—প্রতীকী চিত্র।
বছরের শেষে আবার সেই প্রশ্ন উঠল: শ্রমবন্দি দশা থেকে শিশুদের মুক্তি দিতে সরকার কতটা আগ্রহী। সংসদের শ্রম বিষয়ক স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদন দেখাচ্ছে, কোভিড-উত্তর সময়ে শিশুশ্রমিকদের (পাঁচ থেকে চোদ্দো বছর) উদ্ধার ও পুনর্বাসন ব্যাহত হয়েছে শ্রম দফতর ও শিক্ষা দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে। কোভিড অতিমারি চলতে চলতেই ২০২১ সালে শিশুশ্রমিকদের বিশেষ স্কুলগুলি উঠিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। ওই স্কুলগুলি সাধারণ স্কুলের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু কী হবে সেই সংযুক্তির প্রক্রিয়া, কী ভাবে দায়িত্ব বণ্টন হবে শ্রম দফতর এবং শিক্ষা দফতরের মধ্যে, তা স্পষ্ট হয়নি। ফলে কাজের ক্ষেত্রে বহু ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। সংসদীয় কমিটির কাছে শিক্ষা দফতর যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে এমন ইঙ্গিতও মিলেছে যে, যে ভাবে এই সংযুক্তিকরণ ঘটেছে তাতে শিক্ষা দফতর সন্তুষ্ট নয়। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দু’বছর পরে দেখা যাচ্ছে, শিশুশ্রমিক স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু প্রকল্পের অধীনে পাঠরত শিশুরা সাধারণ স্কুলগুলিতে ফিরেছে কি না, সে খবর রাজ্য বা কেন্দ্র, কেউ রাখেনি। গত দু’বছরে নানা সংবাদে দেখা গিয়েছে যে, সাধারণ স্কুলেরই বহু শিশু স্কুলছুট হয়েছে, অনেকে কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যেও চলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক-স্কুলের পড়ুয়া, যারা সব অর্থেই প্রান্তিক ও বিপন্ন, তারা সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা করছে, এটা ধরে নেওয়া কত দূর সঙ্গত?
শিশুশ্রমিক প্রকল্পে স্কুল-বিচ্ছিন্ন শিশুদের বয়স-উপযোগী শ্রেণির পড়াশোনার জন্য তৈরি করা হত। পাশাপাশি, তাদের কিছু আর্থিক সহায়তাও মিলত। নয় থেকে চোদ্দো বছরের শিশুরা চাইলে পেশাদারি প্রশিক্ষণও নিতে পারত। সাধারণ স্কুলগুলিতে এই শিশুদের প্রয়োজনীয় নমনীয়তা কতটুকু, সে-ও এক প্রশ্ন। গত বছর নভেম্বরে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বিধানসভায় জানিয়েছিলেন যে, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যে তিনশোরও বেশি শিশুশ্রমিকদের স্কুল উঠে গিয়েছে। এই শিশুদের শিক্ষার অধিকার কতটুকু সুরক্ষিত রইল? বিরোধী রাজ্যগুলিও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় নিজেদের ব্যর্থতা গোপন করতে চায়। ফলে শিশুশ্রমের সমস্যার মোকাবিলার চাইতে, তাকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতাই দেখা যায় বেশি।
এর উপায়ও সহজ— খাতায়-কলমে সব শিশুর নামই বছর বছর শিক্ষা দফতরের পোর্টালে দেখিয়ে দেওয়া হয় অষ্টম শ্রেণি অবধি। এই হল ‘শিক্ষার অধিকার’-এর প্রতি দায়বদ্ধতার নমুনা। নানা সমীক্ষায় বার বার ধরা পড়ছে, বহু শিশু স্কুলছুট হচ্ছে, যারা স্কুলে রয়েছে তারাও শিক্ষার মানে বহু পিছিয়ে। এই সমস্যাগুলি বহু আলোচিত, কিন্তু সমাধানের সূত্র বার করার কোনও তাগিদ কেন্দ্র বা রাজ্যগুলির তরফে ধরা পড়ে না। বরং দেখা যাচ্ছে খরচ কমানোর তাগিদ। ২০২২-২৩ সালে জাতীয় শিশুশ্রমিক প্রকল্পে (যার ব্যয়ভার সম্পূর্ণ কেন্দ্রই বহন করত) যত খরচ হয়েছে, তা ২০১৭-১৮ সালের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। একই ভাবে, মিড-ডে মিলের বরাদ্দে কেন্দ্র নিজের বরাদ্দের অনুপাত কমিয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পেও ব্যয় কমেছে, ফলে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে কেবল নামেই। যখন শিক্ষায় আরও বেশি বিনিয়োগ করা দরকার, তখন বরাদ্দ কমছে। টাকা বাঁচছে, দেশ বাঁচবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy