—প্রতীকী চিত্র।
মন্দ যে সে সিংহাসনে চড়ে। হীরক রাজার দেশে ছবিতে চারণের মুখে গান যে ভারতেরও বাস্তবচিত্র, সম্প্রতি প্রমাণিত হল একেবারে তথ্য-নথির প্রমাণ সহকারে। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) ও ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ (এনইডব্লিউ), দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনের হাল-হকিকত নিয়ে কাজ করা দুই সংস্থা লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে ৭৬৩ জন সাংসদের নথি নিয়ে বসেছিল, তা থেকেই বেরিয়ে এল পরিসংখ্যান: ৪০ শতাংশ তথা ৩০৬ জন সাংসদের বিরুদ্ধেই রয়েছে ফৌজদারি মামলা। ১৯৪ জন তথা ২৫ শতাংশের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়েছে— জামিন-অযোগ্য নানা অপরাধ, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নারীনিগ্রহ, দুর্নীতি, তালিকা দীর্ঘ। ১১ জনের গায়ে সেঁটে আছে খুনের মামলা, ৩২ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ; ধর্ষণের মামলায় ৪ জন এবং নারীদের বিরুদ্ধে অন্য নানা অপরাধের মামলা ঝুলছে ২১ জন সাংসদের মাথায়।
নির্বাচিত ও মনোনীত জনপ্রতিনিধিরাই যখন অপরাধী বা অভিযুক্ত, তখন দেশের গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে গর্ব করার কিছু থাকে কি? মনে রাখা দরকার, উপরের তথ্যগুলি কোনও সমীক্ষা বা অন্য জটিল প্রক্রিয়ায় বার করে আনা নয়, সাংসদদের যে হলফনামা পেশ করতে হয় সেখান থেকেই পাওয়া, অর্থাৎ সাংসদদের স্বঘোষিত। একই সাংসদের বিরুদ্ধে অনেকগুলি, ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় আনা অভিযোগ রয়েছে: যিনি দুর্নীতিতে জড়িয়ে তিনিই আবার যুক্ত বা অভিযুক্ত অপহরণে; তেলঙ্গানার এক বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে রয়েছে মোট ৫৫টি গুরুতর অপরাধের মামলা! আবার শাসক-বিরোধী দলে তফাত নেই, নারীনিগ্রহের মতো নানা অপরাধে মামলা হয়েছে এমন সাংসদদের মধ্যে রয়েছে বিজেপি কংগ্রেস ওয়াইএসআর-কংগ্রেস টিআরএস শিবসেনা সব দলেরই প্রতিনিধি। রাজ্য অনুযায়ী দেখলে নজরে পড়বে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত পাঁচ বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে রয়েছে নারী সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ।
তথ্য থেকে সত্যটি উঠে আসে, নিহিত শিক্ষাটি তাতে বলা থাকে না। সে কথাটিই স্পষ্ট বলা দরকার। ভোটে দাঁড়ানোর আগে প্রার্থীরা হলফনামায় যে অপরাধের অভিযোগ বা মামলার তথ্য দিচ্ছেন, তা সাধারণ মানুষের অজানা নয়। তা সত্ত্বেও মানুষ যে এঁদের ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাচ্ছেন তাঁদেরই প্রতিভূ ও নিয়ন্তা হিসাবে, এর মধ্যে এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা থেকে যাচ্ছে— দেখেও না দেখার, বুঝেও না বোঝার। জনসমর্থনে ভর দিয়ে ক্ষমতায় আসা সাংসদরা ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছেন অনায়াসে, সেই স্পর্ধাতেই নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন, এ খুব অত্যুক্তি কি? ভারতীয় আদালতগুলিতে বিচারের দীর্ঘ সময় ও প্রক্রিয়া, ‘রায়দানের আগে পর্যন্ত অভিযুক্ত অপরাধী নয়’ এই মনোভাবও আখেরে বাঁচিয়ে দিচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের। তাঁরা এও জানেন, মামলা বা অপরাধের অভিযোগ থাকলেও প্রার্থীদের ভোটে দাঁড়ানো ঠেকাতে যত দিন না এ দেশে সুনির্দিষ্ট ও কড়া আইন হচ্ছে, তত দিন তাঁরা মুক্তকচ্ছ। এই সব কারণেই রাজনৈতিক দলগুলিও তথাকথিত অপরাধীদের ভোটে দাঁড় করাতে বা জয়লাভ নিশ্চিত করতে পিছপা হয় না। এই ‘গুণাকর’রাই যে সংসদে গিয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে চূড়ান্ত লজ্জাকর পরিসংখ্যানের জন্ম দেবেন, আশ্চর্য কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy