Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

পরিযায়ী ভোট

একটি বিষম সঙ্কট তৈরি হয়ে উঠছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে। তাঁরা ভোট দিতে নিজ নিজ রাজ্যমুখী। এঁরা ভোটের দিন ভোট দিতেই যান না, মিটিং মিছিল সমাবেশেও অনেককে যোগ দিতে বাধ্য করা হয় পরোক্ষ ভাবে।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ০৮:১২
Share: Save:

এখনও প্রায় চার সপ্তাহ বাকি জাতীয় নির্বাচন শেষ হতে, এ দিকে একটি বিষম সঙ্কট তৈরি হয়ে উঠছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে। তাঁরা ভোট দিতে নিজ নিজ রাজ্যমুখী। এখন কেবল এঁরা ভোটের দিন ভোট দিতেই যান না, মিটিং মিছিল সমাবেশেও অনেককে যোগ দিতে বাধ্য করা হয় পরোক্ষ ভাবে। রাজনৈতিক নেতানেত্রীরাও বিশেষ চাপ দেন এঁদের উপর। এই যেমন, ভোট দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরার আহ্বান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট না দিলে ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা যেতে পারে, ফলে এনআরসি কার্যকর হলে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিও থাকবে, এমনই যুক্তি দিয়েছেন তিনি, তাঁর নির্বাচনী প্রচারে। পরিযায়ী শ্রমিকের যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা উচিত, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। প্রশ্ন এই যে, তাঁদের সেই অধিকার প্রয়োগের দায় তাঁদেরই উপর কেন চাপানো হবে? কেন এত বছরের মধ্যেও রাষ্ট্র তাঁদের কর্মস্থলে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করে উঠতে পারল না? গত বছরের গোড়ায় নির্বাচন কমিশন ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে ‘রিমোট ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন’ নিয়ে আলোচনার সময় চায়, এ বিষয়ে দলগুলির মতামত চায়। সে আলোচনা কিছুমাত্র এগোয়নি, বরং মার্চে কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে জানায় যে দেশের ভিতরের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘রিমোট ভোটিং’ অর্থাৎ নিজের কেন্দ্র থেকে দূরের কোনও কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার কোনও প্রস্তাব বিবেচিত হচ্ছে না। লক্ষণীয়, বিদেশে বাসরত ভারতীয় নাগরিক, বা ‘এনআরআই’ নাগরিকরা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নথিভুক্ত হয়ে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু ভারতের ভিতরে বাসরত পরিযায়ী শ্রমিকরা সে অধিকার এখনও পাননি। তাঁদের সংখ্যাটা কম নয়। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে তাঁদের সংখ্যা ছিল সাড়ে চার কোটি। বর্তমানে এই সংখ্যাটা অন্তত সাড়ে ছ’কোটি বলে মনে করা হয়, পরিবারের সদস্য নিয়ে এই সংখ্যাটা দশ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আন্দাজ করেন বিশেষজ্ঞরা।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে অন্তত ত্রিশ কোটি মানুষ ভোট দেননি। তাঁদের সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক নন, কিন্তু উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার, যে দু’টি রাজ্য থেকে সর্বাধিক পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে যান, সেই রাজ্য দু’টিতে গড় ভোটদানের হার জাতীয় গড়ের চাইতে (সাতষট্টি শতাংশ) বেশ কিছুটা কম। পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশেরও কম ভোট দিতে পারেন। তার কারণটা বোঝা কঠিন নয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ আসেন প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চল, এবং অতি-দরিদ্র পরিবার থেকে। তাঁরা যে ধরনের কাজ করেন, সেখানে দৈনিক মজুরি মেলে। অতএব অনুপস্থিত থাকলে রোজগার কমে। তার উপরে যোগ হয় যাতায়াতের খরচ। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ব্যয়ভার চাপানো হয় দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষদের উপর। সরকার সে দায় বহন করতে রাজি নয়।

সংখ্যার বিচারে পরিযায়ীদের ভোট যে জরুরি, তা দলগুলি বোঝে— গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে জলপাইগুড়ির একটি বন্ধ চা-বাগানের প্রায় দেড় হাজার শ্রমিককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা, যে-হেতু ওই শ্রমিকদের ঘরে ফেরার আর্থিক ক্ষমতা ছিল না। রাজ্য সরকারের তরফে ভিন রাজ্যের উপযোগী স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রদান কার্যত তৃণমূলের প্রতি পরিযায়ীদের সমর্থন পাওয়ারই কৌশল। কিন্তু আদতে প্রশ্নটি অধিকারের। প্রতিটি নাগরিক যাতে ভোট দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করার কথা রাষ্ট্রের। পোস্টাল ব্যালট, রিমোট ইভিএম, অথবা যে কোনও প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিযায়ীদের ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা হোক। পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটদানে অপারগতা বস্তুত তাঁদের সুরক্ষা ও কল্যাণের প্রতি রাজনৈতিক উদাসীনতার অন্যতম কারণ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy