E-Paper

চক্ষুশূল

বিশ্ববিদ্যালয় মাত্রই নানা রাজনৈতিক মতাদর্শের সহাবস্থানের জায়গা। বিশেষত জেএনইউ-এ দুই বিপরীত মেরুর ছাত্ররাজনীতিকে ঠাঁই দেওয়ার ঐতিহ্য, সুদীর্ঘ।

A Photograph of Jawaharlal Nehru University

এবিভিপি জেএনইউ-এ খুঁজে খুঁজে ঝঞ্ঝাট ঘটাচ্ছে বারংবার। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫৫
Share
Save

বাঙালি ঘরে একটা ভর্ৎসনা বহুলপ্রচলিত, ‘খেয়েদেয়ে আর কাজ না থাকা’— নিজের কাজটুকু সেরে অর্থহীন অনাবশ্যক কাজে কালক্ষেপণ। জেএনইউ-এ এবিভিপি-র সেই দশা, বিজেপির দেখানো পথে হিন্দুত্ব ও উগ্র জাতীয়তাবাদের তর্জনগর্জনটুকু তাদের রোজকার কাজ, তার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে খুঁজে খুঁজে ঝঞ্ঝাট তৈরি করতে বেরিয়ে পড়া। এ বার তারা চড়াও হয়েছে তামিল ছাত্রদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে, নষ্ট করেছে পেরিয়ার ও কার্ল মার্ক্সের ছবি, এক তামিল ছাত্রকে শারীরিক আঘাত করেছে, ক্যাম্পাসে অ্যাম্বুল্যান্স এলে বাধা দিয়েছে তাকেও। এবং, স্বাভাবিক ভাবেই যখন এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে বৃহত্তর পরিসরের রাজনীতি, খোদ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তীব্র প্রতিবাদ করেছেন, তখন তারা সাফাই গেয়েছে: এবিভিপি শিবাজিকে নিয়ে অনুষ্ঠান করছিল, বিরোধী ছাত্রের দল তাতে বাধা দিয়েছে, তারই বদলা পেরিয়ারের ভূলুণ্ঠন। বিংশ শতাব্দীর দ্রাবিড় আন্দোলনের নেতা পেরিয়ারের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে তারও তিন শতক আগের এক মরাঠি শাসক-যোদ্ধাকে, এই হাস্যকর মূর্খামি এবিভিপি-র পক্ষেই সম্ভব।

কিন্তু স্রেফ হাসি আর বিদ্রুপে এ ঘটনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ এবিভিপি জেএনইউ-এ এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে বারংবার। রামনবমীর দিন ক্যাম্পাসে আমিষ খাবার পরিবেশন নিয়ে হামলা, বিনা প্ররোচনায় একাধিক হস্টেলে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের ছেলেমেয়েদের উপর লাঠি-রড নিয়ে আক্রমণ, সাম্প্রতিক ঘটনাটি এই হিংসার ধারাতেই সংযোজন মাত্র। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মাত্রই নানা রাজনৈতিক মতাদর্শের সহাবস্থানের জায়গা। বিশেষত জেএনইউ-এ দুই বিপরীত মেরুর ছাত্র-রাজনীতিকে ঠাঁই দেওয়ার ঐতিহ্যটি সুদীর্ঘ। সেখানে ছাত্র সংগঠনের অফিসের দেওয়ালে মহাত্মা গান্ধী ও আম্বেডকর, জওহরলাল নেহরু ও পেরিয়ার, সকলের ছবি শোভা পায়— সেখানেই তার ছাত্র-রাজনীতির বিশিষ্টতা। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই বহু স্বরের পরিসর, বিশেষ কোনও রাজনৈতিক মতকে সেখানে বরণ বা নস্যাৎ করা হয় মতাদর্শগত বিতর্কের মধ্য দিয়ে, সেটাই রীতি, সেটাই বাঞ্ছিত— জেএনইউ সব সময় এই ঐতিহ্যকে স্বীকার করে এসেছে। ‘এক’তন্ত্রী বিজেপির কাছে এই কারণেই সে এক দুর্ভেদ্য রহস্য, এবং চক্ষুশূল। বিরোধিতা তথা অন্য মতকে শিক্ষা দিতে যে শারীরিক হিংসা ও হেনস্থা তারা গোটা দেশে নিয়ম করে তুলেছে, জেএনইউ-তেও সেই একই অস্ত্র তুলে দিয়েছে তাদের ছাত্র সংগঠনের হাতে।

এও বিজেপির এক ঐতিহ্য তৈরির কৌশল— হিংসার ঐতিহ্য। সারা দেশ জুড়ে, বিরোধী রাজ্যগুলিতে নিয়ম করে— আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র অথচ উদারবাদী রাজনীতি-চেতনার বৃত্তেও। হিংসাটা একই থাকে, শুধু লক্ষ্য এবং উপলক্ষগুলি পরিকল্পনা মাফিক পাল্টে পাল্টে যায়— কখনও সংখ্যালঘু, কখনও দলিত; কখনও খাবার, পোশাক বা চলচ্চিত্র, কখনও প্রেমদিবস। হিংসা ছড়ানোর কাজটিতে বিজেপির বড় বড় নেতা-মন্ত্রী থেকে সাধারণ সমর্থকে, কিংবা একই পথের পথিক ধর্মীয় বা তথাকথিত সমাজসেবী সংগঠনে কোনও ফারাক নেই। তাদের ছাত্র সংগঠনটিও দিন দিন এ কাজে লায়েক হয়ে উঠছে। তবু তারা ছাত্র বলেই, এবং জেএনইউ-এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেই দুঃখ হয়। সঙ্গে আশঙ্কাও— ভবিষ্যৎ ভারতের কথা ভেবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jawaharlal Nehru University ABVP Violence JNU Students BJP-ABVP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।