Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Global Warming

উষ্ণতম

উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রজলের তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। দ্রুততর হচ্ছে হিমবাহ গলনের প্রক্রিয়া। ক্রমশ বাড়ছে সমুদ্রজলের উচ্চতা। বিপদের মুখে অগণিত উপকূলবাসী।

global warming

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৬:২৩
Share: Save:

এত দিনের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত। উষ্ণায়নের গ্রাসে পৃথিবীর তলিয়ে যাওয়া এক প্রকার নিশ্চিত। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সেই মতকেই প্রবল সমর্থন জোগাচ্ছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের আবহাওয়া সংক্রান্ত রিপোর্টে যেমন স্পষ্ট হয়েছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে রেকর্ড হারে। সেই হার এতটাই বেশি যে, ২০২৩ সালটি উষ্ণায়নের পুরনো সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা গত বছরে গড়ে প্রায় ১.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে সদস্য দেশগুলি সম্মিলিত ভাবে স্থির করেছিল পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রিতে আটকে রাখার। এটাই বিপদ-মাত্রা। ফেলে আসা বছরটি দেখিয়ে দিল পৃথিবী এই বিপদ-মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে।

এমনটা যে অপ্রত্যাশিত, তা নয়। দীর্ঘ দিন ধরে একটু-একটু করে জলবায়ু পরিবর্তনের চিহ্নগুলি স্পষ্ট হয়েছে। প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনগুলি তো বটেই, অন্যান্য আন্তর্জাতিক মঞ্চেরও মূল আলোচ্য হয়ে উঠেছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকাতে সম্ভাব্য পথগুলি। জলবায়ু পরিবর্তন কোনও একটিমাত্র দেশের নিজস্ব সমস্যা নয়, সুতরাং প্রতিরোধের পথগুলিও ঐকমত্যের ভিত্তিতে একযোগে নেওয়া প্রয়োজন, এই কথাটিও বহুশ্রুত। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্য রকমই সাক্ষ্য দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতি বোঝাচ্ছে, এত দিন ধরে এত অর্থ ব্যয়ে যে আলোচনা, প্রতিশ্রুতি পর্ব চলে এসেছে, তা একটি বৃহদাকার অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে মাত্র। কার্বন নিঃসরণের মাত্রার দ্রুত হ্রাস এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্পগুলির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ উষ্ণায়ন প্রতিরোধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে বিভিন্ন সময় ধার্যও করেছে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাপেক্ষে সেই লক্ষ্যমাত্রাও ক্রমশ অধরা মনে হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এ-হেন হার অব্যাহত থাকলে ইতিমধ্যেই যে বিপুল জলবায়ুগত পরিবর্তন সাধনের আশঙ্কা, তার মোকাবিলা করার মতো পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকবে তো? তদুপরি, উন্নত দেশগুলি তাদের অর্থ এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জোরে যে দ্রুততায় কার্বন-শূন্য লক্ষ্যমাত্রার দিকে যেতে পারে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির পক্ষে তা অর্জন করা কঠিন। ভারতের মতো অনেক দেশই এখনও কয়লার উপরে অতি-নির্ভরশীল। পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উপযোগী পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তার জোগান আসবে কোথা থেকে? ‘ঐতিহাসিক দায়’ মেনে প্রথম বিশ্বেরই সেই অর্থ জোগানোর দায়িত্ব নেওয়ার কথা। কিন্তু বহু আলোচনা সত্ত্বেও কার্যকর তহবিল গঠনের প্রতি প্রথম বিশ্বের আগ্রহ এবং তৎপরতা— কোনওটিই বাড়েনি।

উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রজলের তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। দ্রুততর হচ্ছে হিমবাহ গলনের প্রক্রিয়া। ক্রমশ বাড়ছে সমুদ্রজলের উচ্চতা। বিপদের মুখে অগণিত উপকূলবাসী। বিপদ অন্যত্রও। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বৃদ্ধি পেলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আগামী দিনে বাড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট। খামখেয়ালি আবহাওয়ায় কৃষিকাজ ব্যাহত হলে আগামী দিনে খাদ্যসঙ্কট ঘনীভূত হবে। এর কোনও কথাই কিন্তু নতুন নয়। প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসের বাইরে বিশ্ব কোনও কার্যকর পথের সন্ধান দিতে পারল না, সেটা উষ্ণায়নের চেয়ে কম উদ্বেগের নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Global Warming Environment Earth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy