Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Adenovirus

পরিকাঠামো কই

সরকারি ব্যবস্থা ‘দর্শনধারী’ হলে রোগীর বিপন্নতা বাড়ে। প্রয়োজন যখন আইসিইউ-এর চিকিৎসা, তখন টেলিমেডিসিন প্রকল্পের সুযোগ নিতে আহ্বান করছে।

A Photograph of children admitted in hospital due to Adenovirus

সঙ্কটাপন্ন শিশুদের জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার করা হচ্ছে বি সি রায় হাসপাতালের মতো বিশেষ প্রতিষ্ঠানগুলিতে। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ ০৪:২৯
Share: Save:

ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পর পর শিশুমৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। পাঁচ হাজার শয্যা এবং ছ’শো ডাক্তার প্রস্তুত। অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা অবশ্য তেমন প্রস্তুতির সাক্ষ্য দিচ্ছে না। সংবাদে প্রকাশ, শ্বাসকষ্টে পীড়িত শিশুদের নিয়ে একাধিক হাসপাতালে ঘুরছেন অভিভাবকরা, সঙ্কটাপন্ন শিশুদের জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার করা হচ্ছে বি সি রায় হাসপাতালের মতো বিশেষ প্রতিষ্ঠানগুলিতে। ফলে কয়েকটি হাসপাতালে শিশুরোগীদের ভিড় উপচে পড়ছে, শ্বাসকষ্টে পীড়িত শিশুদের ‘পেডিয়াট্রিক আইসিইউ’-এর জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা করতে হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাণ গিয়েছে বেশ কিছু শিশুর, উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। এ অবস্থায় পাঁচ হাজার শয্যার হিসাব ভরসা জোগাতে পারে না। কেমন শয্যা, কোথায় সেই শয্যাগুলি, এই সব প্রশ্ন বড় হয়ে ওঠে। ভাইরাস-আক্রান্ত শিশুদের ফুসফুস দ্রুত কর্মক্ষমতা হারায়, তাই তাদের আপৎকালীন চিকিৎসার প্রয়োজনও দ্রুত। তার উপযোগী যন্ত্রপাতি এবং সেগুলির ব্যবহারে প্রশিক্ষিত কর্মী জেলাগুলিতে যে যথেষ্ট নেই, সে কথা ফের স্পষ্ট হল। শ্বাসকষ্টে পীড়িত শিশুদের রেফার না করে স্থানীয় স্তরে চিকিৎসা করার নির্দেশ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। অথচ, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি জুড়ে কলকাতার গুটিকতক সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে কেন ‘রেফার’ করা হল এত শিশুরোগীকে, সে উত্তর তাঁরা দেননি। জেলায় কি যন্ত্রপাতি, স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের অভাব? না কি, অভাব চিকিৎসকদের দক্ষতার, অথবা ইচ্ছার? এর উত্তর না মিললে একই ধরনের সঙ্কটে ফের একই ভোগান্তি হতে বাধ্য।

কোভিড অতিমারির মোকাবিলায় জেলার হাসপাতালগুলিতে শ্বাসকষ্টের আপৎকালীন চিকিৎসায় উন্নতি হয়েছিল, ভেন্টিলেটর প্রভৃতি জরুরি যন্ত্রপাতি সরবরাহ হয়েছিল, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও হয়েছিল। অথচ বছরখানেকের ব্যবধানে দেখা গেল, সেই উন্নত পরিকাঠামো জেলার শিশুদের কাজে লাগল না। চিকিৎসার কলকাতা-নির্ভরতা আবারও প্রকট হল। আবারও প্রশ্ন উঠল, জেলার মেডিক্যাল কলেজ, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলির ভূমিকা তা হলে কী? আপৎকালীন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার বহু আগে, আপৎকালে নয়, সে কথা ডেঙ্গির প্রকোপ বার বার দেখিয়ে দিয়েছে। কোভিড অতিমারিও তার সাক্ষী। অথচ, এ বছর শীতে ভাইরালের প্রকোপে প্রায় চল্লিশটি শিশুর প্রাণ যাওয়ার পরে রাজ্য সরকার চিকিৎসার নির্দেশিকা ঘোষণা করল। যত দিনে সে নির্দেশ সব স্তরে কার্যকর হবে, তত দিনে সংক্রমণের মরসুম অতিক্রান্ত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুরা ভাইরাসের সংক্রমণে বিপন্ন হবে, এই সতর্কবার্তা কোভিড অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দিয়ে আসছেন। সেই ঢেউ দেরিতে এল, তবু যথাযথ সহায়তার ব্যবস্থা হল না।

সরকারি ব্যবস্থা ‘দর্শনধারী’ হলে রোগীর বিপন্নতা বাড়ে। প্রয়োজন যখন আইসিইউ-এর চিকিৎসা, তখন টেলিমেডিসিন প্রকল্পের সুযোগ নিতে আহ্বান করছে। তাতে যদি বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রামে বসে মেলে, সেই নিদান অনুসারে ব্যবস্থা করার মতো প্রশিক্ষিত কর্মী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্র কি গ্রামে আছে? কেন জেলার হাসপাতালগুলির মেডিক্যাল অফিসারদের সঙ্গে কলকাতার সরকারি বিশেষজ্ঞদের কর্মশালা হচ্ছে এমন সময়ে, যখন সংক্রমণ তুঙ্গে? মুখ্যমন্ত্রী কোভিডকালের মতোই ‘কোমর্বিডিটি’-র তত্ত্বকে ফের জনসমক্ষে এনেছেন। রোগীর ঝুঁকির পরিমাপ চিকিৎসকের কাজ। প্রশাসনের কাজ চিকিৎসাব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করা। শিশুর মৃত্যু দুঃখের, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে শিশুর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব, তার মৃত্যু কেবল দুঃখেরই নয়, লজ্জার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy