Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Law and Order

সভাসঙ্কট

বিধি তৈরি হয় দেশকাল-সাপেক্ষে, ন্যায় দেশকাল-নিরপেক্ষ ভাবে। তবে অধিকাংশ বিষয়েই আবার এই দুইয়ের পরস্পর-সন্নিহিতিই স্বাভাবিক। এতেও সন্দেহ নেই।

An image of Law and Order

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৩
Share: Save:

আইন এবং ন্যায়, সব সময়ে হাত ধরাধরি করে চলবেই, এমন বলা যায় না। বিধি ও বৈধের সঙ্গে ন্যায় ও ন্যায্যের কিছু দূরত্ব কখনও কখনও থাকতেই পারে। সরলীকরণ করে কেউ বলতে পারেন, বিধি তৈরি হয় দেশকাল-সাপেক্ষে, ন্যায় দেশকাল-নিরপেক্ষ ভাবে। তবে অধিকাংশ বিষয়েই আবার এই দুইয়ের পরস্পর-সন্নিহিতিই স্বাভাবিক। এতেও সন্দেহ নেই। ধর্মতলায় বিরোধী দলের সভা বিষয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার গতিপ্রকৃতি দেখতে দেখতে এই কথাই মনে হয়। এ ক্ষেত্রে, বিরোধী দলের ধর্মতলায় সভা করার আবেদনটি ন্যায্য তো বটেই, হাই কোর্টের রায়-মতে বৈধও বটে। একক (সিঙ্গল) বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রেখে আদালত জানিয়েছে, বিজেপির এই সভা করার অধিকার আইনত সমর্থনীয়। রাজ্য সরকার যে সেই অনুমতি দিতে অস্বীকার করছিল, তার জন্য হাই কোর্ট বেশ কড়া ভাষায় সরকারকে ভর্ৎসনা করেছে— যদিও কোনও ভর্ৎসনা-ভাষাই রাজ্য সরকারের মরমে প্রবেশ করবে কি না, ঘোর সন্দেহ।

সন্দেহ এই কারণেই যে, বিজেপি এবং সিপিএম-কে ধর্মতলার যে স্থানে সভা করতে অনুমতি দিতে সরকারের আপত্তি, তার কারণটি প্রথমত এবং শেষত রাজনৈতিক, অন্য কোনও সুবিধা-অসুবিধা ভাবনার থেকে তা উৎসারিত নয়। দুই সপ্তাহ আগে সভার আবেদন করার যে সাধারণ নির্দেশিকা, তাও এ বার মান্য হয়েছে, তবু বিতর্ক এড়ানো গেল না। বাস্তবিক, তৃণমূল কংগ্রেস দল ওই স্থানটিতেই বরাবর শহিদ দিবস পালন করে এসেছে। এবং এখন বিরোধীদের দাবির সামনে সেই অধিকারটিকে ‘ব্যতিক্রমী’ বলে দাবি করে যাচ্ছে। ব্যতিক্রমটির ভিত্তি কী, জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে। তৃণমূল-মতে নিশ্চয় ক্ষমতা-ই সেই ব্যতিক্রম হতে পারার একমাত্র হেতু? কিন্তু সেই ‘হেতু’ যে আদালতের আঙিনায় বৈধতার পরীক্ষায় পাশ করবে না, সেটাও নিশ্চয় অভাবিত নয়?

হেতুটি নিশ্চিত ভাবেই দুর্বল, সুতরাং ধরে নেওয়া যেতে পারে, কৌশল হিসাবেই এই আপত্তি। আপত্তি তুলে সময় নষ্ট করে সভা পণ্ড করার কৌশল। কিন্তু প্রশ্ন উঠবেই, কৌশল হিসাবেও কি সরকারের এই পদক্ষেপ অতিশয় দুর্বল নয়? অবশ্য সভার অনুমতি বিষয়ে তৃণমূল সরকারের বাধাদানের রোগটি পুরনো। গত দশকে বারংবার দেখা গিয়েছে এই আপত্তিদানের কুনাট্য। সপ্তাহের মাঝে ব্যস্ত রাজপথে সভা করলে মানুষে অসুবিধার যুক্তি শুনে আদালতের সঙ্গত অবস্থান— তা হলে সবার ক্ষেত্রে এই অসুবিধা মানার কথা, রাজ্যের শাসক দল যে কাজ করতে পারে, গণতান্ত্রিক রীতি বলে সে কাজ বিরোধী দলও করতে পারে। এমত পরিস্থিতিতে জল ঘোলা করে রাজ্য সরকারের মুখটিই পুড়ল, ‘কৌশল’ আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়াল। পাশাপাশি, নেতারা আশ্চর্য দর্পিত সব মন্তব্য করে জনমনে আরও বিতৃষ্ণা ঘনিয়ে তুললেন। সভা করে কী হবে, শেষ অবধি তো অমুক দলের সমর্থকরা তমুক দলকেই ভোট দেবেন— এ-হেন বাচালতা তথা বাগাড়ম্বর শাসক দলের নেতাদের তখনই মানায়, যখন তাঁদের ‘ইমেজ’টি থাকে শক্তপোক্ত। একের পর এক দুর্নীতি, অনৈতিকতা, স্পর্ধার দৃষ্টান্তে যখন সেই মুখচ্ছবি ম্লান থেকে ম্লানতর, ঘন কালিমায় লিপ্ত, সেই সময়ে এ রকম মন্তব্য তাঁদের দলীয় দুর্নামের পরিমাণটিকে আরও কয়েক দাগ বাড়িয়ে দিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Law and Order Justice Law Legal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy