—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দুর্গাপুজোর মতো আনন্দোৎসবের সময় পড়াশোনার কথা বলা হয়তো অরসিকের কারবার। বিশেষত যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী এ বছর কথাপ্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, পুজোর
সময় শিশুদের পড়াশোনায় চাপ দেওয়া যাবে না; এখন বাচ্চারা সময়ই পায় না, তাই লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত কোনও পড়াশোনা নয়। দুর্গাপুজো থেকে লক্ষ্মীপুজো সময়ের হিসাবে অল্প ক’দিনের, সে কারণেই হয়তো লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত ছোটদের ‘পড়াশোনার ছুটি’ উপভোগের পক্ষে এই সওয়াল। গত কয়েক বছর যাবৎ শহরের বহু বেসরকারি স্কুল লক্ষ্মীপুজোর পর খুলে যাচ্ছে, কিন্তু সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের কথা আলাদা, সেখানে পুজোর ছুটি ভ্রাতৃদ্বিতীয়া অবধি। এ রাজ্যের স্কুলশিক্ষার্থীদের এক বিরাট অংশের কাছে স্কুল খোলা থাকাটাই পড়াশোনার মুখ্য প্রণোদনা। লক্ষ্মীপুজো দেখতে দেখতেই কেটে যাবে, বাকি ছুটিতেও এই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা থেকে বিযুক্ত থাকার আশঙ্কা অমূলক নয়।
পুজোর লম্বা ছুটি শুনতে ভাল, কিন্তু ছুটির পরের কথা ভাবলে মজা মাটি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা, কারণ পরীক্ষা। সরকার লম্বা ছুটি দিয়ে খালাস, অন্য দিকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তথা স্কুলশিক্ষা দফতরের নির্দেশ: নভেম্বরেই হবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট, তা ছাড়াও আছে নিচু ক্লাস থেকে নবম শ্রেণির তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন। এ বছর গ্রীষ্মের ছুটি ছিল প্রায় দু’মাস, তদুপরি পঞ্চায়েত ভোটের সময় এবং ভোট মিটে যাওয়ার পরেও বহু স্কুলে কেন্দ্রীয় সেনা থেকে যাওয়ায় স্বাভাবিক ক্লাস হয়নি। পুজোর ছুটি পড়ার কথা ছিল পঞ্চমীর দিন থেকে, মহালয়া থেকেই শহরে বড় পুজোমণ্ডপগুলি খুলে যাওয়ায় দেখা গেল স্কুলের সামনে তারস্বরে মাইক বাজছে, হোর্ডিংয়ের জন্য ফুটপাত দিয়ে হাঁটা দুষ্কর, রাস্তায় এত গাড়ি যে, ছুটির পর ছাত্রছাত্রীদের রাস্তা পেরোনোও সমস্যা। ফলাফল: পঠনপাঠন শিকেয়, স্কুলে কার্যত পুজোর ছুটি শুরু হয়েছে আগেই। ছেলেমেয়েরা স্কুলে ফিরেই পরীক্ষায় বসবে, কিন্তু তাদের পড়াশোনা আদৌ হয়েছে কি না, শিক্ষকেরা সিলেবাস শেষ করার সময় পেয়েছেন কি না, তার খোঁজ কি সরকার রেখেছে?
এই সূত্রেই এসে পড়ে পুজোর ছুটিতে, লক্ষ্মীপুজো থেকে কালীপুজোর মধ্যে কিছু দিন স্কুল খোলা রেখে সিলেবাস শেষ করার ভাবনা— কিছু স্কুল যেমন ভেবেছে। গত বছর তা করেও দেখিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার এক স্কুলের শিক্ষকেরা। তাঁরা দেখেছিলেন, পুজোর ছুটির আগে পরীক্ষায় কিছু পড়ুয়া খুব খারাপ ফল করেছে, অনেকে পাশও করতে পারেনি। অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ মিলে লক্ষ্মীপুজোর পর দিন থেকে বিশেষ ক্লাসের সিদ্ধান্ত হয়, দেখা যায় শুধু অকৃতকার্য পড়ুয়ারাই নয়, পড়তে এসেছে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও। ব্যতিক্রমী ঘটনা, কিন্তু পড়ুয়াদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খামতি ব্যতিক্রম নয়, বিশেষত ছুটিতে ভরা এ রাজ্যের ক্যালেন্ডারে। শিক্ষা দফতরকে বুঝতে হবে, রাজ্যের বিরাট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী আসে দরিদ্র পরিবার থেকে, গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার ভাবনা তাদের কাছে বিলাসিতা, পড়াশোনার জন্য তারা স্কুলের উপরেই নির্ভরশীল। অথচ পুজোর ছুটিতে অল্প ক’দিন স্কুল খোলা রাখতে গেলেও পর্ষদের নির্দেশিকা প্রয়োজন, শিক্ষকদের পূর্ণ সহযোগও। স্কুল খুলতেই পরীক্ষার কড়াকড়ি, অথচ সিলেবাস শেষ করা বা ঠিকমতো ক্লাস হওয়া নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই, এ-হেন পরিস্থিতিতে পুজোর ছুটি বিষম বোধ হবে না কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy