Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Hospitals

অধিক ওষুধে

ভারতে এখনও এই ধরনের মারাত্মক সংক্রমণ নির্ণয়ের কোনও উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। যদিও এই সমস্যা শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের।

hospital.

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৩ ০৬:১০
Share: Save:

তৃতীয় স্থানে ভারত। কোনও উন্নয়নের নিরিখে নয়, ‘হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড অ্যান্টিবায়োটিক রেসিসট্যান্ট ইনফেকশন’ (সংক্ষেপে ‘হারি’)-এর সাপেক্ষে। ৯৯টি দেশে পরিচালিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভারতে প্রতি বছর প্রায় নব্বই লক্ষ মানুষ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকাকালীন নানান ব্যাক্টিরিয়াজনিত সংক্রমণের শিকার হন। তথ্যটি উদ্বেগজনক। প্রসঙ্গত, এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক জীবাণুগুলিকে সুপারবাগ বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথম সারির অ্যান্টিবায়োটিক কোনও কাজ করে না। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সারি কিংবা সর্বোচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হয়, যেগুলি শুধু দামিই নয়, অনেক সময় মানবশরীরের পক্ষে রীতিমতো ক্ষতিকারক। এ দেশে উচ্চতর সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোম এই ধরনের সংক্রমণের আঁতুড়ঘর। আরও উদ্বেগের যে, ভারতে এখনও এই ধরনের মারাত্মক সংক্রমণ নির্ণয়ের কোনও উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। যদিও এই সমস্যা শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের।

হাসপাতালে বিবিধ ভাবে এমন সংক্রমণ ছড়াতে পারে। রোগীকে ক্যাথিটার লাগানোর ফলে, ওষুধ প্রয়োগের জন্য শরীরে নল ঢোকানোর কারণে, অস্ত্রোপচারের পরে কিংবা ভেন্টিলেশনে রাখলে এই সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসা সরঞ্জামগুলির জীবাণুমুক্তিকরণে ত্রুটি, আবার কোনও সময়ে রোগীর চাপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নতিস্বীকারের ফলে রোখা যায় না সংক্রমণ। তবে সমস্যা শুধুমাত্র হাসপাতালেরই নয়, গাফিলতি রয়েছে জনসাধারণের তরফেও। গত বছরের সেপ্টেম্বরেই ল্যানসেট-এর এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, ভারতীয়দের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রবণতা অত্যধিক। অতিমারি পর্বে যা আরও ঊর্ধ্বগামী হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া বা অকারণ ও অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে শরীরে উপস্থিত ব্যাক্টিরিয়া ওই ওষুধের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। এর ফলে, আগামী দিনে এই ধরনের ‘সুপারবাগ’-গুলির সঙ্গে লড়াই করার মতো প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাবে না বলেও আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সমস্যা হল, অ্যান্টিবায়োটিকের উপরে রাশ টানার বিষয়টি এ দেশে নতুন নয়। কিন্তু বিনা প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা ইন্ধন জুগিয়েছে এই প্রবণতায়। আজও এক শ্রেণির চিকিৎসক অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের উপরেই ভরসা করেন।

আগামী দিনে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হবে এ দেশের জনস্বাস্থ্য। ফলে, সতর্ক হতে হবে চিকিৎসক, জনগণ— উভয়কেই। অসুস্থ হলে নিজের চিকিৎসা নিজেই করার নির্বুদ্ধিতা না দেখিয়ে, রোগীকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, অসুখ সারানোর দায়িত্ব চিকিৎসকের। একই সঙ্গে সংক্রমণ রোধে হাসপাতালগুলিকে জানতে হবে কী ধরনের জীবাণু সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, কত জন রোগী তাতে আক্রান্ত হয়েছেন, কী ভাবে নিরাময় সম্ভব। নিয়মিত এই ধরনের সংক্রমণের হার বা মৃত্যুর তথ্য জনসমক্ষে আনতে হবে। সচেতনতাই বাঁচার পথ।

অন্য বিষয়গুলি:

Hospitals India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy