—প্রতীকী ছবি।
এ বার উত্তপ্ত লোহিত সাগর— ইয়েমেনে সক্রিয় শিয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি-দের হামলার জেরে। এ-হেন আগ্রাসন শুরু হয়েছে গত অক্টোবরে হামাসের ইজ়রায়েলে জঙ্গি হানার পরে, যখন তারা হামাসকে সমর্থন করে হুমকি দেয় যে, ইজ়রায়েলগামী যে কোনও জাহাজকেই আক্রমণ করবে তারা। এর পর হুথিরা লোহিত সাগরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত বাব-অল-মন্দেব প্রণালী দিয়ে ভ্রমণরত বহু দেশের বাণিজ্যিক জাহাজের উপরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে আসছে। সেই তালিকায় রয়েছে ভারতও। অভিযোগ, যে সব জাহাজ ইজ়রায়েলমুখী নয়, তাদেরও হুথি আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। হুথিরা বর্তমানে লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল-সহ উত্তর ইয়েমেনের অনেকখানি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু তা-ই নয়, পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্রটি প্রায় এক দশক ধরে যে গৃহযুদ্ধ-সঙ্কটে নিমজ্জিত, তাতে এদের ভূমিকা বিরাট। ইরানের মদতপুষ্ট ইজ়রায়েল এবং পশ্চিমবিরোধী আঞ্চলিক জঙ্গি গোষ্ঠীর জোট ‘অ্যাক্সিস অব রেজ়িস্ট্যান্স’-এর অংশ হল হুথি-রা। সাম্প্রতিক কালে গাজ়ার হামাস এবং লেবাননের হিজ়বুল্লার পাশাপাশি এরাও ইজ়রায়েলের উপরে হামলা চালিয়েছে। হুথিদের এই আক্রমণে স্পষ্ট, হামাসের বিরুদ্ধে ইজ়রায়েলের যে যুদ্ধ, তার বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা ভুল নয়।
লোহিত সাগর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলগুলির সঙ্কটময় পরিস্থিতির জেরে সাময়িক ভাবে বিপর্যস্ত বিশ্ববাণিজ্যও। লোহিত সাগরই সুয়েজ় খালের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরকে ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। মনে করা যেতে পারে, ১৮৬৯ সালে খালটি চালু হওয়ার আগে বাণিজ্যিক জাহাজগুলিকে ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে যাতায়াত করতে হত দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ পেরিয়ে। সুয়েজ় খাল নির্মিত হওয়ায় সেই দূরত্ব অনেকখানি কমে যায়, এবং অর্থ ও সময়— দুইয়েরই সাশ্রয় হয় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির। বর্তমানে মোট বিশ্ববাণিজ্যের প্রায় বারো শতাংশ বার্ষিক স্তরে আদানপ্রদান হয় এই খালের মাধ্যমে। গোটা বিশ্বে মোট যত কন্টেনার জলপথে চলাচল করে, তারও ত্রিশ শতাংশ পার হয় সুয়েজ় দিয়েই। হামলার কারণে বহু প্রথম সারির বাণিজ্যিক জাহাজ অন্য জলপথ, বিশেষত পুরনো উত্তমাশা অন্তরীপের পথ ধরতে বাধ্য হচ্ছে। ঘুরপথে যাত্রার কারণে পরিবহণ খরচ তথা জাহাজের বিমার খরচ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আশঙ্কা, এ-হেন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তার প্রভাব তেল তথা বিভিন্ন পণ্যের উপরে পড়তে বাধ্য। অতিমারির ধাক্কার পরে বিশ্ববাণিজ্যে নতুন সঙ্কটটি স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বহু দেশের কাছেই। হুথিদের হামলা প্রশমিত করতে আমেরিকা সম্প্রতি ব্রিটেন, বাহরাইন, কানাডা, ফ্রান্স, নরওয়ে ও আরও কয়েকটি দেশকে নিয়ে এই অঞ্চলে একটি নতুন আন্তর্জাতিক নৌ-গোষ্ঠী ‘অপারেশন প্রসপেরিটি গার্ডেন’ গঠনের ঘোষণা করেছে। তার সমস্যাও রয়েছে বহুবিধ। ইয়েমেন আরব রাষ্ট্র হওয়ায়, অন্য আরব দেশগুলি তাকে আক্রমণ করতে চাইবে না। এই যুদ্ধে যুক্ত হয়ে নিজেকে ইজ়রায়েলের সমর্থক হিসেবে প্রতিপন্ন করতে নারাজ বেশ কিছু দেশ। তা ছাড়া, ইরানকে কেন্দ্র করে আরও বৃহত্তর আঞ্চলিক বিবাদ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে আগ্রহী অন্যেরা। বৎসরান্তের এই হুথি আক্রমণের আঁচ নতুন বছরে ভূ-রাজনীতিতে কত দূর প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy