Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Gender Discrimination

অধরা সাম্য

মেয়েদের উন্নতির জন্য নানাবিধ সরকারি প্রকল্প আছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ‘কন্যাশ্রী’ যেমন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫৭
Share: Save:

সাম্যের আশা সুদূরপরাহত। সাম্প্রতিক ধারা অনুযায়ী চলিলে বিশ্বব্যাপী লিঙ্গ-ব্যবধান দূর হইতে আরও ১৩৫ বৎসর সময় লাগিবে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা ইহা জানাইয়াছে। ১৫৬টি দেশ লইয়া এই সমীক্ষা চালানো হইয়াছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভারতের স্থান সেখানে ১৪০। সংবাদটি তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে, এহেন অবনমন নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্ব কালেই ঘটিল। একদা মোদী ক্ষমতায় আসিয়া ‘বেটি বচাও বেটি পড়াও’-এর স্লোগান তুলিয়াছিলেন। অথচ সমীক্ষা বলিতেছে, সেই শিক্ষা-সারণিতেই নারী-পুরুষ ব্যবধানের নিরিখে ভারতের স্থান ১১৪। লক্ষণীয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে একমাত্র পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানই ভারতের পশ্চাতে। বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপালের ন্যায় ক্ষুদ্র এবং আর্থিক ভাবে দুর্বল দেশগুলির স্থান ভারতের পূর্বে। ইহা সবিশেষ লজ্জার।

লিঙ্গ-ব্যবধান ঘুচিবার সময়সীমা দীর্ঘায়িত হইবার অন্যতম কারণ নিঃসন্দেহে অতিমারি। লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠিত হইবার জন্য যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন, অতিমারি এবং তজ্জনিত লকডাউন তাহা তছনছ করিয়াছে। যে কর্মক্ষেত্রগুলিতে মহিলারা অধিক সংখ্যায় যোগদান করিতেন, সেই ক্ষেত্রগুলি লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। ফলে, মহিলাদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি ক্রমশ সঙ্কুচিত। কিন্তু ইহা বৈশ্বিক চিত্র। ভারতের ক্ষেত্রে অবনমন শুধুমাত্র অতিমারির কারণে ঘটে নাই। পূর্বেও ভারতীয় সমাজ-অর্থনীতিতে নারীর স্থান আশাব্যঞ্জক ছিল না। অতিমারি সেই অবস্থানকে আরও খানিক নামাইয়াছে মাত্র। সাম্প্রতিক অন্য এক সমীক্ষা দেখাইয়াছে, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির মধ্যে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য ভারতেই সর্বাপেক্ষা প্রকট। ভারতে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চার জন মহিলাই মনে করিয়া থাকেন, শুধুমাত্র নারী-পরিচয়ের কারণেই তাঁহাদের বেতন, পদোন্নতি এবং কাজের সুযোগ বাধাপ্রাপ্ত হইয়াছে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই পরিবার এবং কর্মক্ষেত্র— উভয় দায়িত্ব একযোগে সামলাইতে গিয়া তাঁহারা কর্মোন্নতির সুযোগ হারাইয়াছেন।

সত্য যে, মেয়েদের উন্নতির জন্য নানাবিধ সরকারি প্রকল্প আছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ‘কন্যাশ্রী’ যেমন। কিন্তু শুধুমাত্র কিছু প্রকল্পের ভরসায় নারীসমাজের উন্নতির সার্বিক চিত্রটি অঙ্কন করা চলে না। যেমন সরকারি বাসে বিনামূল্যে যাতায়াতের সুযোগ দিলেই নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে না। সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ মেয়েদের যোগদানের উপযোগী করিয়া তোলা এবং নিরাপত্তা বিধান। প্রয়োজন, সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনেরও। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারে বলিয়াছেন, বিরোধী রাজ্যগুলিতেই নারী নির্যাতনের হার অধিক। তিনি হয়তো উত্তরপ্রদেশের কথা ভুলিয়াছেন। নারী নির্যাতনের নিরিখে দেশে প্রথম সারির রাজ্যটিতে তাঁহার দলই ক্ষমতায়। ভুলিয়াছেন কেরলের কথাও। শবরীমালা মন্দিরে সুপ্রিম কোর্টের রায় সত্ত্বেও যে নারীর প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করা গেল না, তাহার জন্য বিজেপির ঐতিহ্যের ধুয়া তুলিবার ভূমিকাও কম নহে। সুতরাং, নারী যে কেবল নির্বাচনী প্রচারের অস্ত্র নহে, লিঙ্গবৈষম্য অব্যাহত থাকিলে দেশও পিছাইয়া পড়িবে, এই সত্যটি দ্রুত অনুধাবন করা প্রয়োজন। অন্যথায় এই অবনমন থামিবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Gender Discrimination gender equality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy