Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Behala Road Accident

মর্মান্তিক

রাজ্যে সামগ্রিক ভাবেই পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক ক্ষেত্রেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে কাজ চালানো হয়।

behala.

বেহালায় দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশ এবং ব়্যাফ। —নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৩ ০৫:০৮
Share: Save:

কলকাতার ট্র্যাফিকের অবস্থা এখন এমনই যে, বড় কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলে তার ছেঁড়া-ফাটা অংশগুলিকে মেরামত করার প্রয়োজনই বোধ করে না পুলিশ-প্রশাসন। সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবার রোডে লরিতে পিষ্ট হয়ে আট বছরের শিশুর মৃত্যু ফের সেই ছবিটি স্পষ্ট করে দিল। এমন মর্মান্তিক ঘটনার পর গার্ড রেল, মুভেবল স্টপ গেট বসিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু মূল সমস্যাটির মীমাংসা হয়েছে কি? কাজের দিনে ব্যস্ত সময়ে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা মসৃণ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশকর্মীর প্রয়োজন। অথচ, অভাব প্রকট সেখানেই। দুর্ঘটনাস্থল-সহ ১১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় যেখানে সব মিলিয়ে পুলিশকর্মী থাকার কথা ২০০-র বেশি, সেখানে সেই সংখ্যা ১০০-র কাছাকাছি। ডায়মন্ড হারবার রোডের মতো অতি ব্যস্ত এবং ঘিঞ্জি এলাকায় এই অভাবের পরিণতি যে কী হতে পারে, সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটি তার প্রমাণ।

প্রশ্ন হল, ট্র্যাফিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িত, সেখানে এই অবস্থা দিনের পর দিন চলছে কী করে? প্রসঙ্গত, রাজ্যে সামগ্রিক ভাবেই পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক ক্ষেত্রেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে কাজ চালানো হয়। কিছু মাস পূর্বে কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছিল, পুলিশে নিয়োগ না করে এ ভাবে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা হলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। সুতরাং, পুলিশে নিয়োগ নিয়ে আরও উদ্যোগী হোক রাজ্য সরকার। এর পরেও অবশ্য পরিস্থিতি শোধরানোর ইঙ্গিত নেই। বরং সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা এবং জনবিক্ষোভের পর ডায়মন্ড হারবার রোডের জন্য শহরের সব থানা ও ট্র্যাফিক গার্ড থেকে এক-দু’জন করে সিভিক ভলান্টিয়ার ও কনস্টেবল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই সমাধান যে চিরস্থায়ী হতে পারে না, এ কথা পুলিশের বড়কর্তারাও জানেন। কলকাতার অন্য রাস্তাগুলিতেও ট্র্যাফিকের চাপ যথেষ্ট। সেখান থেকে পুলিশকর্মী এনে পরিস্থিতি শোধরানোর চেষ্টা আঁজলায় জল এনে আগুন নেবানোর চেষ্টার সমতুল। উত্তেজনা থিতিয়ে পড়লেই অনিয়ন্ত্রিত যানজট, বেপরোয়া গতি এবং সে সব সামলানোর জন্য পুলিশকর্মীর দেখা না পাওয়ার অভ্যস্ত রুটিনে ফিরবে শহর। পুলিশের বড়কর্তারা কি সেই অপেক্ষাতেই আছেন?

অভাব শুধু সংখ্যার নয়, একান্ত অভাব পুলিশ-প্রশাসনের বোধেরও। সেই বোধ থাকলে শুধুমাত্র বেসরকারি স্কুলের সামনের রাস্তায় পুলিশের মোতায়েন থাকার অভিযোগটি উঠত না। তা ছাড়া কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তাগুলিতে ফুটপাত দখল করে থাকে অস্থায়ী দোকান, রাস্তায় নামতে বাধ্য হন মানুষ। অথচ, হকারদের জন্য ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশের বেশি জায়গা বরাদ্দ হওয়ার কথা নয়। বাস্তবে তার পালন হয় কতটুকু? পুলিশ দেখেও নিশ্চুপ, নিশ্চেষ্ট থাকে। ফলে যে কোনও সময় অন্যত্রও এ-হেন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই প্রসঙ্গে প্রায়শই মেয়র ফিরহাদ হাকিম সাধারণ মানুষের সচেতনতাবোধকে দায়ী করেন। তাতে বিন্দুমাত্র ভুল নেই। কিন্তু মানুষ কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে তো আর পুলিশ-প্রশাসন হাত গুটিয়ে থাকতে পারে না। আপাতত যাবতীয় তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু ডায়মন্ড হারবার রোড। কিন্তু অন্যত্র যে অ-সুরক্ষিত পথের ছবিটি একই থেকে গেল? সেটি পাল্টাতে আর কত প্রাণ বলি দিতে হবে?

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata police Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy