E-Paper

অসাম্যের শীর্ষে

একটি কথা খেয়াল করা প্রয়োজন— শীর্ষ এক শতাংশের হাতে দেশের মোট আয়ের যত শতাংশ রয়েছে, মোট সম্পদের উপর তাদের অধিকারের অনুপাত তার চেয়েও বেশি।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১২
Share
Save

ঔপনিবেশিক আমলের চেয়েও ভারতে আর্থিক অসাম্যের পরিমাণ বেশি, সম্প্রতি এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন অসাম্য-গবেষণায় বিশ্বখ্যাত পণ্ডিত টমাস পিকেটি-সহ প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্স-এর ওয়ার্ল্ড ইনিক্যুয়ালিটি ল্যাব-এর গবেষকরা। তাঁরা একশো বছরের পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণা করেছেন। দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে ১৯৮০-র দশকের প্রথমার্ধ অবধি ভারতে আর্থিক অসাম্য কমছিল, তার পর তা ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়। ২০০০ সালের পর থেকে অসাম্য বৃদ্ধির হার বাড়তে থাকে, এবং নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে তা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছয়। অন্যান্য পর্বের চেয়ে মোদী-পর্বের বৈশিষ্ট্য হল, এই আমলে আয় ও সম্পদের শীর্ষ এক শতাংশের অন্তর্ভুক্ত মানুষের আয় ও সম্পদের পরিমাণ অন্য সব আমলের চেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ভারতের মোট আয়ের ২২.৬% এবং মোট সম্পদের ৪০.১% পুঞ্জীভূত শীর্ষ এক শতাংশ ধনীর হাতে। পেরু, ইয়েমেনের মতো কিছু ছোট দেশ বাদে এমন বিপুল আর্থিক অসাম্য আর কোথাও নেই। এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর স্বভাবতই সরকারপন্থী অর্থনীতিবিদরা তাকে ভুল প্রমাণ করতে মরিয়া হয়েছেন। তাঁদের দু’টি কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক। এক, ওয়ার্ল্ড ইনিক্যুয়ালিটি ল্যাবের রিপোর্টই তো প্রথম নয়, যেখানে ভারতের এই সুতীব্র আর্থিক বৈষম্যের কথা বলা হল— এর আগে অক্সফ্যাম-এর রিপোর্ট সে কথা বলেছে; দারিদ্র ও অসাম্য নিয়ে কর্মরত অর্থনীতিবিদরা বলেছেন। তার সবই ভুল, কেবলমাত্র ‘বিকশিত ভারত’-এর নির্বাচনী ভাষণ সত্য, এমন কথা বিশ্বাস করতে হলে প্রবল ভক্তি প্রয়োজন। এবং দ্বিতীয় কথা হল, দারিদ্র বা অসাম্য নিয়ে গবেষণার রাস্তা তো বর্তমান সরকারই বন্ধ করে দিয়েছে। কোনও পরিসংখ্যান পাওয়াই দুষ্কর। ফলে, ভারত বিষয়ে যে কোনও মন্তব্যের সঙ্গেই অর্থশাস্ত্রীরা এখন পরিসংখ্যানের অভাব ও তার নিম্ন গুণগত মানের কথা উল্লেখ করেন। পিকেটিরাও করেছেন।

একটি কথা খেয়াল করা প্রয়োজন— শীর্ষ এক শতাংশের হাতে দেশের মোট আয়ের যত শতাংশ রয়েছে, মোট সম্পদের উপর তাদের অধিকারের অনুপাত তার চেয়েও বেশি। রিপোর্ট জানাচ্ছে, শীর্ষ এক শতাংশের মধ্যেও সম্পদের বণ্টন সুষম নয়— সেই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর একটি ক্ষুদ্রতর অংশের হাতে সম্পদের সিংহভাগ পুঞ্জীভূত। সম্পদ চরিত্রগত ভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হস্তান্তরিত হয়। এবং, কোনও এক প্রজন্মের সারা জীবনের আর্থিক কক্ষপথ কী হবে, তা বহুলাংশে নির্ধারিত হয় পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের দ্বারা। অর্থাৎ, এই অসাম্য রুখতে উদ্যোগী না হলে তা নিজের জোরেই ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। একটি নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে বেশি সম্পদের অধিকারীদের উপরে বিত্ত কর এবং উত্তরাধিকার কর আরোপ করা হলে সম্পদজনিত অসাম্য কিছুটা হলেও কমবে।

এই রিপোর্টে অর্থনীতিবিদরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভারতের করব্যবস্থা পশ্চাৎমুখী, অর্থাৎ দরিদ্র মানুষের উপরে আয়ের অনুপাতে করের বোঝা অধিকতর। তাঁরা সুপারিশ করেছেন, অতিধনীদের উপরে একটি বিশেষ আয়কর আরোপ করা হোক। অতিধনীদের থেকে বিত্তকর, উত্তরাধিকার কর বা অতিরিক্ত আয়কর বাবদ যে রাজস্ব আদায় করা হবে, সে টাকার ন্যায্য পুনর্বণ্টন প্রয়োজন। কিন্তু, মনে রাখা প্রয়োজন যে, শীর্ষ ধনীদের বাদ দিলে দেশের অধিকাংশ মানুষই উপার্জন করেন শ্রমের বাজার থেকে, পুঁজি বা জমির মালিকানা বাবদ প্রাপ্ত লভ্যাংশ বা খাজনা থেকে নয়। ফলে, অসাম্য দূর করতে হলে শ্রমের বাজারের দিকে নজর দিতেই হবে। বেকারত্ব কমার বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান পেশ করে দায়িত্ব সারলে চলবে না, কর্মসংস্থানের গুণগত মান যাতে উন্নত হয়, নজর দিতে হবে সে দিকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Economy British Period India Inequality

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।