ফাইল চিত্র।
বেড়াইতে হইলে নিয়মবিধি মানিতেই হইবে। শুধুমাত্র মৌখিক ঘোষণাই নহে, সম্প্রতি সেই কঠোর বিধি হাতে-কলমে প্রয়োগ করিয়া দেখাইল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমা প্রশাসন। কিছু দিন পূর্বেই ঘোষণা করা হইয়াছিল, দিঘা, মন্দারমণি-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলিতে প্রবেশ করিতে হইলে দুইটি টিকা লইবার শংসাপত্র, অথবা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাইতে হইবে। অন্যথায়, প্রবেশের অনুমতি মিলিবে না। সরকারি ঘোষণা। অতএব ফাঁক থাকিবেই ধরিয়া অত্যুৎসাহীরা দিঘার উদ্দেশে রওনা হইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহাদের অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছাইতে পারেন নাই। নিয়ম অমান্যকারী শতাধিক পর্যটককে প্রশাসন বাড়ি পাঠাইয়াছে।
পদক্ষেপটি সাধুবাদযোগ্য। কড়াকড়ির কারণে যাঁহারা পর্যটনের ক্ষতি হইবে ভাবিয়া আকুল হইতেছেন, তাঁহাদের জানা প্রয়োজন যে, বেপরোয়া পর্যটকের ভিড়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াইতে শুরু করিলে সেই ক্ষতি শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকিবে না। পর্যটক হইতে পর্যটনকর্মী, স্থানীয় মানুষ— সকলেই জীবনসঙ্কটে পড়িবেন। প্রসঙ্গত, সংক্রমণের হার কিছু নিয়ন্ত্রণে আসিবার পর রাজ্যগুলি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করিতেই উত্তর ভারতের জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলিতে যে বিধিহীন উচ্ছ্বাস দেখা গিয়াছিল, তাহাতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিলেন। বিশেষজ্ঞরাও আপাতত কিছু মাসের জন্য পর্যটনে নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুপারিশ করিয়াছেন। পর্যটন এই পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক নহে। আর্থিক কর্মকাণ্ডকে সচল রাখিতে যেটুকু আগল এই মুহূর্তে খোলা প্রয়োজন, সেইটুকুই খুলিতে হইবে। অবশ্যই পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষের জীবিকাসঙ্কট উপস্থিত, সাধারণ মানুষও তালাবন্ধ জীবনে হাঁপাইয়া উঠিয়াছেন। কিন্তু সেই অজুহাতে অর্গলহীন উচ্ছ্বাস প্রদর্শনের সময় ইহা নহে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলি বাতিল হইয়াছে, লকডাউনে কাজ হারাইয়াছেন বহু মানুষ। এমতাবস্থায় এক শ্রেণির মানুষ পর্যটনস্থলে বেপরোয়া ভিড় জমাইবেন এবং আরও অনেককে বিপন্ন করিয়া তুলিবেন, ইহা চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অসচেতনতার পরিচায়ক।
তবে, ভারতের ন্যায় দেশে পর্যটনকে এক শ্রেণির পর্যটক সর্বদাই স্বেচ্ছাচারিতার ছাড়পত্র হিসাবে দেখেন। মুক্তি তাঁহাদের নিকট নিয়ম না-মানিবার আনন্দ। যেখানে সমুদ্রে নামা বারণ, সেইখানেই স্নান করিবার প্রবল ইচ্ছা জাগে, অপূর্ব ভাস্কর্যের গাত্রে আঁচড় দিতে হয়, স্থাপত্যের দেওয়াল জুড়িয়া স্ব-নামটি লিখিতে হয়, চিড়িয়াখানার পশুপাখিকে ঢিল ছুড়িতে হয়। সম্প্রতি পর্যটনকেন্দ্রগুলির বল্গাহীন উচ্ছ্বাসও সেই অ-সভ্যতার সুদীর্ঘ ধারাটি বহন করিতেছে। পর্যটনের অর্থ যে সেই স্থানটির ঐতিহ্য, স্থানীয় মানুষজন, সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, তাহাকে রক্ষা করিবার অঙ্গীকারও বটে, কয় জন পর্যটক তাহা মানেন? অনেকেই ভাবেন, তাঁহারা অর্থ ব্যয় করিয়া ধন্য করিতেছেন, অন্য কোনও দায়িত্ব লইবার প্রয়োজন নাই। তাহা যে নহে, সেই কথাটি স্মরণ করাইয়া দিতে এইরূপ কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন। ‘পর্যটক’ না হইতে পারিলে ভ্রমণের অধিকারও থাকিবে না, এই কথাটি বুঝাইতে হইবে। অতিমারি কালেও, অন্য সময়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy