E-Paper

কেন ব্যর্থতা

দশ বছরেও কামদুনির ঘটনা বিস্মরণের পর্দার আড়ালে সরে যায়নি। নির্যাতিত মেয়েদের ন্যায় দিতে কতটা সমর্থ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, সে বিষয়ে নাগরিকের সজাগ দৃষ্টি ছিল।

An image of Kamduni Incident

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ০৪:৪৭
Share
Save

কামদুনিতে উনিশ বছরের কলেজছাত্রীর গণধর্ষণ ও হত্যা, নিম্ন আদালত যাকে বিরলতম অপরাধের শ্রেণিতে রেখেছিল, তা তুলনায় লঘু বলে বিবেচিত হল কলকাতা হাই কোর্টে। শাস্তির তীব্রতা কমেছে— ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত তিন ব্যক্তির এক জনকে বেকসুর খালাস করেছে হাই কোর্ট, বাকিদের সাজা পরিবর্তিত হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে। সেই সঙ্গে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত অপর তিন ব্যক্তি ছাড়া পেয়ে গেল, যে-হেতু হাই কোর্টের রায়ে তাদের শাস্তির মেয়াদ কমেছে। এই রায়ের বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেলেও, আদালত মুক্তিপ্রাপ্তদের ছাড়ার নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হয়নি। চার অভিযুক্তের মুক্তিলাভে আলোড়িত রাজ্য। ২০১৩ সালে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনির ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গে নারীহিংসার প্রচণ্ডতাকে প্রকট করেছিল। রাজনৈতিক প্রশ্রয়প্রাপ্ত দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তাদের উন্মত্ত অত্যাচার কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, কামদুনি তার নিদর্শন। এ রাজ্যের অগণিত মেয়ে প্রতি দিন প্রকাশ্য রাজপথে কটূক্তি, হয়রানি, দৈহিক নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেছে। কামদুনির ঘটনার নৃশংসতায় মেয়েদের সেই বিপন্নতার মাত্রা উপলব্ধি করে শিউরে উঠেছিল নাগরিক সমাজ। ওই কলেজপড়ুয়া তরুণীকে বাস স্ট্যান্ড থেকে বাড়িতে আনার জন্য যে নিয়মিত হাজির থাকতে হত ছোট ভাইকে, এই সংবাদ গোটা পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের নিরাপত্তার অভাবকে প্রকট করেছিল। সেই জন্যই একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের গ্রামের মেয়ের ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে সারা রাজ্যে নারীপুরুষ বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল।

দশ বছরেও কামদুনির ঘটনা বিস্মরণের পর্দার আড়ালে সরে যায়নি। নির্যাতিত মেয়েদের ন্যায় দিতে কতটা সমর্থ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, সে বিষয়ে নাগরিকের সজাগ দৃষ্টি ছিল। তাই হাই কোর্টের রায়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। রায়ের পর বিচারবিভাগের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেও দুশ্চিন্তার কথাটি উত্থাপন করতেই হয়— অপরাধের গুরুত্ব কেন প্রতিষ্ঠা করা গেল না? দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডে অপরাধের গুরুত্ব আদালতে স্বীকৃত হল, কঠোরতম সাজাও মিলল অভিযুক্তদের, অথচ কামদুনির ঘটনায় কেন লঘু দণ্ড? কেন এই অপরাধকে অধিক ‘গুরু’ত্বে মণ্ডিত করা গেল না?

প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে পুলিশি তদন্তের ধরন এবং আদালতে তৃণমূল সরকারের অবস্থান দেখে রাজ্যবাসী আগাগোড়াই উদ্বিগ্ন ও হতাশ। সকলেই জানেন, যে কোনও বড় অপরাধের পরবর্তী আটচল্লিশ ঘণ্টা সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য কত জরুরি। কামদুনির ঘটনায় গোড়ায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা, পরে রুষ্ট জনগণের সঙ্গে সংঘাত, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারে বিলম্ব থেকেই বোঝা গিয়েছিল প্রশাসনের কাজকর্মের ধারা। তেমনই পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে আঘাতের তীব্রতা সংক্রান্ত তথ্যের সঙ্গে সংবাদে প্রকাশিত ছবি ও তথ্যের গরমিলের অভিযোগও তুলেছিলেন আইনজীবীরা। রাজ্য সরকার মামলাটি বারাসত থানা থেকে রাজারহাট থানায় সরিয়েছিল, বিচার সরেছিল বারাসত আদালত থেকে নগর দায়রা আদালতে, ষোলো বার বদল হয়েছে রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি। সর্বোপরি, নিহত মেয়েটির আত্মীয়দের সরকারের তরফে চাকরি ও ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের গ্রাম থেকে সরিয়ে দেওয়া, প্রতিবাদী মঞ্চের বিপরীতে তৃণমূলের উদ্যোগে ‘শান্তিরক্ষা কমিটি’ গঠন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিচারের দাবি করলে কামদুনির মেয়েদের তাঁর ‘মাওবাদী’ বলে অভিহিত করা— এগুলিও শাসক দলের রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। স্বভাবতই সমস্ত আশা ন্যস্ত হয়েছিল বিচারবিভাগের উপর। কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতির রায় বলছে, কামদুনির ঘটনায় অভিযুক্তরা পূর্বে ষড়যন্ত্র করে অপরাধ ঘটিয়েছিল, তা প্রমাণে সরকার ব্যর্থ। কেন এই ব্যর্থতা, সেই প্রশ্ন উঠবেই। রাজ্যের আইন-শাসন নিয়ে উদ্বেগকে তীব্র ও গভীর করে দিয়ে গেল কামদুনি মামলার রায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kamduni Case kamduni Sexual Harassment Calcutta High Court Supreme Court of India

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।