Advertisement
E-Paper

আবার আগুন

বস্তি বা ঝুপড়িগুলিতে অগ্নিকাণ্ডের সর্বগ্রাসী রূপের কারণ মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই এক। সাধারণত সেখানে একটি মাত্র ঘরেই পুরো পরিবারের বাস।

Anandapur Fire

— ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫১
Share
Save

আগুন এমন ভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, এক বস্ত্রে খালি পায়ে বেরিয়ে আসি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল”— হৃদয়-নিংড়ানো কথাগুলি বলেছিলেন আনন্দপুর থানা এলাকার বেসরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন পুড়ে যাওয়া শ্রমিকবস্তির এক বাসিন্দা। একই কথা ক্ষতিগ্রস্ত অন্য পরিবারগুলিরও। ঘণ্টাদেড়েকের আগুন সর্বস্ব গিলে খেয়েছে অন্তত ৩৮টি পরিবারের। খোলা আকাশের নীচে নেমে এসেছেন বাসিন্দারা। ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে খোঁজ চলছে যৎসামান্য গৃহস্থালির। ছাই হাতড়ে পড়ুয়ারা খুঁজে বেড়াচ্ছে বইখাতা, অ্যাডমিট কার্ড। ঠিক যেমনটি হয়ে থাকে, প্রতি বার ঝুপড়ি-বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের পর। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে যখন বহু বছরের সঞ্চিত সম্বল ছারখার হয়ে যায়, তখন এই টুকরো দৃশ্যগুলিরই সাক্ষী থাকে এ শহর। আনন্দপুর তখন মিলে যায় বাগবাজারের বস্তির সঙ্গে। সর্বস্ব হারানোয়, হাহাকারেও।

বস্তি বা ঝুপড়িগুলিতে অগ্নিকাণ্ডের সর্বগ্রাসী রূপের কারণ মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই এক। সাধারণত সেখানে একটি মাত্র ঘরেই পুরো পরিবারের বাস। শোয়ার ব্যবস্থার পাশেই চলে রান্নার কাজও। ঘর ঠাসা থাকে প্লাস্টিক-কাগজের মতো হরেক দাহ্য বস্তুতে। ঝুপড়িগুলি নির্মিতও হয় বাঁশ, কাঠ, ত্রিপল দিয়ে। ফলে সামান্য অসতর্কতায় একটি ঘরে আগুন লাগলে অল্প ক্ষণের মধ্যেই আগুন অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে ঘরগুলিতে মজুত গ্যাস-সিলিন্ডার। পর পর বিস্ফোরণে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। গত বছর সল্ট লেকের ফাল্গুনী বাজার এলাকায় এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল শতাধিক ঝুপড়ি। সেখানে একাধিক সিলিন্ডার বিস্ফোরণের তীব্রতায় পার্শ্ববর্তী আবাসনের বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বস্তি এলাকায় আগুন নেবানোর কাজটিও সহজসাধ্য নয়। সেখানে অল্প পরিসর স্থানে অনেক মানুষের বাস। ফলে, যাতায়াতের জায়গাটি অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হওয়ায় অনেক সময় দমকলের ইঞ্জিনগুলি পূর্ণ মাত্রায় কাজ করতে পারে না। আগুন আয়ত্তে আনতে বহু মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, ক্ষতির মাত্রা বাড়তে থাকে। বাসিন্দাদের জীবন কোনও ক্রমে রক্ষা পেলেও যৎসামান্য সম্পত্তি বাঁচে না। আনন্দপুরের বস্তিতেও তেমনটাই হয়েছে।

বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে প্রশাসনের চিন্তা করার সময় এসেছে। এঁরা জবরদখলকারী হতে পারেন, কিন্তু এঁদের সংখ্যাটি উপেক্ষণীয় নয়। ওই কয়েক ফুট প্রশস্ত ঘরখানির মধ্যেই শিশু থেকে বৃদ্ধ, পড়ুয়া— সকলের বাস। আগুনে সর্বস্ব নষ্ট হলে তাঁরাই বা যাবেন কোথায়? সকলেই প্রায় দিন-আনি-দিন-খাই গোত্রের মানুষ। এক অস্থায়ী ঠিকানার বদলে অন্য অস্থায়ী ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়াতেই শুধুমাত্র প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা হয় না। দমকল ইঞ্জিনের কার্যকারিতা ও তৎপরতা বাড়ানো এখনই অতীব জরুরি। ঘিঞ্জি জায়গায় প্রয়োজনে যাতে দমকল ঢোকানো যায়, সেই রাস্তা প্রশাসনের সঙ্গে পাড়ার অধিবাসীদেরও দেখতে হবে। ঘরে দাহ্য বস্তু জমিয়ে রাখার বিপদ নিয়ে সহনাগরিকদের সতর্ক করার কাজেও এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে, শপিং মল, বাজার, হাসপাতাল, আবাসন অধ্যুষিত নগরের মধ্যস্থানের ঝুপড়িগুলিতে কেন অজ্ঞাতকারণে প্রায়শ আগুন লাগে, সেই দিকে নাগরিকদেরই বেশি নজর দেওয়া দরকার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fire Slum Kolkata

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}