শৈশব চায় সুরক্ষাও। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
শৈশব এক নিশ্চিন্ত আশ্রয় চায়, চায় সুরক্ষাও। কিন্তু নানাবিধ কারণে যারা সেই স্বস্তির জায়গাটুকু থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাদের উপযুক্ত আশ্রয় জোগানোর দায়িত্ব কি সরকার এবং সমাজ, উভয়েরই নয়? এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিশুপালন সংস্থা এবং ছোটদের হোমে প্রায় চার হাজার শিশু আশ্রয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। গত বছর আনুষ্ঠানিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সূচনা করেছিল ‘ফস্টার কেয়ার’ বা পালক পরিচর্যা প্রকল্পের। এ-যাবৎ তিনটি শিশু এই প্রকল্পের মাধ্যমে পালক অভিভাবকদের পেয়েছে। আরও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ করতে চান প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা। এই প্রকল্পে এক দিকে ঘরহীন, অভিভাবকহীন শিশুরা গৃহপরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। অন্য দিকে, সন্তানহীন বা সন্তান দূরে থাকে— এমন অভিভাবকরাও সন্তানসুখ পাবেন। অর্থাৎ, দু’তরফের অভাববোধকে এক সুতোয় বুনে এক ইতিবাচক, সুস্থ যাপনের দিশা দেখায় এই প্রকল্প।
দত্তক নেওয়ার সঙ্গে পালক পরিচর্যার বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। প্রধান পার্থক্য, পালক পরিচর্যা সাময়িক বন্দোবস্ত, আইনসঙ্গত দত্তক গ্রহণের মতো স্থায়ী নয়। মূলত সেই সব শিশুর কথা ভেবেই পালক পরিচর্যার প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে, যারা দত্তক গ্রহণের উপযুক্ত বলে ঘোষিত হওয়ার দু’বছর পরেও অভিভাবক খুঁজে পায়নি। অনেক ক্ষেত্রে কোনও শিশুর মা-বাবা দু’জনেই জেলে গেলে এবং তাদের দায়িত্বগ্রহণে পরিবারের কেউ অগ্রসর না হলেও তারা মা-বাবার অনুমতিসাপেক্ষে পালক পরিচর্যার জন্য বিবেচিত হতে পারে। অন্য দিকে, আনুষ্ঠানিক ভাবে দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে যেখানে কয়েক বছর লাগে, সেখানে পালক পরিচর্যার ক্ষেত্রে মাত্র দু’মাসের মধ্যেই শিশুকে কাছে পাওয়া যায়। দত্তক নেওয়ার মতো অভিভাবকদের সম্মিলিত বয়সসীমাও এই ক্ষেত্রে বিচার্য হয় না। যদি দু’বছর সফল ভাবে পরিচর্যার পর শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য অভিভাবকরা আবেদন জানান, তবেই তাঁদের বয়স বিচার্য হয়।
কয়েক দশক আগেও কোনও শিশু অভিভাবকহীন হলে, অথবা মা-বাবা শিশুর দায়িত্বগ্রহণে অপারগ হলে বর্ধিত পরিবার এগিয়ে আসত শিশুর দায়িত্বগ্রহণে। কিন্তু পরিবর্তিত আর্থসামাজিক পরিস্থিতি এবং অণু পরিবারের জন্ম ‘ফস্টার কেয়ার’-এর প্রয়োজনীয়তা অনেক গুণ বৃদ্ধি করেছে। সর্বোপরি, এই স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রকল্পের মধ্য দিয়ে মানবিক সম্পর্কগুলি আরও দৃঢ় হওয়ার আশা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নজরদারি আবশ্যক। পরিচর্যার নামে শিশুশ্রমের ব্যবহার বা বঞ্চনা— দুই-ই অপরাধ। সে অপরাধের সম্ভাবনা গোড়াতেই বিনাশ করা ভাল। সুতরাং, অভিভাবক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং স্বচ্ছতা জরুরি। পালক পরিচর্যায় থাকাকালীন যাতে শিশুর দেখাশোনার কাজটি যথাযথ হয়, সে বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে, এবং এই কাজে যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করতে হবে। সর্বোপরি, সমগ্র প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু ভাবে কাজ করছে কি না, প্রাথমিক পর্যায়ে তার পর্যালোচনাও একান্ত প্রয়োজন। ভারতের মতো দেশে আইন সত্ত্বেও শিশুশ্রম বা শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ করা যায়নি। মানবিক কাজের বর্মের আড়ালে যাতে সেই কুকর্মগুলি ফের মাথা-চাড়া দিতে না পারে, তা দেখা জরুরি বইকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy