Advertisement
E-Paper

বিকল্প

গাড়ি ছেড়ে মানুষকে সাইকেল ব্যবহার করতে বলার আগে তার পরিকাঠামো তৈরি করে দিতে হবে বইকি। পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে এখনই সচেতন হওয়া জরুরি।

গাড়ির নিজস্ব দূষণ আছে।

গাড়ির নিজস্ব দূষণ আছে।

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২২ ০৪:৪৭
Share
Save

নিজস্ব গাড়িকে সমৃদ্ধি অর্জনের নির্ভুল অভিজ্ঞান বলে জানে প্রায় গোটা বিশ্বই। আর পাঁচ জনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে, সর্বজনীন রাস্তায় ব্যক্তিগত পরিসর তৈরি করতে পারার মধ্যে যে ক্ষমতার গন্ধ আছে, তা অনস্বীকার্য। কিন্তু, এর বিপদও একই রকম স্পষ্ট। গাড়ির নিজস্ব দূষণ তো আছেই, তার উপর রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা যত বাড়ে, ততই গতিবেগ হ্রাস পায়, যানজটের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে, দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বহু ক্ষণ ইঞ্জিন চালু রাখতে হয় গাড়ির, এবং তাতে দূষণ আরও বৃদ্ধি পায়। সমস্যাটি ক্রমেই অসহ অবস্থায় পৌঁছচ্ছে। পরিবেশ দূষণের বিপদ আর ডিসটোপিক ভবিষ্যতের গল্প নয়, তা একেবারে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। অতএব, অবিলম্বে পথ পরিবর্তন জরুরি। এই অবস্থায় একটি নীতি হতে পারে এই রকম, সরকার নিয়ম বেঁধে দেবে যে আর ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করা চলবে না। তেমন বজ্রমুষ্টির শাসন গণতন্ত্রের পক্ষে মারাত্মক— সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন, চিন বা উত্তর কোরিয়ায় তা চলতে পারে, ভারতের মতো দেশে রাষ্ট্রের হাতে তেমন ক্ষমতা কখনও কাম্য নয়। নাগরিকের সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রেখেই কী ভাবে পরিবেশের পক্ষে কম ক্ষতিকর পরিবহণ ব্যবস্থা তৈরি করা যায়, তা ভাবা প্রয়োজন।

এর এক দিকে রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রণোদনা তৈরি করা। যেমন, পেট্রল বা ডিজ়েলে চলা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের উপর চড়া কর বা পরিবেশ শুল্ক আরোপ করা যায়। অন্য দিকে, ইলেকট্রিক গাড়ির মতো কম ক্ষতিকারক বাহনের ক্ষেত্রে কর ছাড় দেওয়ার যে নীতি গৃহীত হয়েছে, তা-ও বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য পেট্রলের উপরও পরিবেশ শুল্ক চাপানো প্রয়োজন। গাড়ি চালানোর খরচ যদি বাড়ে, স্বাভাবিক ভাবেই কিছু লোক অন্তত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে বিরত থাকবেন। সেন্ট্রাল বিজ়নেস ডিস্ট্রিক্ট বা শহরের প্রাণকেন্দ্রে গাড়ির পার্কিং বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে, যাতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলেও তাকে শহরের প্রান্তে রেখে আসতে হয়। পার্কিং-এর খরচ বৃদ্ধিও ভেবে দেখার মতো একটি পথ। স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, গাড়ি ব্যবহারের সুফল বা সুবিধা মালিকের ব্যক্তিগত হলেও তার থেকে সৃষ্ট দূষণের কুফল ভোগ করতে হয় সবাইকেই। যাঁদের গাড়ি নেই, গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁদেরও। ফলে, কঠোর মনোভাব বজায় রাখাই বাঞ্ছনীয়। অপরের ক্ষতি করা কোনও অবস্থাতেই কারও অধিকার হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না।

কিন্তু, শুধু নেতিবাচক প্রণোদনা দিয়েই সমস্যাটির সমাধান সম্ভব নয়। অনেকেই উন্নত দুনিয়ার উদাহরণ টেনে সেখানে গণপরিবহণ ব্যবহারের প্রবণতার কথা বলেন। কিন্তু, সেই সব বাস-ট্রামের সঙ্গে কলকাতা বা মুম্বইয়ের বাসের চেহারার তুলনা করলেই স্পষ্ট হয় যে, যাঁদের গাড়ি চড়ার সাধ্য আছে, এখানে তাঁরা কেন গণপরিবহণ ব্যবহার করতে চান না। বাসগুলির হাল ফেরানো প্রয়োজন। বাসের সংখ্যাবৃদ্ধিও জরুরি। গত কয়েক বছরে কলকাতার রাস্তায় বাতানুকূল বাসের চল হয়েছে। প্রতিটি রুটেই তেমন বাস চালানোর কথা ভেবে দেখা যেতে পারে। শুধুমাত্র বাসের জন্য সংরক্ষিত রাস্তা থাকা প্রয়োজন, যেখানে ব্যক্তিগত গাড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ হবে। পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত সাইকেলকেও। কলকাতার বহু রাস্তায় সাইকেল নিষিদ্ধ। তার সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হাঁটা জরুরি। প্রতিটি রাস্তায় সাইকেলের জন্য সংরক্ষিত লেন থাকা প্রয়োজন। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ভাড়ায় নেওয়ার সাইকেলের স্ট্যান্ড তৈরি করা যেতে পারে। গাড়ি ছেড়ে মানুষকে সাইকেল ব্যবহার করতে বলার আগে তার পরিকাঠামো তৈরি করে দিতে হবে বইকি। পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে এখনই সচেতন হওয়া জরুরি।

Environment Pollution Vehicles Cars

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।