—প্রতীকী চিত্র।
নজিরবিহীন উত্তাপে পুড়ছে বঙ্গ। তাপপ্রবাহের হাত থেকে শিক্ষার্থীদের রেহাই দিতে গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে এসেছে সরকার ও সরকারপোষিত স্কুলগুলিতে। বহু বেসরকারি স্কুলও আপাতত অনলাইনে পঠনপাঠনেই আস্থা রাখছে। ব্যতিক্রম কলকাতার খেলাধুলার পরিসরটি। প্রবল গ্রীষ্ম উপেক্ষা করেই ময়দান জুড়ে চলেছে ক্রিকেট আসর, প্রশিক্ষণ পর্ব। শুধু তা-ই নয়, সূর্য যখন মধ্যগগনে, যে সময়টিতে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোতে কার্যত নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা, ঠিক সেই সময়টিতেই প্রশিক্ষণ বা খেলার আয়োজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বহু খেলোয়াড়, হাসপাতালে ভর্তির ঘটনাও ঘটেছে।
অবশ্য ক্লাবের কর্মকর্তাদের তরফ থেকে এর একটি চমকপ্রদ ব্যাখ্যা মিলেছে— সাধারণ মানুষের চেয়ে খেলোয়াড়রা অনেক বেশি সমর্থ। তাঁরা গরমে খেলতেই অভ্যস্ত। অতএব, চিন্তার কারণ নেই। এই ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক বছরে গ্রীষ্মের যে চেহারা দেখা দিচ্ছে, তা বঙ্গীয় আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই নয়। কিছু বছর আগেও গরমকালে কলকাতার বৈশিষ্ট্য ছিল ঘাম-ঝরানো আবহাওয়া, যা সন্ধ্যার পর জলীয় বাষ্পপূর্ণ দখিনা বাতাসের কল্যাণে খানিক সহনশীল হয়ে উঠত। সম্ভবত বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই বর্তমানে কলকাতাতে দিনের বেলায় লু বইছে। ঘাম হচ্ছে কম, শুষ্ক আবহাওয়ায় দ্রুত শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে। সূর্যাস্তের পরেও বহুক্ষণ তীব্র উত্তাপ অনুভূত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বিরূপ আবহাওয়া থেকে উপযুক্ত সুরক্ষা প্রত্যেকেরই প্রয়োজন, সাধারণ মানুষেরও, খেলোয়াড়েরও। খোলা মাঠে ক্রিকেটের মতো খেলা বা প্রশিক্ষণ চলাকালীন বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ কম। একনাগাড়ে তাপপ্রবাহ সহ্য করে শারীরিক কসরত চালিয়ে যাওয়ার মতো ক্ষমতা ক’জন মানুষের আছে? খেলোয়াড়রা তো অতিমানব নন। তা ছাড়া ভয়াবহ অঘটন যে ঘটেনি, তেমনটাও নয়। ২০১৯ সালে উত্তর কলকাতার পাইকপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে অনুশীলন ম্যাচ চলাকালীন অসুস্থ হন বছর একুশের তরুণ। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অনেকটা একই ভাবে মৃত্যু হয় সিএবি-র দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব বালিগঞ্জ স্পোর্টিংয়ের এক ক্রিকেটারেরও। তা সত্ত্বেও ক্লাব কর্মকর্তারা যে এমন হাস্যকর যুক্তি দিতে পারছেন, সেটাই আশ্চর্যের।
ক্ষেত্র এবং পরিস্থিতিবিশেষে সময়সূচিতে পরিবর্তন এনে ম্যাচ বা প্রশিক্ষণের সময় ভোরে অথবা সূর্যাস্তের পর করা যায় কি না, ভাবতে হবে। এর জন্য কিছু অতিরিক্ত ব্যয় বা পরিকাঠামোগত পরিবর্তন করতে হলে তা করা আবশ্যক। সর্বোপরি, গরমে আইপিএল চলছে, তাই ঘরোয়া ম্যাচও চলতেই পারে— এ জাতীয় যুক্তি নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। আইপিএল-এর মতো বহু কোটি টাকার প্রতিযোগিতায় যে ধরনের পরিকাঠামো ব্যবহৃত হয়, চিকিৎসার যে সুব্যবস্থা থাকে, ঘরোয়া ম্যাচ বা প্রশিক্ষণে তা থাকে কই? উপযুক্ত সংখ্যক অ্যাম্বুল্যান্স বা মাঠে জীবনদায়ী চিকিৎসার অভাব যেখানে প্রকট, সেখানে খেলোয়াড়দের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যায় কি? এত দিন চলে এসেছে, তাই ভিন্ন পরিস্থিতিতেও তার পরিবর্তন হবে না, এ জাতীয় ভাবনা বিপজ্জনক। কর্মকর্তাদের দ্রুত তা পরিত্যাগ করা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy