পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের ক্ষেত্রে মিড-ডে মিলের মূল সমস্যাটি পরিকাঠামোগত। ফাইল চিত্র।
পরিদর্শন সমাপ্ত। রাজ্যে মিড-ডে মিলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সাত দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের আটটি জেলার ৩০টি বিদ্যালয় ঘুরে প্রায় ন’শো ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে দিল্লি ফিরেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। অতঃপর প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে রিপোর্ট প্রস্তুত হবে, এমনটাই জানা গিয়েছে। পরিদর্শনের এ-হেন উদ্যোগ স্বাগত, বিশেষত মিড-ডে মিলের ক্ষেত্রে, যেখানে স্কুলপড়ুয়াদের পুষ্টি এবং শারীরিক বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে আছে। কিন্তু দ্বিপ্রাহরিক আহার প্রস্তুতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকছে কি না, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তা প্রস্তুত হচ্ছে কি না-সহ মূল এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি দেখার জন্য পরিদর্শনের কাজটি নিয়মিত এবং নীরবে সম্পন্ন হওয়াই কাম্য। দীর্ঘ সময় অন্তর প্রভূত আড়ম্বর এবং প্রচার সহযোগে পরিদর্শনের কাজে নামলে প্রকৃত উদ্দেশ্যটি আদৌ সাধিত হবে কি না, সন্দেহ থেকে যায়।
সন্দেহের কারণ, কেন্দ্রীয় দল আসার সম্ভাবনায় বিভিন্ন স্কুলকে ‘তৈরি থাকার’ কথা জানানো হয়েছিল রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সেইমতো স্কুলগুলিতে রান্নাঘর এবং খাওয়ার ঘরকে পরিপাটি করে তোলার কাজ চলেছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে নিয়মিত পঠনপাঠনেও ব্যাঘাত ঘটেছে। প্রশ্ন তোলা যায়, সারা বছর তৎপরতার এই চিত্র দেখা যায় কি? খাবারের পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে পরিবেশন প্রসঙ্গে বারংবারই রন্ধনকর্মীদের মাস্ক, এপ্রন এবং গ্লাভস ব্যবহারের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এই তিনটি সামগ্রী অত্যাবশ্যক ঠিকই, কিন্তু এটাও ঠিক, সামগ্রিক ভাবে পরিচ্ছন্নতার বিষয় শুধুমাত্র এই তিনটি সামগ্রী ব্যবহারের উপর নির্ভর করে না। মনে রাখা প্রয়োজন, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের ক্ষেত্রে মিড-ডে মিলের মূল সমস্যাটি পরিকাঠামোগত। অনেক স্কুলেই মিড-ডে মিল প্রস্তুতের জন্য কোনও পাকা রান্নাঘর নেই, মাথার উপর অস্থায়ী ছাউনি দিয়ে সারা বছর রান্নার ব্যবস্থা হয়। কোথাও পাকা রান্নাঘর থাকলেও, অন্ধকার, অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে রান্নার কাজ সম্পন্ন হয়। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে গ্যাসের সংযোগ না থাকায় রান্না হয় কাঠের আগুনে। জেলার বহু প্রাথমিক স্কুলে খাবারের জন্য আলাদা কোনও ঘর চিহ্নিত করা নেই। স্কুলের বারান্দাতেই পড়ুয়াদের খেতে দেওয়া হয়। এই পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলির সমাধান আশু প্রয়োজন। সাত দিনের পরিদর্শনে সেই সমাধান সম্ভব কি?
মিড-ডে মিলের লক্ষ্য, পড়ুয়াদের স্কুলে এক বেলা রান্না করা গরম পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, যাতে তাদের পুষ্টির ঘাটতি অনেকাংশে মেটানো যায়। এই ক্ষেত্রে আপসের কোনও জায়গা নেই। সুতরাং, অবিলম্বে পরিকাঠামোগত ত্রুটির সংশোধন করতে হবে, এবং যাঁরা বছরভর সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের উৎসাহ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অত্যন্ত স্বল্প বেতনে তাঁরা নিজ দায়িত্বটি পালন করে যান। তাই আগামী দিনে তাঁদের যথাযোগ্য ভাবে সক্ষম করে তোলা প্রয়োজন, যাতে আরও মসৃণ ভাবে প্রকল্পটি অগ্রসর হতে পারে। সর্বোপরি, বিভিন্ন সমীক্ষায় স্পষ্ট, বহু শিশুর কাছে এই খাবারটুকুই দিনের প্রথম এবং প্রধান খাবার। তাই সরকারি নির্দেশিকা মেনে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে সেই খাবার যাতে শিশুর পাতে তুলে দেওয়া যায়, তার নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে সর্বাগ্রে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy