Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Gender Discrimination

অশরীরী

পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র— ক্ষমতা-কাঠামোর প্রতিটি স্তরে প্রোথিত পুরুষতন্ত্র ও লিঙ্গবৈষম্যই যে ইহার জন্য দায়ী, বলিবার অপেক্ষা রাখে না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫২
Share: Save:

শরীর আছে, কিন্তু তাহার মালিকানা নাই। অধিকার নাই নিজের শরীর লইয়া সিদ্ধান্ত লইবার, সঙ্গীর সহিত যৌনতা লইয়া পছন্দ-অপছন্দের, গর্ভনিরোধক ব্যবহারের, এমনকি স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণেরও। ২০২১ সালে ইহাই বিশ্বের একাংশের নারী-চিত্র। ‘শরীরের উপর মেয়েদের অধিকার’ লইয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের পপুলেশন ফান্ড-এর (ইউএনএফপিএ) সমীক্ষা দেখাইল, বিশ্বের ৫৭টি উন্নয়নশীল দেশের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক নারীর শরীর পুরুষের শাসনে বন্দি। শরীর ও যৌনতা লইয়া তাঁহার ইচ্ছা-অনিচ্ছা মূল্যহীন, উপরন্তু ধর্ষণ, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, বলপূর্বক গর্ভপাত, যৌনাঙ্গছেদন হইতে কুমারীত্বের পরীক্ষায় কিশোরী হইতে প্রাপ্তবয়স্কা নারীর শরীরের অধিকার মুহুর্মুহু লঙ্ঘিত। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া, সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলিতে এই অধিকারভঙ্গ সর্বাপেক্ষা প্রকট, কোনও কোনও দেশে নিজ শরীরের অধিকার লইয়া মুখ খুলেন মাত্র ১০ শতাংশ নারী।

পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র— ক্ষমতা-কাঠামোর প্রতিটি স্তরে প্রোথিত পুরুষতন্ত্র ও লিঙ্গবৈষম্যই যে ইহার জন্য দায়ী, বলিবার অপেক্ষা রাখে না। এই বিভেদতন্ত্রই নারীকে ‘দুর্বল’ ও নারীশরীরকে ‘রক্ষণীয়’ বলিয়া নিদান দেয়, সেই অছিলায় নারীশরীরকে পুরুষের অধিকৃত সম্পত্তি বলিয়া বিশ্বাস ও প্রচার করে। ইউএনএফপিএ-র আধিকারিক বলিয়াছেন, শৈশবাবস্থার দোলনা হইতেই নারী লিঙ্গবৈষম্যের শিকার। বড় হইয়া উঠিবার প্রতিটি স্তরে সমাজ তাঁহার শরীর লইয়া আলোচনা-সমালোচনায় মুখর; পোশাক, প্রসাধন-সহ সার্বিক বহিরঙ্গই যেন তাঁহার চরিত্র-বিচারের মাপকাঠি। সমাজমন হইতে রাষ্ট্রব্যবস্থা সর্বত্র ছড়াইয়া পড়া এহেন লিঙ্গবৈষম্যের জলহাওয়াতেই ক্ষমতার অসাম্য বাড়িয়া উঠে, তাহাই ক্রমে নারীকে বুঝায়: তাঁহার শরীর আসলে একটা মস্ত দায়, বিড়ম্বনা— তাহা লইয়া সিদ্ধান্তের দায়ভার অন্যের, পুরুষের। বুঝায়: তাঁহার শরীরসুখ পুরুষের দ্বারা চালিত, গর্ভ ধারণ বা মোচনও পুরুষনির্দিষ্ট, শরীরযন্ত্রণা প্রায়শই ‘স্ত্রীরোগ’-এর আখ্যায় উপহসিত, চিকিৎসার জন্য ঘরের বাহিরে যাওয়া যাইবে কি না সেই সিদ্ধান্তের অধিকারও তাঁহার নিজের নহে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সমীক্ষা কিন্তু কেবল এই অসাম্যই দেখায় নাই। রাষ্ট্রের আইন ও বিচারব্যবস্থা এই অসাম্য রোধে কতটা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়, তাহাও বুঝাইয়াছে। সমীক্ষার ৫৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে কুড়িটিতে বহাল ধর্ষককে বিবাহ করিবার আইন— ধর্ষকের কঠোর শাস্তি এড়াইবার জন্য রাষ্ট্রের বাছিয়া দেওয়া পন্থা। ৪৩টি রাষ্ট্রে বৈবাহিক ধর্ষণ সংক্রান্ত কোনও আইনই নাই। ৩০টিরও বেশি রাষ্ট্র নারীর ঘরের বাহিরে ঘোরাফেরায় বাধা দিয়া থাকে। প্রায় ৩০ শতাংশ দেশে এখনও মাতৃত্বকালীন পরিচর্যার অভাব, ২৫ শতাংশ দেশে নারীর গর্ভনিরোধকের সুব্যবস্থা নাই। নারীর সাংবিধানিক সমানাধিকার প্রায় সর্বত্র স্বীকৃত, কিন্তু বাস্তবে এক জন পুরুষ যেখানে সম্পূর্ণ আইনি অধিকার ভোগ করিতেছেন, নারী সেখানে পাইতেছেন ৭৫ শতাংশ। নারীশরীরের সহমর্মী আইন প্রণয়নের সহিত রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যোগ নাই, কম্বোডিয়া, মোজ়াম্বিকের ন্যায় তথাকথিত ‘দরিদ্র’ দেশও নারী-পুরুষের যৌন জীবন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সমানাধিকার নিশ্চিত করিতে পদক্ষেপ করিয়াছে। বাকি দেশগুলিতে নারীরা নিতান্ত ‘অশরীরী’।

অন্য বিষয়গুলি:

Gender Discrimination gender equality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy