Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Online Classes

(অ)দূরদর্শী

সরকারের তরফে অতিমারিকালে শিশুর শরীর-মন ও বিশেষত চোখের স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রচার-কর্মসূচি, স্থানীয় স্তরে চক্ষু পরীক্ষা ক্যাম্পের আয়োজন অতি জরুরি।

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪০
Share: Save:

দূরদৃষ্টি হারাইতেছে শিশুরা, আক্ষরিক অর্থেই। চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, ইহা কোভিডের ‘কোলেটার‌্যাল ড্যামেজ’, গৃহবন্দি জীবনজনিত অসুখ, ‘লাইফস্টাইল ডিজ়িজ়’-ও বলা যাইতে পারে। শিশুদের স্কুল গত বৎসরের প্রথমার্ধে সেই যে বন্ধ হইয়াছে, আর খুলে নাই। আন্তর্জাল-প্রযুক্তিতে বিদ্যালয় এখন স্মার্টফোন-ল্যাপটপ-কম্পিউটারে আবদ্ধ, দিনের অনেকটা সময় শিশুদের কাটিতেছে যন্ত্রের পর্দার দিেক তাকাইয়া। পঠনপাঠন, পরীক্ষা, সমস্তই তাহাতে। আবার পড়াশোনা শেষ হইল তো সেই মোবাইল বা ল্যাপটপেই মুখ গুঁজিয়া কার্টুন দেখা, ভিডিয়ো গেম খেলা— কোভিডের ভয়ে বাহিরে যাওয়ার, মাঠে ছুটাছুটি করিবার অনুমতি নাই যে! চিকিৎসকদের মত, দূরের জিনিস েদখিবার প্রয়োজন পড়িতেছে না, চোখ সর্বদা নিকটবস্তুতেই নিবদ্ধ, এই পরিস্থিতিতে ঘনাইতেছে ‘নিয়ারসাইটেডনেস’ বা ‘মায়োপিয়া’। আবার দীর্ঘ ক্ষণ উজ্জ্বল যন্ত্র-পর্দার দিকে তাকাইয়া থাকার জেরে বাড়িতেছে চোখ ও মাথা ব্যথা, চোখ দিয়া জল পড়া, ঝাপসা দৃষ্টি, বমি-বমি ভাবের ন্যায় গুরুতর শারীরিক সমস্যা। বড়রা তো বটেই, ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’-এর শিকার হইতেছে শিশুরাও।

রোগ আছে, তাহার ঔষধ ও চিকিৎসাও আছে, জানা। কিন্তু রোগ হইয়াছে তাহা বুঝিতে না পারা কিংবা অনেক দেরি করিয়া বুঝিতে পারার অবসরে অসুখ বাড়িয়া উঠিলে তাহা নাগালের বাহিরে চলিয়া যাইবার আশঙ্কা থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা অধিক, কারণ সব সময় সব শারীরিক অসুবিধার কথা তাহারা বলিতে বা বুঝাইতে পারে না। পূর্বে স্কুল খোলা ছিল, ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ড দেখিতে সমস্যা হইলে শিশুর হইয়া তাঁহার শিক্ষকরাই বাড়িতে জানাইয়া দিতেন, শিশুর চক্ষু পরীক্ষা করাইতে হইবে। কোভিডকালে স্কুলও নাই, দূর-দর্শনের সমস্যা ধরা পড়িতেও বিলম্ব ঘটিতেছে। সংসারের বহুবিধ কাজ, ঘর হইতে চাকুরি সামলানো লইয়া বাবা-মায়েরা এত ব্যতিব্যস্ত হইয়া থাকেন যে শিশুর আন্তর্জাল-ক্লাস ঠিকমতো হইল কি না, সে ঘড়ি ধরিয়া স্কুলের প্রজেক্ট-অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি সম্পন্ন করিল কি না, সেই দিকেই তাঁহাদের তাবৎ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হইয়া পড়ে, শিশু কখনও চোখে দেখিবার অসুবিধার কথা বলিলে মনে হয় উহা বুঝি বাহানা, হোমওয়ার্ক না করিবার শিশুসুলভ ছল। কোভিড-পূর্ব সময়ে বহু স্কুলে শিশুদের চক্ষু পরীক্ষার ক্যাম্প বসিত, উহাও এখন অতীত। অনিচ্ছাকৃত অবহেলার ফাঁকে পড়িতেছে শিশুচোখের স্বাস্থ্য।

বাবা-মা, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা সরকার, কেহই এই অবহেলার দায় অস্বীকার করিতে পারেন না। তাঁহাদের অদূরদর্শিতা শিশুর চাক্ষুষ দূরদৃষ্টিতে বাধা না হয়, দেখিতে হইবে। পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিশুর চক্ষু পরীক্ষার কথাটি নিয়ম করিয়া বাবা-মায়েদের মনে করাইয়া দিবেন, প্রয়োজনে পড়া দিবার মতো করিয়াই সেই ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র বা রিপোর্ট জমা করিতে বলিলে ভাল। সরকারের তরফে অতিমারিকালে শিশুর শরীর-মন ও বিশেষত চোখের স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রচার-কর্মসূচি, স্থানীয় স্তরে চক্ষু পরীক্ষা ক্যাম্পের আয়োজন অতি জরুরি। পুরভোট আসিতেছে, প্রার্থীরা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়া কাজে নামিতে পারেন। গৃহকোণে দীর্ঘ সময় কাটানো একটি প্রজন্মের বহির্দৃষ্টি, দূরদৃষ্টি নিশ্চিত করিতে বড়দের এই দূরদর্শিতার বিকল্প নাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Online Classes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy