E-Paper

অ-বিরাম

এই কারণে রেলের আইনেও লোকো পাইলটদের বিশ্রামের সময় নির্দিষ্ট করা আছে। দুর্ভাগ্য, রেল নিজেই তার আইন ভাঙতে সিদ্ধহস্ত।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ০৮:২৪
Share
Save

কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতীয় রেলের কর্তাব্যক্তিরা সম্ভবত শিয়ালের কুমিরছানা দেখানোর গল্পটি পড়েননি। পড়লে উপলব্ধি করতেন, তাঁদের সাম্প্রতিক কাজকর্ম সেই শিয়ালেরই মতো। যেমন, দেশের রেল পরিবহণ যখন নানা সমস্যায় ধুঁকছে, সময়ানুবর্তিতা শিকেয় উঠেছে, তখন তাঁরা দেশবাসীকে গতির চমক দিতে ব্যস্ত থেকেছেন। একই চিত্র ট্রেনচালকদের বিশ্রামের প্রসঙ্গটিতেও। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা-পরবর্তীতে অভিযোগ উঠেছে ট্রেনের চালকরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান না, লোকো পাইলটরা নিজেরাও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে তাঁদের বিশ্রামের অভাবের কথা জানিয়েছেন। অতঃপর সেই অন্ধকার ঢাকতে পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব রেল এবং মেট্রো রেল ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা তাদের চালকদের জন্য ক্রু লবি এবং রানিং রুমে কী ধরনের ‘স্বাচ্ছন্দ্য’ দেয়, তা সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতে।

সমস্যা হল, ‘তারকাখচিত’ স্বাচ্ছন্দ্যের আলোয় এত জোর নেই যে, রেলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমে থাকা অন্ধকারকে তা দূর করতে পারে। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার অব্যবহিত পরেই রেলের তরফে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল মালগাড়ি চালককে। যা শুধু অ-সত্যই নয়, অমানবিক। চালকের ত্রুটির বিষয়টি যদি মেনেও নিতে হয়, তা হলেও তার পশ্চাতের কারণটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা প্রয়োজন। জানা প্রয়োজন, কেন বিভিন্ন রিপোর্টে চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম না-পাওয়ার প্রসঙ্গটি উঠে এলেও তার কোনও বিহিত এত দিনেও করা গেল না। রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ মাধ্যম, যার উপর দেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই নির্ভরশীল, সেখানে চালকরা যদি দিনের পর দিন বরাদ্দ সময়টুকুও বিশ্রামের জন্য না পান, তবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে তিনি কি সুস্থ থাকেন? এখানে প্রশ্ন শুধুমাত্র তাঁদের সুস্থতারই নয়, যে ট্রেনগুলির নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে, তাতে সওয়ার অগণিত যাত্রীর প্রাণেরও। এই কারণে রেলের আইনেও লোকো পাইলটদের বিশ্রামের সময় নির্দিষ্ট করা আছে। দুর্ভাগ্য, রেল নিজেই তার আইন ভাঙতে সিদ্ধহস্ত। হাজার হাজার পদ শূন্য রেখে চালকদের টানা তিন দিন বা তার বেশি সময় কাজ করার পরিস্থিতি তৈরি করা, এবং দুর্ঘটনা হলে তাঁদের ‘ত্রুটি’র দিকেই আঙুল তোলার কুনাট্য ভারতীয় রেলের সঙ্গী।

পাইলট পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাননি বলে যেখানে বিদেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়, হয়রানির জন্য যাত্রীদের মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, সেখানে ভারতীয় রেলচালকরা প্রায়শই বিরূপ আবহাওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে যাত্রীদের বহন করে যান। মর্মান্তিক বইকি! এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলের বিভিন্ন শাখা প্রদত্ত চালকদের ‘স্বাচ্ছন্দ্য’-এর গল্পটি বিসদৃশ ঠেকে। বিশেষত যখন অভিযোগ ওঠে, সেই স্বাচ্ছন্দ্যের মূল্য হিসেবে চালক, সহকারী চালক ও গার্ডদের বেতন থেকে প্রতি মাসে টাকা কেটে নেওয়া হয়। এবং সে স্বাচ্ছন্দ্যও সর্বত্র সমান ভাবে মেলে না। সুতরাং, রেলের কুমিরছানা দেখানোর অভ্যাসটি সর্বাগ্রে পরিত্যাজ্য। তারা কী করেছে, তার আষাঢ়ে গল্প শোনানোর চেয়ে ঢের বেশি জরুরি কী তারা এত দিনেও করে উঠতে পারেনি, সেই অপদার্থতার হিসাব কষা। একমাত্র তবেই রেলযাত্রার বিভীষিকা থেকে রেহাই মিলতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Railways train

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।