োগ করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এই আইন প্রয়োগের ক্ষমতা নরেন্দ্র মোদী সরকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল রাজ্যগুলির থেকে, কৃষক আন্দোলন তা প্রতিহত করেছে। অতএব মুখ্যমন্ত্রীর হাতে আলুর মজুতদারি রুখে দেওয়ার আইনি ক্ষমতা রয়েছে। যদিও আইন প্রয়োগের যুক্তি কী, সে প্রশ্ন উঠবে। এখন আলুর জোগান বাজারে যথেষ্ট। ‘জনস্বার্থে’ আলুর দাম কমানো দরকার, এমন দাবিও গোলমেলে। প্রায় সব আনাজের দাম আজ গরিবের সাধ্যাতীত, দুধ, ডাল বা ফল কিনতে মধ্যবিত্তও সমস্যায় পড়ছে। আর্থিক সঙ্গতির অভাবে মানুষ খাদ্য-সহ নানা অত্যাবশ্যক পণ্যে খরচ করছেন কম, তা ধরা পড়েছিল ২০১৯ সালেই। তার পরে অতিমারি-জনিত কর্মহীনতা, এবং তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় খাদ্যের মূল্যস্ফীতি অত্যন্ত চড়া। ভারতে শিশুদের প্রোটিনে ঘাটতি বরাবরই কম, এখন তা নীরব মহামারি। এই সময়ে আলুর মতো একটি শর্করা-প্রধান আনাজের দাম কিলোগ্রামে পাঁচ-ছয় টাকা কমালে পুষ্টির নিরিখে তাতে লাভ হবে কতটুকু? আলু বাঙালির প্রিয় আনাজ। কিন্তু সুষম আহার সুলভ করতে হলে ডিম, ডাল, বা প্রোটিন-ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্যবস্তুকে সস্তা করা বেশি জরুরি ছিল।

সরকারি অধিকর্তারা অবশ্য অন্য একটি যুক্তি দেখাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, হিমঘরে তোলার সময়ে আলুর দাম যদি কিলোগ্রাম প্রতি ১২-১৩ টাকা হয়ে থাকে, তা হলে ১৬-১৭ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে বিক্রি হবে না কেন? সংবাদে প্রকাশ, মুখ্যমন্ত্রী খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রক কমিটির সদস্যদের বলেছেন, বাজারে আলুর দাম কুড়ি টাকা কিলোগ্রামের কমে রাখা নিশ্চিত করতে। এর অর্থ, ব্যবসায়ীর জন্য কতটা লাভ ‘যথেষ্ট’ তা সরকারই ঠিক করতে চাইছে। বাজার এমন ‘ন্যূনতম লাভ’-এর নিয়মে চলে না, সর্বোচ্চ লাভ করা যে কোনও ব্যবসায়ীর লক্ষ্য। বাজারের নিয়মে সেটাই স্বাভাবিক। তাকে সংযত করতে সরকার ব্যবসায়ীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে সস্তায় আলু বিক্রি করে। তাতে ব্যবসায়ী নিজের দাম কমাতে বাধ্য থাকবে। ‘সুফল বাংলা’ তা করতে পারত, কিন্তু তার বিস্তার এখনও অল্প। সমগ্র আলুর বাজারে তার প্রভাব সামান্যই।

সরকারি দরে আলু বিক্রি করে দাম কমানোর চেষ্টা বাম আমল থেকেই হয়ে আসছে। তাতে বিশেষ লাভ না হওয়ার জন্যই রাজ্যের সীমান্তে আলুর ট্রাক আটকানো, বা অন্য প্রদেশ থেকে এ রাজ্যে আলুর ট্রাক রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল সরকার। সংবাদে প্রকাশ, এ বছরও মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, উত্তরপ্রদেশের আলু কেন ঢুকছে রাজ্যে? এ ভাবে বাজারকে খণ্ডিত, সীমিত করে কৃষিপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। রাজনৈতিক দরদস্তুর বরং ভাল, ব্যবসার পরিকাঠামোতে আঘাত পড়ে কম। আসল প্রয়োজন চাষি ও ক্রেতা, উভয়ের স্বার্থে এমন ব্যবস্থার পত্তন করা যাতে ক্রেতাদের বড় অংশ সরাসরি কিনতে পারেন চাষির থেকে। সেই পরিকাঠামোর নির্মাণই সরকারের কর্তব্য। আলুর দাম নিয়ে দরাদরির দেখনদারি বন্ধ হোক।

Potatoes Farmers West Bengal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।