Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Deforestation

অনাচ্ছাদিত

মনে রাখা প্রয়োজন, বৃক্ষ-আচ্ছাদন হ্রাস সর্বদা অরণ্যচ্ছেদনকে বোঝায় না। অরণ্যচ্ছেদনের যাবতীয় দায়ই মানুষের। মানুষই তার চাহিদাপূরণের স্বার্থে প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট অরণ্যকে পাকাপাকি বিনষ্ট করে।

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৮:১১
Share: Save:

সবুজ আচ্ছাদন ক্রমশ হারাচ্ছে ভারত। পরিমাণটি উদ্বেগজনক। ‘গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ’, যারা বিশ্বের অরণ্যসম্পদের উপর নজরদারির কাজটি করে থাকে, তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে ২০২০ সাল থেকে এই পর্যন্ত ভারতে ২৩ লক্ষ হেক্টরেরও অধিক বৃক্ষ-আচ্ছাদন খোয়া গিয়েছে। রিপোর্টে এ-ও ধরা পড়েছে— ২০০১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যে আচ্ছাদন হ্রাস পেয়েছে, তার ষাট শতাংশই দেখা গিয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বের পাঁচটি রাজ্যে— অসম, মিজ়োরাম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড এবং মণিপুর। এর মধ্যে শুধুমাত্র অসমেই কমেছে তিন লক্ষ চব্বিশ হাজার হেক্টর। এই তথ্য-পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি জাতীয় সবুজ আদালত নোটিস ধরিয়েছে ভারত সরকারকে। বলা হয়েছে, ভারতে এই পরিমাণ বৃক্ষ-আচ্ছাদন হ্রাস বাস্তবে অরণ্য সংরক্ষণ আইন, ১৯৮০; বায়ুদূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৮১; এবং পরিবেশের সুরক্ষা বিষয়ক আইন, ১৯৮৬— প্রতিটিকে লঙ্ঘন করে। অর্থাৎ, ভারতের পরিবেশ রক্ষার্থে যে সমস্ত আইন এ পর্যন্ত রচিত হয়েছে, সরকার হয় নিজেই তা ভাঙছে, নয়তো আইন অমান্য দেখেও চুপ থাকছে।

মনে রাখা প্রয়োজন, বৃক্ষ-আচ্ছাদন হ্রাস সর্বদা অরণ্যচ্ছেদনকে বোঝায় না। অরণ্যচ্ছেদনের যাবতীয় দায়ই মানুষের। মানুষই তার চাহিদাপূরণের স্বার্থে প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট অরণ্যকে পাকাপাকি বিনষ্ট করে। বৃক্ষ-আচ্ছাদন হ্রাসের পশ্চাতে মনুষ্যসৃষ্ট কারণের পাশাপাশি দাবানল, ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক কারণও সমান ভাবে দায়ী। সেই ক্ষতি স্থায়ী-অস্থায়ী উভয়ই হতে পারে। কিন্তু এই পার্থক্যের কথা স্মরণে রাখলেও যে কঠোর বাস্তবটি স্পষ্ট হয়, তা হল— বৃক্ষ-আচ্ছাদন হ্রাসের চরম প্রভাব শেষ পর্যন্ত মানবসমাজের দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপরেই আঘাত হানে। উল্লেখ্য, অরণ্য কার্বন-শোষক এবং কার্বনের উৎস— উভয় ভূমিকাই পালন করে থাকে। অরণ্য যদি অবিকৃত থাকে, অথবা গড়ে ওঠার পর্যায়ে থাকে, তখন সে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে সরিয়ে বাতাস নির্মল করে। এর ঠিক বিপরীত চিত্রটি দেখা যায় অরণ্যের মানের অবনমন ঘটলে অথবা তা ধ্বংস হলে, বাতাসে কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে। যার পরিণতি— জলবায়ু পরিবর্তন এবং তজ্জনিত কারণে পরিবেশে নানা বিরূপ প্রভাবের সৃষ্টি। অর্থাৎ, অরণ্যচ্ছেদন এবং অরণ্য-আচ্ছাদন হ্রাসের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও পরিণতির দিক থেকে দু’টিই মানবসমাজের উপর আঘাত হানতে সক্ষম।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই সরকারের ভূমিকাটি গুরুত্বপূর্ণ। এর আগেও একাধিক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা ভারতে দ্রুত অরণ্য-আচ্ছাদন হ্রাসের তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিল। অতঃপর তা রোধ করতে সরকারের পদক্ষেপগুলি কী, তা বিশদে জানা প্রয়োজন। কিন্তু শুধুমাত্র উন্নয়নের ধুয়ো তোলা ছাড়া এ বিষয়ে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের সঠিক দিশা পাওয়া যায় না। বরং, নির্বিচারে গাছ কাটা অব্যাহত গোটা দেশ জুড়ে। অসমে ইতিপূর্বে ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর নির্মাণের জন্য দেড় লক্ষ গাছ কাটা হয়েছিল। আশ্চর্য নয়, বৃক্ষ-আচ্ছাদন হ্রাসে অসম সর্বোচ্চ স্থানটি পেয়েছে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি পৃথিবীর অন্যতম জীববৈচিত্রপূর্ণ অঞ্চল। এই সমস্ত অঞ্চলে সবুজ আচ্ছাদন সরে যাওয়ার অর্থ সেই বৈচিত্রের বিপুল ক্ষতি। প্রশ্ন হল, ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণটি সরকার আদৌ বুঝবে কি?

অন্য বিষয়গুলি:

deforestation Tree cutting case Global Warming Climate Change
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy