E-Paper

অপরীক্ষিত

প্রতিটি শিশুর শেখার প্রক্রিয়া যেমন আলাদা, তাদের প্রকাশভঙ্গিও আলাদা। সেটি বুঝে স্কুলে তাদের অগ্রগতির খতিয়ান রাখতে হবে, এমনই প্রস্তাব করা হয়েছে।

A Photograph of  examination

লিখিত পরীক্ষাকে তৃতীয় শ্রেণি অবধি পিছিয়ে দিলে শিশুদের প্রকৃত মূল্যায়ন কি সত্যিই হবে? প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:২৪
Share
Save

পরীক্ষা, না কি ভিন্ন পথে মূল্যায়ন? ভারতে স্কুলশিক্ষার বর্তমান নীতি-নির্ধারকদের কাছে এই দুইয়ের সংঘাত বাধছে প্রতিনিয়ত, তারই প্রভাব পড়ছে নানা ঘোষণায়। সম্প্রতি স্কুলশিক্ষার জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামো (ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক বা এনসিএফ)-র প্রাথমিক খসড়ায় প্রস্তাব করা হল যে, দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের কোনও পরীক্ষা নেওয়াটা উচিত কাজ হবে না, লিখিত পরীক্ষা শুরু হোক তৃতীয় শ্রেণি থেকে। শিশুর কাছে পরীক্ষা একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, এই ধারণা ও আশঙ্কা থেকেই খসড়ায় বলা হয়েছে বনিয়াদি স্তরে অন্যতর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার কথা— শিশুর পর্যবেক্ষণ শক্তি ও স্বাভাবিক প্রবণতাগুলি দেখে তার মূল্যায়নের কথা। প্রতিটি শিশুর শেখার প্রক্রিয়া যেমন আলাদা, তাদের প্রকাশভঙ্গিও আলাদা; সেটি বুঝে স্কুলে তাদের অগ্রগতির খতিয়ান রাখতে হবে, এমনই প্রস্তাব করা হয়েছে।

বুনিয়াদি স্তরের শিক্ষা নিয়ে নীতি-নির্ধারকদের এই চিন্তা এবং উদ্বেগ স্বাগত। কিন্তু এ কথাটি তলিয়ে ভাবা দরকার— লিখিত পরীক্ষাকে তৃতীয় শ্রেণি অবধি পিছিয়ে দিলে শিশুদের প্রকৃত মূল্যায়ন কি সত্যিই হবে? পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি: কেউ বলেন, বিনা পরীক্ষায় এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে উত্তীর্ণ হলে শিশুদের লেখাপড়ায় আগ্রহ থাকে না; অন্যরা বলেন, স্কুলের মূল কাজ শিশুকে শেখানোর ক্ষেত্রে পথ দেখানো, সাহায্য করা, পরীক্ষা নেওয়া নয়— বরং পরীক্ষামুখী শিক্ষাব্যবস্থায় একটা চরম ফাঁকি এসে পড়ে, শিশুর সামগ্রিক বিকাশের খোঁজ থাকে না। এই সমস্ত তর্কের ও-পারে প্রাথমিক শিক্ষার প্রকৃত চিত্রটি মোটেই আশা জোগায় না; খবরের কাগজের সংবাদ থেকে শুরু করে নানা অসরকারি শিক্ষা-সংস্থার রিপোর্টেও প্রায়ই উঠে আসে করুণ ছবিটি। নিচু ক্লাসে পরীক্ষার বিভীষিকা না রাখা শিশুদের শেখার পথকে সহজ করতে পারে, কিন্তু তার জন্য শেখানোর কাজটিতে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। অভিযোগ যে, প্রাইমারি স্তরে বহু শিক্ষক এমনিতেই পড়ান না— আশঙ্কা হয়, বিনা পরীক্ষাতেই ছাত্ররা ক্লাসে উঠে যাবে, এমন আশ্বাস থাকলে তাঁরা সেটুকুও পড়াবেন না। ফলে, শিক্ষাব্যবস্থার গোড়াটি আরও দুর্বল হবে।

বরং দরকার শিক্ষকদের মূল্যায়ন। পরীক্ষাহীন পদ্ধতির সিঁড়ি বেয়ে তথাকথিত উঁচু ক্লাসে উঠেও যে শিশুরা সাধারণ অক্ষরজ্ঞান, বানান, গণিতের গোড়ার পাঠ শেখেনি, তাদের অপারগতার দায় তাদের নয়, তাদের শিক্ষকদের— তাঁরা ক্লাসে মন দিয়ে পড়াননি বা শেখাননি। বনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থায় শিশুদের মন ও প্রবণতা বুঝে তাদের শেখানোর কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকরা কী ভাবে শেখাচ্ছেন, আদৌ শেখাচ্ছেন কি না তার নজরদারি দূরস্থান, সামান্য খোঁজটুকুও নেই। কেউ বলতে পারেন যে, শিক্ষকেরা শিক্ষাদান ছাড়াও বহু কাজে ব্যস্ত, মিড-ডে মিলের হিসাব থেকে ‘ভোটের ডিউটি’, ‘দুয়ারে সরকার’, সবেতেই তাঁদের থাকতে হয়। কিন্তু তাতে ক্লাসে মন দিয়ে পড়ানোর মতো গোড়ার কাজটির গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা কমে না। বিদেশে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিক্ষকের মূল্যায়ন হয়, ছাত্রদের মতোই শিক্ষকদেরও ক্রমোন্নতি সেখানে আবশ্যক। এই মূল্যায়ন দরকার এখানেও। দারিদ্র, অতিমারি থেকে গ্রীষ্মের খরদহন পর্যন্ত যে দেশে পড়ুয়াদের পদে পদে পরীক্ষা নেয়, সেখানে অপরীক্ষিত শিক্ষক কাজের কথা নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

National Education Policy new syllabus Indian Education System Examinations

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।