E-Paper

সীমান্ত-যাপন

২০১৯ সালেও চিনা সৈনিকরা মেষপালকদের তাঁদের জায়গা থেকে বিতাড়িত করতে এলে, তাঁবু খাটিয়ে নিজেদের এলাকা রক্ষা করেছিলেন তাঁরা।

India-china

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৪
Share
Save

বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী— পূর্ব লাদাখের কাকজুং অঞ্চলের চারণভূমি চিনা সৈনিকদের সামনে ভারতীয় মেষপালকদের অভাবনীয় সাহসিকতার সাক্ষী থাকল। চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র সেনা ভারতীয় মেষপালকদের পশুচারণে বাধা দিতে এসেছিল। এর বিরুদ্ধে পাল্টা রুখে দাঁড়ান তাঁরা। ফল, নিরস্ত্র মেষপালকদের প্রতাপের সামনে আপাতত থমকেছে চিনা আগ্রাসন, কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনও টানাপড়েন ছাড়াই। তবে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০১৯ সালেও চিনা সৈনিকরা মেষপালকদের তাঁদের জায়গা থেকে বিতাড়িত করতে এলে, তাঁবু খাটিয়ে নিজেদের এলাকা রক্ষা করেছিলেন তাঁরা। অর্থাৎ, বলাই যায়, ভারতীয় সেনাকে বার বার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললেও, মেষপালকদের দাপটের সামনে এখনও টিকতে পারেনি চিনা ফৌজ। তবে, বিষয়টি উদ্বেগজনকও। এটি ঘটেছে এমন এলাকায় যেখানে সেনার বেশ কিছু টহলদারি ছাউনি থাকলেও ভারতীয় সেনা ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসের পর থেকে সেখানে আর টহলদারি চালায়নি। সে বছরেই জুনের মাঝামাঝি গলওয়ান উপত্যকায় দু’-তরফের প্রাণঘাতী সংঘাতের পরে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যা আপাতত নিয়ন্ত্রণে। তৎপরবর্তী কালে সীমান্ত-বিবাদ সূত্রে দুই দেশের মধ্যে সামরিক স্তরের ২০টিরও বেশি উচ্চপদস্থ বৈঠক সম্পন্ন হলেও, অদ্যাবধি কোনও কার্যকর মীমাংসা হয়নি। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা-র (এলএসি) বিষয়ে ভিন্ন উপলব্ধির জেরে দুই দেশের সীমান্ত-অধিবাসীদের প্রায়শই সীমা লঙ্ঘন করতে দেখা যাচ্ছে। সীমান্ত-বিবাদ নিয়ে সামরিক স্তরের বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি হল, কী ভাবে দু’তরফেই সীমান্তবর্তী অধিবাসীদের তাঁদের চারণভূমি ফিরিয়ে দেওয়া যায়। তা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, সীমান্ত-বিবাদের সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে চিনের সীমান্ত বাহিনী লাদাখ এবং উত্তরাখণ্ডের বারাহুতির চারণভূমিতে ঢুকে মাঝেমধ্যেই মেষপালকদের উত্ত্যক্ত করে চলেছে।

এবং এই সীমান্ত-উত্তেজনা ভারতের সীমান্ত-অধিবাসী, বিশেষত লাদাখে বসবাসকারী যাযাবরদের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করে চলেছে। বিশেষত গলওয়ান সংঘর্ষের জেরে লাদাখের বহু চারণভূমি এখন ‘বাফার জ়োন’-এ পরিণত হওয়ায় পশুসম্পত্তি এবং পশমের উপরে নির্ভরশীল মানুষগুলির জীবনধারণ ক্রমশ হয়ে উঠছে কষ্টসাধ্য, যার জেরে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছেন সমতলের উদ্দেশে। বহু বছর ধরেই লাদাখের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে চিনা সেনার গতিবিধির খবর ভারতীয় সেনাকে দিয়ে এসেছে এই যাযাবরেরাই। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে এই অঞ্চলে তাদের সেনা ছাউনি গড়ে তুলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের পথটি সুগম করছে বেজিং। পড়শি রাষ্ট্রের জনমানবশূন্য অঞ্চলে সুযোগ বুঝে নিজেদের পরিকাঠামো গড়ে তোলা যে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রটির বিস্তারনীতির অন্তর্গত, উত্তর ভুটানের জ়াকারলুং উপত্যকার বেশ কিছু অংশে গ্রাম-সহ সেনা ছাউনি গড়ে তোলা তারই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। দুই তরফের সীমান্ত-বিবাদে অদূর ভবিষ্যতে কোনও লক্ষণীয় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভিটেছাড়া, ভিটেহারা ও উচ্ছেদভয়ে ভীত মানুষগুলির একটাই প্রশ্ন— যে জমিতে কেটেছে কয়েক পুরুষ, সেই জমি এখন কি অন্যদের, অন্য দেশেরও?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India China attack Indian Army

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।