Advertisement
E-Paper

বাঁধ-ভাঙা বিপদ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন এবং সংলগ্ন অঞ্চল যথেষ্ট বিপন্ন। সেই বিপন্ন এলাকায় যথেচ্ছ ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করিয়া ‘উন্নয়ন’-এর কাজ চলিয়াছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২১ ০৫:১২
Share
Save

আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা সত্য প্রমাণ করিয়া ঘূর্ণিঝড় এব‌ং পূর্ণিমার কটালের যৌথ আক্রমণে তছনছ হইল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা। ক্ষতি ঝড়-বৃষ্টির কারণে যত না হইয়াছে, তদপেক্ষা অনেক বেশি হইয়াছে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে। ভাঙিয়াছে বহু নদীবাঁধ। গ্রামে জল ঢুকিয়া গ্রাস করিয়াছে মাটির বাড়ি, পুকুর, চাষের জমি। এই বিপর্যয় অপ্রত্যাশিত নহে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, সময়ের সঙ্গে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাইবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে জলস্তর বৃদ্ধি, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, তদুপরি উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলকে রক্ষা করিতে উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাব— এই ত্র্যহস্পর্শের আঘাত সামলাইয়া উঠা সহজ কথা নহে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন এবং সংলগ্ন অঞ্চল যথেষ্ট বিপন্ন। সেই বিপন্ন এলাকায় যথেচ্ছ ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করিয়া ‘উন্নয়ন’-এর কাজ চলিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণের ম্যানগ্রোভ অরণ্যই মূল ভূখণ্ডে ঝড়ের আঘাত রুখিতে পারে। মাটির বাঁধের পার্শ্বে ম্যানগ্রোভ পুঁতিলে তাহার শিকড় মাটিকে ধুইয়া যাইবার হাত হইতে রক্ষা করে। আমপান-পরবর্তীতে প্রশাসনও ম্যানগ্রোভ গড়িয়া তুলিবার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিয়া লয়। বৎসর ঘুরিয়াছে। সেই কাজ যে বিশেষ গতি পায় নাই, মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষই তাহার প্রমাণ। সমস্যা শুধুমাত্র সুন্দরবনের একার নহে। দিঘা, মন্দারমণিতেও পর্যটনের নামে পরিবেশের প্রশ্নটিকে সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দেওয়া হইয়াছে। উপকূলীয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ বিধি প্রস্তুত করিবার সময় ঘূর্ণিঝড়, কটাল এবং জোয়ার-সংক্রান্ত বিপদের কথা স্মরণ করাইয়া দিয়াছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই বিধি অনুযায়ী, সমুদ্রের জল সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় যে সীমা স্পর্শ করে, তাহারও ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ করা চলিবে না। কিন্তু বিধি উড়াইয়া মন্দারমণি, তাজপুর-সংলগ্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক বালিয়াড়ি এবং ঝাউবন ধ্বংস করিয়া একের পর এক কংক্রিটের খাঁচা নির্মিত হইয়াছে, ধ্বংস হইয়াছে বাস্তুতন্ত্র।

ত্রুটি রহিয়াছে বাঁধ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও। বাঁধ নির্মাণ এবং কিছু কালের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় বা কটালের প্রভাবে তাহা ভাঙিয়া পড়া— এই চক্রব্যূহে কোটি কোটি টাকা নষ্ট হইতেছে। সুন্দরবনের প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত নদীবাঁধ দেখাশোনা করিবার দায়িত্ব রাজ্যের সেচ দফতরের। কিন্তু সেই কাজ যে ঠিকমতো হয় নাই, মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি প্রকারান্তরে তাহা স্বীকার করিয়া তদন্তের নির্দেশ দিয়াছেন। বাস্তবিকই, নির্মাণের দুই-আড়াই বৎসরের মধ্যে বাঁধ ভাঙিলে তাহার মান লইয়া প্রশ্ন উঠিবেই। সুতরাং, যে বিপুল অর্থ বাঁধ নির্মাণ এবং সংরক্ষণের কাজে বরাদ্দ হইতেছে, তাহার একটি টাকাও যেন জলে না যায়, তাহা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এবং প্রয়োজন বাঁধ সংক্রান্ত সরকারি প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতা এবং দুর্নীতির অবসানেরও। আয়লা বাঁধ পুনর্গঠন প্রকল্পে বরাদ্দ হইয়াছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছানো যায় নাই। যে অঞ্চল বারংবার বিপর্যয়ের কবলে পড়িতেছে, সেখানে এই জটিলতার দ্রুত নিষ্পত্তি আবশ্যক। অতীত হইতে শিক্ষা লইয়া দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করিতে হইবে। প্রকৃতির রোষ হইতে মানুষকে বাঁচাইবার দীর্ঘমেয়াদি নীতি অবিলম্বে চাই।

Global Warming flood Ice Melting

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।